প্রকাশিত: ১:৩৬ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৪
শাবিপ্রবি প্রতিনিধি :: সিলেটের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাহেদ আহমদের মৃত্যুর অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের রেজিট্রেশন বাতিল ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী সমিতির নেতৃবৃন্দ।
এই দাবিতে সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে একটি প্রতিবাদী মিছিল বের করেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। মিছিলঠি মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের সামনে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
মিছিলে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ‘জাগো রে জাগো, শাবিপ্রবি জাগো’, ‘বন্ধ কর, বন্ধ কর, কসাই খানা বন্ধ কর’, ‘মাউন্ট এডোরা কসাইখানা, বন্ধ হোক আজাব খানা’ ইত্যাদি স্লোগানে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মিছিল পরবর্তী শাবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অশোক বর্মণ অসীমের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আহমদ মাহবুব ফেরদৌসী, সদস্য তাজিম উদ্দিন প্রমুখ।
সাহেদ আহমদ এর মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে আহমদ মাহবুব ফেরদৌসী বলেন, সাহেদের মৃত্যুর জন্য আমরা ডা. খালেদ মাহমুদ ও ডা. শাহ কামালকে এককভাবে দোষারোপ করতে চাই। এতে জড়িত মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের এমডি ডা. আখতারুজ্জামানের প্রতি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, ডা. খালেদ মাহমুদ ও ডা. শাহ কামাল যখন সাহেদের অপারেশন করেছিল (আমরা বলবো ছুরি চালিয়েছিল) তখন ডা. শোভন নামের একজন চিকিৎসক সাহেদের এনেসথেসিয়া করেছিল। এই এনেসথেসিয়ার কারণেই সাহেদের প্যানক্রিয়াটাইটিস লিক হয়ে যায়।
তিনি বলেন, সাহেদের সাইনাসের অপারেশন করে যখন ওটি থেকে বের করা হয় তখন দেখা যায় তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের প্রশ্ন হলো, সামান্য সাইনাসের অপারেশন করতে গিয়ে সাহেদের চোখ কেন নষ্ট হবে? একই সময়ে একই ওটিতে তার আরেকটি অপারেশন কেন হবে? আমরা মনে করি, ডা. শাহ কামাল, ডা. খালেদ মাহমুদ ও এমডি ডা. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি হত্যাযজ্ঞ হয়েছে। এসময় এই হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রতি আহ্বাব জানান তিনি। একইসাথে ডা. শাহ কামাল, ডা. খালেদ মাহমুদ, ডা. শোভন ও ডা. আখতারুজ্জামানের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের দাবি জানান।
মাউন্ট এডোরা কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণ উল্লেখ করে কলেজ পরিদর্শক তাজিম উদ্দিন বলেন, চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার কারণে সাহেদ গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু কোলে ঢলে পড়েন। এরআগে গত বছর আমাদের আরেক সহকর্মী নুরজাহান ফাতেমা এই হাসপাতালের ভুল চিকিৎসার জন্য মৃত্যুবরণ করেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মাউন্ট এডোরা হাসপাতাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে ভুলভাবে প্রচার করে সিলেটের মানুষের সাথে প্রতারণা করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে বাহিরে পাচার করছে। এটা অচিরেই বন্ধ হওয়া জরুরী।
তিনি আরো বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল সাহেদের চিকিৎসা খরচ বহন করবে। তবে সাইনাসের অপারেশন করতে গিয়ে সাহেদের চোখ নষ্ট হয়েছে এটাও তারা স্বীকার করেছে। কিন্তু তারা সাহেদের চিকিৎসার খরচ বহন না করে কালক্ষেপন করেছে, যার ফলে তার মৃত্যু সুনিশ্চিত হয়ে যায়।
মানববন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মস্তাবুর রহমান ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো মাহবুবুল হাকিম কর্মকর্তাদের এ দাবির সাথে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন। তারা বলেন, সাহেদের মৃত্যুতে আমরা গভীর শোকাহত। ভুল চিকিৎসায় সাহেদের মৃত্যু হয়েছে বলে জেনেছি। অতিদ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে মাউন্ট এডোরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ৩০ নভেম্বর সাহেদ নাকের অপারেশন ও অন্ডকোষে একটি ছোট সিস্ট অপারেশন করার জন্য ভর্তি হন। ১ ডিসেম্বর তার সার্জারি হয়। পরবর্তীতে তিনি অগ্নাশয়ে প্রদাহ রোগে আক্রান্ত হোন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর হোন। এ বিষয়ে হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অডিট কমিটি তদন্ত করেন। তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী সাহেদ আহমেদের শারীরিক জটিলতার সাথে সার্জারীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। সাহেদ আহমেদের শারীরিক জটিলতার সাথে সার্জারীর কোনো সম্পর্ক নেই বলে শাবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনকে অবহিত করা হয়। মাউন্ট এডোরা হাসপাতাল কোনোভাবে সাহেদের মৃত্যুর সাথে সংশ্লিষ্ট নয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ডিসেম্বরে সিলেটের আখালিয়ার মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান সাহেদ আহমদ। সেখানে নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহ কামাল কর্তৃক সাহেদের নাকে এন্ডোসকপিক সাইনাস অপারেশন করানো হয়। এর আগে একই দিন সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. খালেদ মাহমুদ সাহেদকে সিস্টের অপারেশন করেন। অপারেশনের পরদিন পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করলে তাকে আলট্রাসনো ও স্লিপেস টেস্ট করানো হয়। পরে হাসপাতালের এমডি অধ্যাপক ডা. আক্তারুজ্জামান সাহেদের প্যানক্রিয়াটাইটিস লিক হয়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেন।
তবে একই সময় সাইনাস ও সিস্টের অপারেশনের ফলে সাহেদের একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়, প্যানক্রিয়াটাইটিস লিক হয়ে যায় এবং অগ্নাশয়ের জটিল সমস্যায় পড়েন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে সাহেদের চিকিৎসা মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের আয়ত্বের বাইরে চলে গেলে গত ৬ ডিসেম্বর তাকে ঢাকার পিজি হাসপাতালে স্থানান্তর করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালে তার চিকিৎসা দেওয়া হলেও গত ১৩ ফেব্রুয়ারী মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech