সোহেল আহমদ :: সিলেটে রাজনীতির একসময়ের বিএনপি‘র অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদলের অন্যতম পরিচিত মুখ। যিনি সিলেটের রাজপথে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে শত শত ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নিয়ে হঠাৎ হাজির হতেন মিছিল-সভা সমাবেশে অংশগ্রহন করতেন। দলকে আরো চাঙ্গা করে রাখতেন। এর আগে হয়তো কাউকে এভাবে রাজপথে ছাত্রজনতাকে নিয়ে কোন মিছিল সমাবেশে অংশগ্রহন করতে দেখা যায়নি।
আওয়ামীলীগ ফ্যাসিষ্ট সরকারের আমলে বিএনপি বিভিন্ন কর্মসূচীতে যখন পুলিশি বাধা ছিল ঠিক সেসময়ে তারই নেতৃত্বে সিলেট মহানগরীর কোন সময় কোর্ট পয়েন্টে থেকে কখনও শেখঘাট জিতু মিয়ার পয়েন্ট থেকে আবার কখনও বিক্ষোভ মিছিলটি নিয়ে বের হতেন জিন্দাবাজার বা চৌহাট্টা এলাকায় শত শত নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে তিনি সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন।
দলের দুর্দিনে তিনি নিজের দ্বায়িত্বকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে দলের কর্মসূচীকে চাঙ্গা করে রেখেছিলেন সেই সিলেট জেলা ছাত্রদল সাবেক সভাপতি আফতাফ হোসেন সুমন। তবে দলের কিছু ভুল বুঝাবুঝিতে তার দলটি চলে যায়।
বুধবার (১৬ই অক্টোবর ২০২৪ইং) আলতাফ হোসেন সুমন তার ফেসবুক ষ্ট্যাটাসে তার মনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন। নিম্নে সেই ষ্ট্যাটাসের লিখিত বক্তব্য হুবুহু তুলে ধরা হলো –
জাতীয়তাবাদী পরিবারের সম্মানীত ভাইয়েরা, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্।
আমার নির্বাচনে অংশগ্রহন করা নিয়ে কিছু কথা আপনাদের কাছে তুলে ধরছি। বিগত ৩১শে আগস্ট ২০২১ ইং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সীমানা বর্ধিত করণের পর থেকেই নিজ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও রাজনৈতিক শোভাকাঙ্খিদের পরামর্শে মহান আল্লাহর উপর আস্থা রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেই এবং একটি সুনির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনা অনুযারী পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি নিজ এলাকায় সামাজিক কর্মকান্ডে সোচ্চার হই। মানুষের উৎসাহ উদ্দিপনায় প্রচারণার গতি বাড়াতে সাহস পাই।
এরপর ১৬ই মার্চ ২০২৩ ইং তারিখে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্টিত হয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) উক্ত (ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশগ্রহণ না করলেও যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধে কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে নি। যার ফলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার উৎসাহ চুড়ান্তরুপে বৃদ্ধি পায় এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো এই মর্মে মানুষের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। ধারনা করেছিলাম দল হয়তো মেয়র পদের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিলেও কাউন্সিলর পদের বেলায় নমনীয় থাকবে।
৩রা এপ্রিল ২০২৩ ইং তারিখে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন এবং বিএনপি সেই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার নির্দেশ দেয়।
আগস্ট ২০২১ থেকে এপ্রিল ২০২৩ ইং পর্যন্ত (২০ মাস) অনেক মানুষ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশগ্রহনকারী আত্মীয়স্বজনকে উপেক্ষা করে আমার জন্য প্রকাশ্যে প্রচারণা করে বিভিন্ন প্রার্থীর চক্ষুশূলে পরিণত হোন। উনাদের কথা ভেবে এবং সাধারণ মানুষের কাছে দেয়া ওয়াদা রক্ষার্থে ২১ শে জুন ২০২৩ ইং তারিখে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহন করার নির্মম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হই।
জয়লাভ করে শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানে তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধানের ঠিক পেছনে আমার ছবি দেখে হাজার হাজার জাতীয়তাবাদী সহযোদ্ধাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় এবং আমার প্রতি যতটুকু ভালবাসা ছিল ঠিক ততোটুকু ঘৃনার জন্ম নেয়। তাঁদের সেই ঘৃনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা।
কারন তাঁদের জায়গায় আমি হলে আমারও একই অবস্থা হতো। ওই অনুষ্টানের বাস্তব চিত্রটি হচ্ছে, আমার ঠিক সামনে একজন এসএসএফ ও ঠিক পেছনে একজন (মহিলা) এসএসএফ ছিলো,মাঝখানে আমি।
আমার পেছনের (মহিলা এসএসএফ) জন সামনের (এসএসএফ) জনকে ইঙ্গিত দিয়ে বললো আমাকে সামনে জায়গা করে দেয়ার জন্য। সামনের জন নিজে সরে গিয়ে ঠিক তার জায়গায় আমাকে দাড় করালো, ঐ সময়ে কি করা উচিৎ ছিল সেই মানসিক অবস্থা আমার ছিল না। আমার শুধু এই অনুভূতিই হচ্ছিল কার পেছনে দাড়াবার কথা আর কার পেছনে দাড়ালাম।
নিজেকে ভালো সাজানো বা ছাফাই গাওয়ার জন্য কথাগুলো বলছি না। নিজের অবস্থানটা পরিষ্কার করছি। আমার সমালোচনা করতে গিয়ে গুটি কয়েক ভাই ব্যাক্তিগত আক্রমন করেছেন এমনকি আমার দাড়ি রাখা (নবিজি (সাঃ) এর সুন্নত) নিয়েও কটাক্ষ করেছেন, এমনটি সমুচিন নয়,কারন গুনাহগার হবেন।
আমি দাড়ি রেখেছি ১৩ই জুন ২০১৩ সালে। হয়তো বা অনেকেই আমাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছে কিংবা হবে, এটাও ইসলামের একটি প্রচার ও প্রসার।
দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মতো নির্বুদ্ধিতার কাজ আমাকে দিয়ে হয়েছে, এটা স্বাভাবিক ভাবেই অনেকে মানতে পারেন নি, পারার কথাও না। কারণ তাঁরা আমাকে পছন্দ করতেন, ভালোবাসতেন, আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন,কিন্তু আমি নিজেই সেটা নষ্ট করেছি।
তাঁদের সেই তিরস্কারের প্রতি সম্মান রেখে বলছি, আপনাদের মনে কষ্ট দেয়ার জন্য আমি অত্যন্ত লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া আমার মোটেও উচিৎ হয় নি।
ইতিমধ্যে আমিসহ বাকী সবাই (দল থেকে বহিষ্কার হওয়া) গতবছর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান বরাবর দলীয় নিয়মানুযায়ী ক্ষমা প্রার্থনা চেয়ে দরখাস্ত করেছি। আমাদের ব্যাপারে উনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন মাথা পেতে নেবো।
দুই যুগেরও অধিক সময় দেশপ্রেমে উদ্ বোধ্য হয়ে দলের হয়ে কাজ করেছি। অনেক ত্যাগ তিথিক্ষার প্রতিদান হিসেবে দল আমাকে তার চেয়েও বেশি দিয়েছে। বাকী জীবন দলের একজন সাধারন কর্মী হয়ে ঋণ পরিশোধের চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ্।