নিউইয়র্কে দূতাবাসের উদ্যোগে ড. ইউনূসকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হবে

প্রকাশিত: ১০:০৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৪

নিউইয়র্কে দূতাবাসের উদ্যোগে ড. ইউনূসকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হবে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক আসছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে ভাষণ দেবেন তিনি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা নিয়ে ইতোমধ্যে নিউইয়র্কের বিভিন্ন মহলের টানাহ্যাঁচড়া শুরু হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই চলছে পালটা-পালটি সভা ও সংবাদ সম্মেলন।

নিউইয়র্কের বিভিন্ন সংগঠন প্রধান উপদেষ্টার নাগরিক সংবর্ধনা প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করলেও কাউকে দেওয়া হচ্ছে না অনুমতি। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সরকারিভাবেই তাকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হবে বলে বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি সূত্র জানিয়েছে।

২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ম্যানহাটনের টাইমস স্কয়ার সংলগ্ন ম্যারিয়ট মারক্যুইস হোটেলের বলরুমে সরকারিভাবে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজনের ব্যবস্থা করা হলেও প্রবাসী বাংলাদেশি বিভিন্ন সংগঠনের মাঝে শুরু হয়েছে নানা তোরজোড়।

বিএনপিপন্থি ভুঁইফোঁড় নাগরিক সমাজ এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে পরিচালিত বাংলাদেশ সোসাইটিসহ বিভিন্ন মহল মরিয়া হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ।

সূত্রটি জানিয়েছে, ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ম্যানহাটনের টাইমস স্কয়ার সংলগ্ন ম্যারিয়ট মারক্যুইস হোটেলের বলরুমে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হয়েছে। অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন এবং নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল।

বিএনপি-জামায়াত এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে পরিচালিত বাংলাদেশ সোসাইটি গত শনিবার সন্ধ্যায় সিটির এলমহার্মস্টস্থ নিজস্ব ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন ড. ইউনূস একজন বিশ্ব বরণ্যে সম্মানিত এবং নিরপেক্ষ ব্যক্তি। তাই প্রবাসীদের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেওয়ার দাবিদার বাংলাদেশ সোসাইটি।

সংবাদ সম্মেলনে সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুর রব মিয়া লিখিত বক্তব্যে বলেন, প্রতি বছরই সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের সরকার প্রধান যোগ দেন। অন্যান্য বছরগুলোতে রাজনৈতিক সরকার থাকায় সরকার প্রধানের যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে সংশ্লিষ্ট দলের মাধ্যমেই তাদের সফর সংক্রান্ত সব আয়োজন করা হয়। এমনকি সংবর্ধনার আয়োজনও করা হয় দলীয়ভাবে। এতে বিপুল সংখ্যক সাধারণ প্রবাসী তাদের দাবি-দাওয়া সরকার প্রধানের সামনে বলার সুযোগ কখনোই পান না। রাজনৈতিক দলের প্রবাসী নেতা-কর্মীরা তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে ব্যস্ত থাকায় প্রবাসীদের সাধারণ সমস্যা ও সম্ভাবনার কথাগুলো সরকার প্রধান জানতেই পারেন না, ফলে সেগুলোর সমাধানও বছরের পর বছর হয়নি। বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী, সোসাইটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহীম হাওলাদার, সহ-সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ নওশেদ হোসেন এবং প্রচার ও জনসংযোগ সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে ইউনূসের নিউ ইয়র্ক সফরকালে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। সরকারের পতনের পর দলটির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলার প্রতিবাদে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের যুক্তরাষ্ট্রে আগমনের দিন জেএফকে বিমানবন্দরে কালো পতাকা প্রদর্শনের পাশাপাশি বিক্ষোভ করবে দলটির নেতাকর্মীরা। জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের দিন বাইরে বিক্ষোভ সমাবেশের অনুমতি নিয়েছেন তারা।

আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে সরকার প্রধান হয়ে প্রথম ভাষণে তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বকে তুলে ধরবেন।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সাইড লাইনে প্রধান উপদেষ্টা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম খান, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডিসহ একাধিক বিশ্ব নেতার সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ অধিবেশনে ২০-২৫ জন সফরসঙ্গী থাকতে পারে। এর মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের ৭ জন কর্মকর্তা রয়েছে।

সফরকালে তিনি ছাড়াও সফরসঙ্গী হবেন ড. ইউনূসের মেয়ে দিনা আফরোজ ইউনূস, এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম, প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব শাব্বীর আহমদ। অন্য সময়ের রাজনৈতিক সরকারের মত এবার জাতিসংঘ সম্মেলনে বাংলাদেশের বিশাল কোনো প্রতিনিধিদল অংশ নিচ্ছে না।

আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে সাধারণ পরিষদের উচ্চপর্যায়ের ৭৯তম অধিবেশন শুরু হয়ে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে।

0Shares