ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের অবৈধ সম্পদের তদন্ত শুরু করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সংস্থার প্রাথমিক অনুসন্ধানে বিএসবির স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে এক হাজার ১০৬ শতাংশ জমির তথ্য মিলেছে। ব্রাক্ষণবাড়িয়ার দুটি মৌজায় থাকা এসব জমির দলিল মূল্য ১০২ কোটি ৬১ লাখ টাকার বেশি। যার বাজার মূল্য অন্তত ৬শ কোটি টাকা বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। এ ছাড়াও নামে বেনামে রাজধানীর গুলশান, বারিধারাসহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের অসংখ্য ফ্ল্যাট, ভবন ও জমির তথ্য বেরিয়ে আসছে।

 

 স্বল্প খরচে বিদেশে উচ্চশিক্ষার ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক। এরপর প্রতারিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এসব টাকায় বিভিন্ন এলাকায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ গড়েছে। অসংখ্য ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান চালিয়ে অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়ে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা করে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে হাতিয়ে নেয়া অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

 

বিএসবির একটি সম্পদের বিবরণীতে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. খায়রুল বাশার বাহারের নামে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার চরনারায়ণপুর ও ভবানীপুর মৌজায় ১৪টি জমি রয়েছে। এছাড়াও বিএসবি ফিশারিজ অ্যান্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে ৯টি জমি রয়েছে। দুটি মৌজায় থাকা এসব জমির পরিমাণ এক হাজার ১৬ শতাংশ। যার দলিল মূল্য দেখানো হয়েছে ১০২ কোটি ৬১ লাখ টাকার বেশি। এর বাজার মূল্য অন্তত ৬শ কোটি টাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও রাজধানীর গুলশানে খায়রুল বাশারের নামে দশতলা একটি ভবন থাকার তথ্য রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, ভাটারার শহীদ আব্দুল আজীজ সড়কে আটতলা ও ছয়তলা দুটি ভবন রয়েছে বাশারের মালিকানায়। বারিধারার জে ব্লকের ৩নং বাড়িতে তিনটি ফ্ল্যাট ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তার জমি রয়েছে।

 

রাজধানীর গুলশান থানায় সিআইডির উপ-পরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন বাদী হয়ে করা মামলায় বিএসবি গ্লোবালের মালিক মো. খায়রুল বাশার বাহার (৫১) ছাড়াও আরও দুজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন, বাশারের স্ত্রী খন্দকার সেলিমা রওশন (৫০) ও ছেলে আরশ ইবনে বাশার (২৭)। এছাড়া অজ্ঞাতনামা চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বিবরণে বলা হয়, বিদেশে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পরামর্শদানের (কনসালট্যান্সি) অনুমতি নিয়ে ঢাকার গুলশান সার্কেল-২ এলাকায় রব সুপার মার্কেটে কার্যক্রম শুরু করে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক। এরপর ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে শিক্ষার্থী পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নিতে শুরু করে। বিদেশি স্কুল ও কলেজে টিউশন ফি জমা দেওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীদের নামে কোনো ফি জমা হয়নি। কয়েকজন ভুক্তভোগী ই-মেইলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ তথ্য জানতে পারেন। এমন ১৪১ জন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ১৮ কোটি ২৯ লাখ টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে বিএসবি গ্লোবাল। এর বাইরেও পাঁচ শতাধিক সেবাপ্রত্যাশী প্রতারিত হয়েছেন বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে।
সিআইডি জানায়, ভুক্তভোগীরা অর্থ ফেরত চাইলে প্রতিষ্ঠানটি কখনো শিক্ষার্থী, কখনো প্রতিনিধি বা অভিভাবকের অনুকূলে ব্যাংক চেক দেয়। এসব চেকে টাকা না পেয়ে (বাউন্স হওয়ায়) কিছু ভুক্তভোগী মামলা করেন। গত বছরে বিভিন্ন সময় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় একাধিক প্রতারণার মামলা হয়েছে। এক কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১৫ ভুক্তভোগীকে নিয়ে আমির হোসেন মামলা করেন। তিন কোটি ৯৫ লাখের বেশি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ৩৫ জনকে নিয়ে মামলা করেন রিতা আক্তার। ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় মামলা করেন জান্নাতুল ফেরদৌস মুক্তা। এছাড়া ভুক্তভোগী তাওসিফ আলম আরাফের মা কানিজ ফাতেমা রুনা মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। এসব মামলার তদন্ত চলছে। এ ছাড়াও তাদের নামে এনআই অ্যাক্টে মামলা চলছে এবং একাধিক ওয়ারেন্ট আছে।
0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *