প্রকাশিত: ২:৫৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২০, ২০২৪
ডায়ালসিলেট ডেস্ক:এডিসি দস্তগীর। পুরো নাম সাদেক কাউছার মো. দস্তগীর। সিলেটের সাবেক বিতর্কিত পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমানের একান্ত আস্থাভাজন ছিলেন। এসি থাকার সময় থেকেই দাপট দেখাচ্ছিলেন সিলেটে। সর্বশেষ সিলেটে ৫ই আগস্টের প্রেক্ষাপটের আগে ছিলেন বেপরোয়া। এ কারণে প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর তাকে নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় সিলেটে। গণঅভ্যুত্থানের দিন তাকে খুঁজেছিলেন তারই হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়া বিরোধী মতের নেতাকর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাসতে থাকে তার কীর্তিকলাপের কাহিনী। শেষে পুলিশের তরফ থেকে তাকে বদলি করা হয় শেরপুরে। এরপরও তাকে নিয়ে ক্ষোভ কমেনি সিলেটে। অবশেষে গত বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিতর্কিত কর্মকর্তা এডিসি দস্তগীরকে। শেরপুর থেকে সিলেটের সাংবাদিক তোরাব হত্যা মামলার তদন্তে থাকা পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন- পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা তাকে গ্রেপ্তার করেন। সিলেট জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক লিটন আহমদ এডিসি দস্তগীর গ্রেপ্তারের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্দুক হাতে নিয়ে এডিসি দস্তগীরের গুলি ছুড়ার দৃশ্য পোস্ট করেছেন। মানবজমিনকে লিটন জানিয়েছেন- ‘দস্তগীর এক সময় ছিল আতঙ্ক। আমাদের দূরে দেখলেই গুলি করবে বলে কাছে ডাকতো। আমরা বুঝতাম গুলি করবে। দেখামাত্রই আমাদের গুলি করতো। কখনো কখনো মনে হতো সে পুলিশ নয়, আওয়ামী লীগের ক্যাডার। তার মুখের ভাষাও ছিলো খারাপ।’ দস্তগীরের যন্ত্রণায় অস্থির ছিলেন আন্দোলনে রাজপথে থাকা জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদ। দস্তগীর গ্রেপ্তারের পর সকাল থেকে তার নেতাকর্মীরা অপেক্ষায় ছিলেন আদালতপাড়ায়। সিলেটে বিগতদিনে রাজপথে থাকা বহু নেতাকর্মীও ছুটে যান আদালত এলাকায়। ফলে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই অবস্থায় দিনভর অপেক্ষার পর বিকালে পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে ডাকা হয় বিএনপি’র অঙ্গ সংগঠনের সিনিয়র নেতাদের। প্রশাসনের তরফ থেকে সেই ডাকে সাড়া দিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে যান জেলা যুবদল সম্পাদক মকসুদ। মানবজমিনকে জানানা- ‘ও মানুষ না। দানব। অনেক জ্বালিয়েছে। গুলি করেছে। রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে অসংখ্যবার তার গুলির মুখোমুখি হয়েছি। দীর্ঘদিন ঘরে থাকতে দেয়নি। এরপরও প্রশাসনের ডাকে সাড়া দিয়ে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের নিবৃত করতে আদালত প্রাঙ্গণে এসেছি।’ জুলাই-আগস্টে প্রায় প্রতিদিনই সিলেটে আন্দোলন দমাতে গিয়ে প্রকাশ্যে গুলি ছুড়েছে। বন্দুক হাতে সে ছিল বেপরোয়া। পাশে থাকা পুলিশ সদস্যদের হাত থেকে অস্ত্র নিয়ে ছুড়তেন গুলি। সিলেটের তোরাব হত্যার ঘটনা তেমনটি একটি। ১৯শে জুলাই, শুক্রবার। জুমার নামাজ থেকে বের হয়ে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা বিক্ষোভে অংশ নেন। শান্তিপূর্ণভাবেই ছিল সেই মিছিল। পুরান লেন গলির উল্টো দিকে মিছিল পাড়ি দেয়ার সময় হঠাৎই মেজাজ হারিয়ে ফেলেন এডিসি দস্তগীর। ওইদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সাংবাদিকরা জানিয়েছেন- পরিস্থিতি শান্ত ছিলো। হঠাৎ করেই বন্দুক হাতে নিয়ে গুলি ছুড়া শুরু করেন দস্তগীর। সঙ্গে আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য। আর ওই সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশের গুলির ঝাঁঝরায় ক্ষত-বিক্ষত হয় সাংবাদিক তোরাবের শরীর। এরপর ক্ষান্ত হননি দস্তগীর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, এডিসি দস্তগীর ওই দিন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে গুলিবর্ষণ করেই যাচ্ছিলেন। তার এই গুলিবর্ষণের কারনে তোরাব নিহত হওয়া ছাড়াও অনেক নেতাকর্মী আহত হয়ে পুঙ্গত্ববরণ করেছেন। পিবিআই জানিয়েছে, বুধবার বিকালে সিলেটের সাবেক এডিসি দস্তগীরকে শেরপুর থেকে গ্রেপ্তার করে। ভোররাতে তাকে সিলেটে নিয়ে আসা হয়। দিনভর অপেক্ষার পর সন্ধ্যায় দস্তগীরকে তোলা হয় সিলেটের আদালতে। এসময় সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল মোমেনের আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর মোরসালিন তাকে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করেন। শুনানি শেষে আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। শুনানী শেষে বাদীপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট আব্দুর রব সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- আদালত সাবেক এডিসি দস্তগীরের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এদিকে, দস্তগীরকে আদালতে তোলার আগে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এরপরও আদালতে নিয়ে আসার সময় এবং আদালত থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় ক্ষুব্ধ নেতাকর্মী ও সাংবাদিকরা তাকে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকায় আদালত প্রাঙ্গণে কোনো অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেনি।
ছাত্রদল নেতা হত্যা মামলার আসামির প্রতি ক্ষোভ : ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনে বালাগঞ্জের পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়নের আজিজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্রে জাল ভোট প্রদানে বাধা প্রদান করায় উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সায়েম আহমদ সুহেলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে নিহত সায়েম আহমদ সুহেলের চাচাতো ভাই পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান বাদী হয়ে ৫ জনের নামোল্লেখ করে ও ২৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে সিআর মামলা করেন। এ মামলার প্রধান আসামি পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমির হোসেন নুরুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার সন্ধ্যায় নগরীর মীরের ময়দান বাংলাদেশ বেতারের কেন্দ্রের সামনের সড়ক থেকে র্যাবের একটি দল অভিযান চালিয়ে আমির হুসেন নুরুকে গ্রেপ্তার করে। পরে রাত সাড়ে ৮ টায় বালাগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে- গতকাল সিলেটের আদালতে নুরুকে তোলার সময় ক্ষোভ দেখান আদালত প্রাঙ্গনে উপস্থিত থাকা জনতা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ নুরুকে আদালত প্রাঙ্গণে নিয়ে এলে তার ওপর হামলা হয়। আদালত চত্বর ও বারান্দায় তাকে কয়েকজন কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। হামলায় তার নাক দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। পরে পুলিশের অতিরিক্ত লোকবল বাড়িয়ে নুরুকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech