প্রকাশিত: ৫:০৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪
ডায়ালসিলেট ডেস্ক:এ বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কারণ ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। এরপর একটি নতুন অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। জনতার সমর্থনে তারা দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার ‘দিস স্টুডেন্টস আউস্টেড আ গভর্মেন্ট, নাউ দে আর রি-বিল্ডিং আ ডেমোক্রেসি’ শিরোনামে খবর প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস। এতে বলা হয়, সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় একটি বাণিজ্যিক ভবনের প্রথম তলায় নতুন অফিসে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণের পরিকল্পনা করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তরুণ শিক্ষার্থী। মাত্র কয়েক মাস আগে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উৎখাতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন এই তরুণরা। হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে কর্তৃত্ববাদ, বর্বরতা এবং দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। তার পতনের পর বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে সুযোগ এসেছে তা কাজে লাগাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শিক্ষার্থীরা। প্রক্রিয়াটি যত দীর্ঘ বা যত জটিলই হোক না কেন দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালীভাবে পুনর্গঠনে কাজ করে যাবেন তারা। দেশে এমন একটি ব্যবস্থার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সঙ্গে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে। এ ছাড়া আর কখনই যেন দেশ স্বৈরাচারের কবলে না পড়ে সে বিষয়ে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ছাত্রনেতারা।
২৬ বছর বয়সী তরুণ ছাত্রনেতা আরিফ সোহেল বলেছেন, আমাদের রাজনৈতিক শক্তি এখন খুবই তরল অবস্থায় আছে। ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর জয়ের আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেছেন, আমরা স্থিতিশীল এবং অগ্রগতিশীল একটি দেশ চাই।
নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, ৫৩ বছর আগে স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্যদিয়ে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণ কঠিন কাজ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে এ দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর। এদের মধ্যে রয়েছেন নিজের ক্যারিয়ারে সফল ব্যক্তিবর্গ এবং তরুণ ছাত্রনেতারা- যারা প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে ইতিহাস নির্মাণের ভার বহন করছেন।
শেখ হাসিনার আমলে নিপীড়িত একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল চাইছে কোনো রকম সংস্কার ছাড়াই আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় নির্বাচন দেওয়া হোক। এ ছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে তেল, চালসহ সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় চরম দুর্ভোগে জনগণ। অন্যদিকে ঢাকায় ক্রমাগত বিক্ষোভের ফলে ভোগান্তিতে রয়েছে রাজধানীবাসী। অন্যদিকে বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর কথিত হামলার খবরে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পাশাপাশি ইসলামের নামে চরমপন্থিদের উত্থানের আশঙ্কাতেও রয়েছে বাংলাদেশ। যদিও অল্প সময়ের মধ্যে পুরনো ব্যবস্থার উৎখাত হয়েছে- তবে সংস্কারের জন্য সময়ের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্বে থাকা ছাত্রনেতারা হয়তো কোনো বিলাসী জীবন পাবেন না।
শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের একজন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, সংস্কার চলছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরের সময় উল্লেখ করে মাহফুজ বলেন, নতুন সরকারের প্রথম দুই মাস কিছু স্থবিরতা ছিল। কেননা, তখন সরকারকে আইনশৃঙ্খলার ওপর বাড়তি নজর দিতে হয়েছে। তবে বর্তমানে সংস্কার কাজ চলছে এবং অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছেন তরুণ এই ছাত্রনেতা। জুলাই অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ধারণার জন্য বেশ পরিচিত ২৬ বছর বয়সী মাহফুজ। কেননা আন্দোলনের আগেই ‘ফ্যাসিবাদী শাসনের বিলুপ্তি এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের’ ধারণাটি উপস্থাপন করেছিলেন তিনি। রক্ষণশীল মুসলিম সমাজের এই দেশে ছাত্রনেতারা বাম ঘরানার বিপ্লবী রাজনীতির ভাষার প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন।
মাহফুজ বলেন, বর্তমানে নির্বাচনি বিধিমালা হালনাগাদের মতো দৃশ্যমান স্বল্পমেয়াদি সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। আরও অনেক সংস্কার রয়েছে, যেমন- সরকারে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং দেশের তরুণদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা। তবে এক্ষেত্রে আরও সময় প্রয়োজন। তিনি বলেছেন, দেশের ১৭ কোটি ১০ লাখ মানুষের প্রায় ৮০ শতাংশই কর্মক্ষম, সকলের কর্মসংস্থান তৈরিতে সময়ের প্রয়োজন। এর আগে এক সাক্ষাৎকারে ক্ষুদ্রঋণের জন্য বিখ্যাত ৮৪ বছরের ড. ইউনূস বলেছেন, জনগণের পূর্ণ সমর্থনেই তার সরকার গঠিত হয়েছে। সংস্কারে ধীরগতির জন্য তার সরকারের সমালোচনার জবাবে এ কথা বলেন তিনি। ড. ইউনূস বলেন, কয়েক বছর সময় লাগলেও নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ছাত্ররা সক্ষম।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে বদিউল আলম মজুমদারের নাম টেলিভিশনে ঘোষণা করেন ড. ইউনূস। এর মাত্র কয়েক মিনিট আগে কমিশনের প্রধান হওয়ার বিষয়ে জানতে পারেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি অর্থনীতিবিদ ও মানবাধিকার কর্মী। বয়স ৭৮ বছর। তিনি একজন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন ইলিয়ন স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. আলী রীয়াজ। তাকে সংবিধান সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেপ্টেম্বরে মোট ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেন ড. ইউনূস। যেগুলোর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা বেশির ভাগই শিক্ষাবিদ, সরকার এবং নাগরিক সমাজের বিশেষজ্ঞ। তাদের সঙ্গে ছাত্রনেতারাও যুক্ত রয়েছেন। তবে এসব কমিশন থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে বাদ দেয়া হচ্ছে। ডিসেম্বরের শেষের দিকে পুলিশ এবং বিচার বিভাগের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার এবং দুর্নীতি হ্রাস ও জনপ্রশাসনের উন্নয়নের বিষয়ে সুপারিশ দেবে সংশ্লিষ্ট কমিশনগুলো। অন্তর্বর্তী সরকার বড় আইডিয়া দিতে চাইছে। তারা মনে করে ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। কারণ জনগণ এবং রাজনীতিবিদদের তরফ থেকে এই ব্যাপক পরিবর্তনে তাদের প্রতি সমর্থন আছে। তারাই পরবর্তী সরকারে নেতৃত্ব দেবে।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech