সিলটি ভাষাকে বাংলাদেশের ২য় রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার দাবি

প্রকাশিত: ১০:২৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৪

সিলটি ভাষাকে বাংলাদেশের ২য় রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার দাবি
ছবি: সংগৃহীত

সিলেট বিভাগবাসীর মাতৃভাষা সিলটি ভাষাকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার দাবি জানিয়েছে রাজনৈতিক সংগঠন সিলটি পাঞ্চায়িত।

 

সিলটি পাঞ্চায়িত কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমদ চৌধুরী গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান।

 

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি মাস ভাষা আন্দোলনের মাস। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ দিবসকে সামনে রেখে সিলটি ভাষাকে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় ভাষা ঘোষণা অপরিহার্য। সিলেট বিভাগের প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষসহ বিশ্বের অসংখ্য মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। বাংলা ভাষার পরে সিলটি ভাষা বাংলাদেশের একমাত্র ভাষা, যার অক্ষর বা বর্ণমালা আছে, যা সিলটি নাগরী লিপি নামে পরিচিত। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, যা বাংলা ভাষা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। এ ভাষায় অনেক শক্তিশালী সাহিত্য, কবিতা ও পুঁথি রচিত হয়েছে। অনেকে পিএইচডি করেছেন। সিলটি ভাষাকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ইতোমধ্যে সিলটি পাঞ্চায়িত সিলেটের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মানববন্ধন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।

 

তিনি আরও বলেন, সিলটি নাগরী অক্ষরজ্ঞান আজ অবহেলিত। সিলটি নাগরী অক্ষর চর্চা হয় না বললেই চলে। সিলটি ভাষা তথা সিলটি নাগরী অক্ষর চর্চার জন্য সিলেট বিভাগের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ শিক্ষা চালুর জোর দাবি জানাচ্ছি।

 

আমেরিকার ২য় রাষ্ট্রভাষা স্পেনিস, কানাডায় ফ্রেঞ্চ, ইউকেতে গেইলেক ভাষা চালু আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে সিলটি ভাষা বিশ্বের ৯৭তম ভাষা। তাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মাসে সিলটি ভাষাকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করা হোক।

 

উল্লেখ্য, যেকোনো দেশের ভাষার যেমন নিজস্ব বর্ণমালা আছে ঠিক তেমনি সিলেটি ভাষারও আছে নিজস্ব বর্ণমালা। এই বর্ণমালার নাম নাগরি। মূলত সিলেটি ভাষার লিপি বা অক্ষর হল নাগরি। একসময় বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছিল নাগরি বর্ণমালা। কয়েকশ বছর আগে নাগরি লিপিতে রচিত হয়েছে শত শত সাহিত্য, গ্রন্থ, দলিল। তখন মানুষজন চিঠিপত্রও লিখতেন নাগরি বর্ণমালায়।

 

নাগরি লিপির উদ্ভব নিয়ে গবেষকদের মধ্যে বেশ মতপার্থক্য রয়েছে। নাগরি গবেষকদের এক পক্ষের মতে চতুর্দশ শতকে ৩৬০ সফরসঙ্গী নিয়ে সিলেটে আসেন হজরত শাহজালাল (রহ.)। তখন তার সফরসঙ্গীদের মাধ্যমে সিলেটে নাগরি লিপির প্রচলন ঘটে। তখন সিলেট অঞ্চলের মানুষজন লেখাপড়া, সাহিত্যচর্চায় বেশি উদ্বুদ্ধ হন। আরেকপক্ষ মনে করেন ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকে এ অঞ্চলে আফগান উপনিবেশের সময় নাগরি লিপির উৎপত্তি হয়। আবার আরেকটি পক্ষ মনে করেন, ব্রিটিশ শাসনের শুরুর দিকে এ লিপির উদ্ভব। তবে উদ্ভব নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও বেশির ভাগ গবেষকই মনে করেন, হজরত শাহজালাল ও তার সফরসঙ্গীদের মাধ্যমে সিলেটে নাগরি লিপির প্রচলন ঘটে। তৎকালীন ইসলামি নানা কাহিনী, সুফিবাদ ও ফকিরি গান নাগরিলিপিতে পুঁথি রূপে বের করা হয়।

 

নাগরি লিপির অবিচ্ছেদ্য অংশ হল হজরত মোহাম্মদের (সা.) জীবনীভিত্তিক কোনও গ্রন্থ ‘কেতাব হালতুননবী’। কথিত আছে তখনকার সময় সিলেটিদের ঘরে ঘরে পবিত্র কোরআন শরিফের পর ‘কেতাব হালতুননবী’ গ্রন্থকে শ্রদ্ধা করা হতো। ১৮৬০ সালে কেতাব হালতুননবী গ্রন্থ আকারে প্রকাশ হয়। নাগরি সাহিত্যের জনপ্রিয় সাহিত্যিক মুন্সী ছাদেক আলী এই গ্রন্থটি রচনা করেন। তাই মুন্সী ছাদেক আলী, সিলেটি ভাষা ও সিলেটি সাহিত্যের প্রাণপুরুষ বলা হয়।

 

নাগরি লিপির বিশাল সাহিত্য ভাণ্ডার রয়েছে। নাগরি সিলেটিদের অস্তিত্ব তাই নাগরি সম্পর্কে সকলকে জানাতে সিলেট নগরীতে করা হয়েছে নাগরি চত্বর। সিলেট নগরের প্রবেশদ্বার কিনব্রিজের উত্তর পাড়ের চত্বরের নামকরণ করা হয়েছে নাগরি চত্বর। ২০১৪ সালে নাগরি বর্ণমালা দিয়ে এই চত্বরে একটি নান্দনিক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে অনেক সিলেটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে নাগরি বর্ণমালার ব্যবহার করছেন। বাড়ির নেইমপ্লেইট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম, নিজের প্রিয় মানুষের কাঠে বা পাথরে খোদাই করে লিখে রাখছেন। অনেকেই নাগরি বর্ণমালার বই নিয়ে সন্তানদের পরিচিত করাচ্ছেন।

 

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ