সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জে ৫২ মামলায় লঘু অপরাধে অভিযুক্ত ৬৫ শিশুকে কারাগারে না পাঠিয়ে ছয় শর্তে সংশোধনের জন্য মা-বাবার স্নেহ-মমতায় বেড়ে ওঠার আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে ২৫ দম্পতিকে আবার একসঙ্গে সংসার করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
বুধবার দুপুরে সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন এমন আদেশ দিয়েছেন। এর আগেও কয়েক দফায় ১৪৫ মামলায় ২০০ শিশুকে মা-বাবার কাছে এবং ২২৫টি মামলা আপোষে নিষ্পত্তি করে দাম্পত্য কলহ মিটিয়েছেন।
জানা যায়, সুনামগঞ্জে মারামারি ও সামান্য পরিমাণে মাদক বহনসহ লঘু অপরাধে ৫২টি মামলায় ৬৫ জন শিশুসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের জড়ানো হয়। এসব শিশুদের আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হত। এ কারণে শিশুদের ভবিষ্যত ও শিক্ষা জীবন ব্যহত হচ্ছিল। শিশুদের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার এই অসুবিধা থেকে মুক্তি দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিতে মামলার নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক।
আদালত রায় প্রদানকালে বলেছেন, এমনিতেই ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত শিশুজীবন, এরমধ্যে মামলা মোকদ্দমা থাকলে তাদের স্বাভাবিক ও শিক্ষাজীবন ব্যাহত হবে। আদালত ছয় শর্তে তাদেরকে মামলা থেকে মুক্তি দেন। রায় ঘোষণার পর আদালতের পক্ষ থেকে সকল শিশুর হাতে জাতীয় পতাকা, মুক্তিযুদ্ধের বই, ফুল ও ডায়রি তুলে দেন আদালতের কর্মীরা।
আদালতের দেওয়া ছয় শর্তে বলা হয়েছে, বই পড়ে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, হাঁস-মুরগি ও গবাধি পশু পালন, এসি-টিভি মোবাইল সার্ভিসিংয়ের যেকোনো একটি বিষয়ে কারিগরি বা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও প্রতিদিন দুইটি ভালো কাজ করে আদালতের দেওয়া ডায়রিতে লিখে রাখতে হবে। প্রত্যেকে কমপক্ষে ২০টি করে গাছ লাগিয়ে পরিচর্যা, ধর্মকর্ম করা এবং বাবা-মায়ের আদেশ নির্দেশ মেনে চলা, মাদক থেকে দূর থাকা ও ভবিষ্যতে অপরাধের সঙ্গে না জড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রায়ে।
একই সময়ে আদালত আরেকটি রায়ে ২৫টি মামলায় ২৫ দম্পতির দুর্বিসহ জীবন-যাপনের অবসান ঘটান। যৌতুকের দাবিসহ নানাবিধ কারণে নির্যাতনের স্বীকার হয়ে সংসার থেকে বিতাড়িত ২৫ নারী স্বামীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে আদালতে মামলা করেছিলেন। বিচারক উভয়ের বক্তব্য শুনে তাদের সন্তানসহ নিজেদের মঙ্গলের জন্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্প্রীতর বন্ধন এটে ২৫ যুগলের পারিবারিক মিলনের ব্যবস্থা করে দেন।
দুটি রায়ের বিষয় নিশ্চিত করে সুনামগঞ্জ শিশু ও মানব পাচার আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট হাসান মাহবুব সাদী ও পিপি অ্যাডভোকেট নান্টু রায় জাগো নিউজকে বলেন, শিশুরা তাদের আপন ঠিকানা ফিরে পেল, মা-বাবার দুশ্চিন্তার অবসান হলো এবং সন্তানকে নিজের কাছে রেখে সংশোধনের সুযোগ পেলেন। স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকার যন্ত্রণা এবং তাদের সন্তানরা মা-বাবার বিচ্ছেদের অশান্তি থেকে মুক্তি পেলো। আদালতের এমন উদ্যোগে বিচারপ্রার্থীদের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে, মামলা জটও কমে যাচ্ছে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *