ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের ছেলে রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহ কীভাবে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হলেন তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এছাড়া নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সঙ্গে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, এমবিবিএস পাস করা রাফাত সাদিক নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে গত বুধবার সিলেট থেকে রাফাত সাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়। তার এই জঙ্গি সম্পৃক্ততার পেছনে বাবার দলের কোনো নির্দেশনা ছিল কি না, তা জিজ্ঞাসাবাদ করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন সিটিটিসি প্রধান।
আসাদুজ্জামান জানান, গত ১ নভেম্বর রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠনটির তিন সদস্য সেজাদুল ইসলাম সাহাব তানিম ওরফে ইসা ওরফে আরাফাত ওরফে আনোয়ার ওরফে আনবির (২৪), মো. জাহিদ হাসান ভূঁইয়া (২১) ও সৈয়দ রিয়াজ আহমদকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়। তারা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সিলেট থেকে ‘হিজরত’ (দেশত্যাগ বা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যাওয়া) করেছিলেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে যতসংখ্যক যুবক কথিত এই হিজরত করেছেন, তাদের মধ্যে সিলেটের সবচেয়ে বেশি। প্রথম সিলেট থেকেই ‘হিজরত’ করা শুরু হয়। দল বেঁধে তরুণ-যুবকদের এই ঘর ছাড়ার পেছনে মূল পরিকল্পনাকারী (মাস্টারমাইন্ড) ছিলেন রাফাত সাদিক।
তিনি আরও বলেন, রাফাত সাদিক একটি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ইন্টার্নি করছিলেন। ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার তানিম, আনবির ও জাহিদের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে, সিলেট থেকে যারাই ‘হিজরত’ করেছেন, নতুন করে জঙ্গিবাদে দীক্ষা নিয়েছেন, তার নেপথ্য ব্যক্তি ছিলেন রাফাত সাদিক।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, রাফাতের নেতৃত্বেই ২০২১ সালের জুন মাসে ১১ যুবক সিলেট থেকে ‘হিজরত’ করেন। তখন তা বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। তারা বান্দরবানে গিয়ে কোনো কারণে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় সাত দিন পর আবার সিলেটে ফিরে আসেন। কিন্তু তারা জঙ্গি তৎপরতা বন্ধ রাখেননি।
সিটিটিসি কর্মকর্তাদের ভাষ্য, রাফাত সাদিক দীর্ঘদিন ধরে সিলেট অঞ্চলের ধর্মভীরু যুবকদের জিহাদ ও জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ, প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। কোরআন প্রশিক্ষণের আড়ালে জঙ্গিবাদের দীক্ষা দিচ্ছিলেন।
রাফাত সাদিকসহ এই জঙ্গি সংগঠনের লোকজন জিহাদে উদ্বুদ্ধ বেশ কয়েকজন যুবককে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছেন বলে জানান সিটিটিসি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন,‘প্রশিক্ষণ থেকে তারা কী সক্ষমতা অর্জনে করেছেন, তা-ও যাচাই করেছে। আমরা সেই বোমা বানানোর কারিগরকে শনাক্ত করেছি। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
আসাদুজ্জামান বলেন, হিজরত করতে প্রস্তুত সিলেট অঞ্চলের আরও বেশ কয়েকজন যুবককে আমরা শনাক্ত করেছি। হিজরতের আগেই আমরা মাস্টারমাইন্ড রাফাতকে গ্রেপ্তার করেছি। তাকে রিমান্ডে চেয়ে বিজ্ঞ আদালতে পাঠিয়েছি। রিমান্ডে পেলে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব, সংগঠনের ভব্যিষৎ পরিকল্পনা ও সিলেটকেন্দ্রিক তাদের পরিকল্পনা জানতে পারব।
রাফাতের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী বা ইসলামী ছাত্রশিবিরের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, রাফাত একসময় শিবির করেছেন। তবে তিনি কী ধরনের নেতা ছিলেন, সেটা জানা যায়নি। বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে তার যে গোপন যোগাযোগ, তা খতিয়ে দেখছি।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *