বিএনপির ভাবনায় দল পুনর্গঠন

প্রকাশিত: ৫:০৬ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪

বিএনপির ভাবনায় দল পুনর্গঠন

ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: সরকার পতনের আন্দোলনে ব্যর্থতার পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপির এখন মূল লক্ষ্য দল পুনর্গঠন। এ জন্য মাঠের বড় কর্মসূচিতে না গিয়ে ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে হতাশ নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করতে জোর দিচ্ছেন নীতিনির্ধারকেরা। বিএনপির সূত্রে এসব জানা গেছে।

 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করলেও গত দেড় মাসে বড় কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি বিএনপি। দলের মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য মুক্তি পেলেও সামনে মাঠের বড় কোনো কর্মসূচির সম্ভাবনা কম। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় সেটাই স্পষ্ট করলেন। তিনি বলেন, ‘আপাতত কর্মসূচি নিয়ে আমরা চিন্তা করছি না। বিশেষ করে বড় কর্মসূচির কথা ভাবছি না। তবে পরিস্থিতি তৈরি হলে সেটা ভিন্ন কথা।’

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও দল পুনর্গঠনে জোর দিচ্ছেন। গত সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকেও বিষয়টি আলোচনা হয়। সূত্র বলেছে, বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে দল পুনর্গঠন ও আন্দোলন নিয়েও কথা হয়েছে। আন্দোলনের স্বার্থে কারাবন্দী নেতা-কর্মীদের দ্রুত মুক্তির বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রমজানে ইফতার অনুষ্ঠানের বাইরে প্রয়োজন ও পরিস্থিতি অনুযায়ী জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার কথাও বলা হয়। নেতারা বলেছেন, ইফতার মাহফিল হতাশ নেতা-কর্মীদের চাঙা করতে ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া গ্রেপ্তার নেতাদের অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করা নেতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে তাঁদেরও মূল্যায়ন করা হবে।

 

ওই বৈঠকে অংশ নেন প্রায় সাড়ে তিন মাস পর কারামুক্ত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

 

সেলিমা রহমান বলেন, কোনো কর্মসূচি ঠিক করা হয়নি। প্রয়োজন হলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

 

বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে বুধবার আজিমপুর কবরস্থানে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর পর দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এক দফার আন্দোলন চলছে। আমাদের যে অভীষ্ট, সেটি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।’ আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীরা হতাশ নন, তাঁরা উজ্জীবিত।’

 

বিএনপির দাবি, গত বছরের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ সারাদেশে অন্তত ২৪ থেকে ২৫ হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়। ইতিমধ্যে বিএনপির মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির দুই সদস্যসহ সামনের সারির অনেক নেতা-কর্মী মুক্তি পেয়েছেন। বুধবার মুক্তি পান বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। বিএনপির নেতারা বলছেন, নেতা-কর্মীরা মুক্ত হতে থাকায় দলে কিছুটা চাঙাভাব ফিরলেও স্বস্তি আসেনি। এখনো স্বাধীনভাবে কর্মকাণ্ড চালাতে দেওয়া হচ্ছে না। এই অবস্থায় শিগগির কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সুযোগ নেই।

 

সম্প্রতি কারামুক্ত বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘আমরা এক দফার আন্দোলনেই আছি। এখন একটু দম নিচ্ছি। দল গোছানোর কাজ করছি। পাশাপাশি আন্দোলনও চলবে।’

 

সূত্র বলেছে, দলের দুঃসময়ে এবং বিগত দিনের আন্দোলনে ত্যাগ স্বীকার করা নেতা-কর্মীদের মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে সোমবার রাতের বৈঠকে। আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে এবারও ইফতার মাহফিল করার সিদ্ধান্ত হয়। এতিম, আলেম-ওলামা, কূটনীতিক, রাজনীতিক এবং পেশাজীবীদের সম্মানে কেন্দ্রীয়ভাবে ইফতারের আয়োজন করা হবে। সাংগঠনিক বিভাগ ও জেলাতেও ইফতারের আয়োজন থাকবে। বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোও ইফতারের আয়োজন করবে। ইফতার অনুষ্ঠানের সঙ্গে কারামুক্ত নেতা-কর্মীদের জন্য সংবর্ধনারও চিন্তা করছে বিএনপি। ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে এর আয়োজন করা হবে। এসব অনুষ্ঠানে সিনিয়র নেতারা অংশ নেবেন। এর মধ্য দিয়ে নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙা হবে বলে মনে করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা।

 

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ