স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটে ৭ই নভেম্বর

প্রকাশিত: ৬:০২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৭, ২০২৪

স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটে ৭ই নভেম্বর

ডায়ালসিলেট ডেস্ক :স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটে ৭ই নভেম্বর। অনেকে এটাকে ইতিহাসের বাঁক হিসেবেও মনে করেন। সেদিন সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়। আর সেই নতুন বাংলাদেশের মধ্যমণিতে পরিণত হন তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের এক অকুতোভয় বীর যোদ্ধা, সেক্টর কমান্ডার, জেড ফোর্সের প্রধান ও স্বাধীনতার মহান ঘোষক।

৭ই নভেম্বর আমাদের জাতীয় জীবনে উজ্জ্বলতম দিন। চেতনায় ভাস্বর অনন্য এ দিনটি বাংলাদেশে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’- হিসেবে পালিত হয়। মূলত ৭ই নভেম্বরে দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির গতিপথ নির্ধারিত হয়। সামরিক বাহিনীর মধ্যে চলা অস্থিরতার অবসান ঘটে। প্রতিষ্ঠিত হয় চেইন অব কমান্ড। তবে স্থিতিশীলতার এই পর্যায়ে উপনীত হতে বাংলাদেশকে একটা অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সামরিক বাহিনীর মধ্যে ঘটে অভ্যুত্থান, পাল্টা অভ্যুত্থান। এ সুযোগে গজিয়ে ওঠা দেশি-বিদেশি চক্রান্তও মোকাবিলা করতে হয় বাংলাদেশকে। অনেকের মতে ৭৫ সালের কয়েকটি হৃদয়বিদারক ধারাবাহিক ঘটনার চূড়ান্ত পর্যায় হলো ৭ই নভেম্বর। এর আগে ওই বছরের ১৫ই আগস্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন সে সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান। নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা গুম, খুন, আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা-কর্মীদের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অনাচার, লুটপাট রোধে ব্যর্থতা এবং গণতন্ত্র হত্যা করে একদলীয় দুঃশাসন কায়েমের অভিযোগে এ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন সামরিক বাহিনীর কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা মেজর।

আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো- সামরিক বাহিনীর একটি অংশের অভ্যুত্থানে শেখ মুজিব নিহত হওয়ার পর তারই বাকশাল সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী খোন্দকার মোশ্তাক আহমদ নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। তার সঙ্গে যোগ দেন সদ্য বিগত সরকারের ২৩ জন মন্ত্রীর মধ্যে ২১ জন। এছাড়া তার সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল সফিউল্লাহ, নৌবাহিনী প্রধান রিয়াল এডমিরাল এমএইচ খান, বিমানবাহিনী প্রধান একে খোন্দকার, বিডিআর প্রধান খলিলুর রহমান। রক্ষীবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর প্রধানরাও নতুন সরকারের প্রতি আনুগত্য দেখান। এদিকে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোশ্তাক আহমেদের সার্বক্ষণিক সহোচর হন অভ্যুত্থানকারী সামরিক কর্মকর্তারা। তারা রাষ্ট্রপতিকে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিতে থাকেন। এ নিয়ে সেনাবাহিনীর সিনিয়র অফিসারদের মধ্যে সুপ্ত ক্ষোভ ছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ২৪শে আগস্ট মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান নতুন সেনাপ্রধান হন। জেনারেল (অব.) ওসমানীকে রাষ্ট্রপতির প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা বানানো হয়। এছাড়া তিন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের জন্য বাহিনী প্রধানদের ওপর ‘চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ’- নামে একটি পদ তৈরি করা হয়। এ পদে নিয়োগ পান বিডিআর’র মহাপরিচালক খলিলুর রহমান। বাহিনী প্রধানদের চাপে রাখতেই রাষ্ট্রপতি মোশ্তাক সুচতুরভাবে এ কাজটি করেছিলেন। এর পাশাপাশি বঙ্গভবনে থাকা ১৫ই আগস্টে অভ্যুত্থানকারী মেজর ফারুক, রশীদের ক্ষমতা প্রদর্শনতো ছিলই।
সবকিছু মিলিয়ে দেশে একটা অস্থিতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সবখানেই একটা গুমোট পরিস্থিতি। এ প্রেক্ষাপটেই এলো নভেম্বর মাস। এ মাসের অনুঘটক ছিল তিনটি প্রধান চরিত্র। সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ এবং সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল তাহের। তিনজনই ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এর মধ্যে দেশের মানুষ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের কাছে জিয়াউর রহমান ছিলেন অধিক জনপ্রিয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের ওপর  পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বর্বর হামলার প্রেক্ষাপটে দেশবাসীকে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তে চট্টগ্রামে নিজ সামরিক ইউনিট নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন জিয়াউর রহমান। এছাড়া চট্টগ্রামে অস্থায়ী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে তিনি দেশবাসীর প্রাণভোমরায় পরিণত হন।

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ