ফেরত যাচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার ৮৫৬০ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪

ফেরত যাচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার ৮৫৬০ কোটি টাকা

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খাতে উন্নয়ন প্রকল্প

 

ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: চলতি অর্থবছর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার উন্নয়নে ৬৫ প্রকল্পে ১৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও অর্ধেকের বেশি অর্থ ফেরত যাচ্ছে। এ বিভাগের প্রকল্প বাস্তবায়নে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে মাত্র ১১.৬৪ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। খরচ হয়েছে মাত্র এক হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। কাজের অগ্রগতি তুলনামূলকভাবে বেশ কম হওয়ায় আট হাজার ৫৬০ কোটি টাকা বছর শেষ হওয়ার আগেই বরাদ্দ থেকে কেটে নেওয়া হচ্ছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

সরকার এ খাতে প্রতিবছর বড় ধরনের বরাদ্দ দিলেও তা খরচ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বড় অংশের টাকা ফেরত যায়। গত অর্থবছরে এই খাতে ১৩ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও খরচ হয়েছে মাত্র পাঁচ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। বাকি আট হাজার ৭২০ কোটি টাকা ফেরত গেছে।

 

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৬৫ প্রকল্পে পাঁচ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তাদের মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ১৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। বরাদ্দ কমছে আট হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। এ খাতে সরকারের অর্থায়ন ছিল ১৩ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ ছিল ৩৫০ কোটি টাকা। দেশীয় অংশে আট হাজার ৫৭০ কোটি টাকা কমলেও বৈদেশিক অংশে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ছে। চলতি অর্থবছরে চলমান ৬৫ প্রকল্পের মধ্যে আটটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। তাদের এডিপিতে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এ খাতে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে এক হাজার ২১৮ কোটি টাকা।

 

কমছে এক হাজার ২৮১ কোটি টাকা। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ১৪ প্রকল্পে এডিপিতে চার হাজার ১৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত এডিপিতে ১৬ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে এক হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। এ খাতে কমছে দুই হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা।

 

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ৩১ প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে তিন হাজার ৪২২ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে ৩৬ প্রকল্পে বরাদ্দ থাকছে দুই হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ স্কাউটসের তিন প্রকল্পে ৪১ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। যা কমে ২৪ কোটি টাকা হচ্ছে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) দুই প্রকল্পে ৪০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। এখানে ১০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ বেড়ে হচ্ছে ৫০৯ কোটি টাকা। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খাতে ৮৯৩ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। যা খরচ করতে পারছে না বিভাগটি। এ কারণে টাকাটা ফেরত যাচ্ছে।

 

এ বিভাগের প্রকল্প বিশ্লেষণে দেখা যায়, বেশির ভাগ প্রকল্পই পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে চলছে। কোনো কোনো প্রকল্প ১০ বছর ধরে চলছে। নানা জটিলতায় নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয় না প্রকল্পগুলো। এতে সরকারের দেওয়া বরাদ্দও খরচ হয় না।

 

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে নির্বাচিত বেসরকারি কলেজগুলোর উন্নয়ন প্রকল্পটির মেয়াদ ১১ বছর পেরিয়েছে। প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৮০ শতাংশের মতো। চলতি বছরে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কাজ এগোচ্ছে না। চলতি অর্থবছরে এ প্রকল্পে ৪৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা খরচ করতে পারছে না। ফেরত যাচ্ছে ২৭৬ কোটি টাকা।

 

সূত্র জানায়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের খুলনার পাইকগাছা কৃষি কলেজ স্থাপন প্রকল্প ২০১৪ সাল থেকে চলছে। ১০১ কোটি টাকার প্রকল্পটির মাত্র অর্ধেক কাজ হয়েছে। সদর দপ্তর ও জেলা কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর শক্তিশালীকরণে ৩৮৩ কোটি টাকার প্রকল্পও চলছে ১০ বছর ধরে। অথচ প্রকল্পটির এখনো অর্ধেক কাজই হয়নি।

 

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিমনের বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ উন্নয়ন, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প চলছে ৯-১০ বছর ধরে। অথচ প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি মাত্র ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ। এই প্রকল্পগুলো শেষ হতে আরো কত সময় লাগবে তারও কোনো ঠিক নেই।

 

এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, একটা বিষয় হচ্ছে প্রকল্পে কেনাকাটায় অনিয়মের কারণে দেরি হয়। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, এ খাতে প্রকল্প বাস্তবায়নে যোগ্য লোক নেই। এ খাতে প্রকল্প দক্ষ জনবল বা উপযুক্ত প্রকৌশলী দরকার।

 

এ বিষয়ে উন্নয়ন প্রকল্প মনিটরিং ও যাচাইয়ের দায়িত্বে থাকা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, শিক্ষার প্রকল্প বাস্তবায়ন কম থাকে, এটা ঠিক। অর্থছাড় কম হওয়ার কারণেও প্রকল্প শেষ হতে দেরি হচ্ছে।

 

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ