৬ বিচারপতির পদত্যাগ, নতুন বিচারপতি নিয়োগ

প্রকাশিত: ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১১, ২০২৪

৬ বিচারপতির পদত্যাগ, নতুন বিচারপতি নিয়োগ

 

 

ডায়ালিসিলেট ডেস্ক :: বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ ৬ বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন।

 

 

গতকাল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এ পদত্যাগপত্র জমা দেন তারা। দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাকে এ নিয়োগ দেন।

 

 

নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মহামান্য রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান-এর ৯৫(১) অনুচ্ছেদের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ-কে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগদান করিয়াছেন। এই নিয়োগ শপথগ্রহণের তারিখ হইতে কার্যকর হইবে।

 

 

জানা যায়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও আপিল বিভাগের বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন। প্রথমে প্রধান বিচারপতি আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান। এরপর একে একে আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতিও একই প্রক্রিয়ায় পদত্যাগ করেন।

 

 

 

আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সূত্র তাদের এ পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পদত্যাগকৃত আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি হলেন – বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন।

 

 

 

এর আগে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রধান বিচারপতি ফুলকোর্ড সভা ডাকেন। সকালে বিষয়টি চাওর হলে ফুলকোর্ড সভা ডাকার প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজলের নেতৃত্বে আইনজীবীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। বিক্ষোভ মিছিলটি সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনসহ আপিল বিভাগ প্রদক্ষিণ করে।

 

 

পরে বিক্ষোভ মিছিলটি সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের সামনে এসে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিরা পদত্যাগ না করলে তাদের বাসা ঘেরাও করা হবে। তাদের পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।

 

 

 

তারা জানান, শনিবার সকালে হঠাৎ করে জানতে পারি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো উপদেষ্টার কারও সঙ্গে আলাপ না করেই প্রধান বিচারপতি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করে ফুলকোর্ড সভা ডেকেছেন। আমাদের কাছে তথ্য ছিল, তারা ভিন্ন উদ্দেশ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে ভার্চ্যুয়াল সভা ডেকেছেন। সেই সভায় যোগ দিতে হাইকোর্টের বিচারপতি ও বহু আইনজীবীর মধ্যে জুম মিটিংয়ের লিংক সেন্ড করা হয়। এসময় বহু বিচারপতি সেই মিডিংয়ে যুক্ত রয়েছেন।

 

 

এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ঘেরাও করেছে। সভা বন্ধ হয়ে যায়। এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের দুপুর ১টার মধ্যে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেন।

 

 

 

সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দেখেছি শত শত শহীদের রক্তে কেনা স্বাধীনতাকে বানচাল করার জন্য অপশক্তি, পরাজিত শক্তি চেষ্টা করছে। আমরা তাদের প্রতিহত করবো, প্রতিরোধ করবো।

 

 

 

তিনি বলেন, আপনারা ইতিমধ্যে দেখেছেন যে, আমাদের অ্যাপিলেট ডিভিশনের প্রধান বিচারপতি অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়ে একটা অনলাইন ক্যু করার চেষ্টা করছে। আমরা দেখেছি হাসিনার ছেলে জয় বলেছেন যে, তার মা নাকি পদত্যাগ করেননি। সেক্ষেত্রে যে সরকার গঠন হয়েছে তা অবৈধ। অর্থাৎ সংবিধান লঙ্ঘন করে এ সরকার গঠন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে। সুতরাং যার পতন ঘটেছে তার পদত্যাগ করার প্রয়োজন পড়ে না।

 

 

এতে উত্তাল হয়ে উঠে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে হাইকোর্টে নানান স্লোগান দিতে থাকেন।

 

 

‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘দফা এক, দাবি এক, বিচারপতির পদত্যাগ’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘শেখ হাসিনার দালালি, চলবে না- চলবে না’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। একপর্যায়ে দুপুরে পদত্যাগের নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানান সাংবাদিকদের।

 

 

 

প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করার পর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট বিল্ডিং ও রেকর্ডসমূহ রক্ষা করা এবং বিচারপতিদের শারীরিক হেনস্তা থেকে রক্ষা করতে তিনি পদত্যাগ করেছেন। তিনি আরও বলেন, কোর্ট প্রাঙ্গণ রক্ষা, বিচারপতিদের বাড়িঘর, জাজেজ টাওয়ার রক্ষা এবং জেলা জজ কোর্টগুলো রক্ষার স্বার্থে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত আমি নেই।

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ