মেলবোর্নে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ট্রফি নিয়ে ফটোসেশনে দুই অধিনায়ক বাবর আজম ও জস বাটলার। ছবি : আইসিসি
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!প্রেরণা সোনালি অতীত
স্পোর্টস ডেস্ক :: পাশ দিয়ে কেউ হেঁটে যাচ্ছেন তো ক্ষণিকের জন্য জায়গাটায় দাঁড়িয়েও পড়ছেন। পকেট থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেরিয়ে পড়ছে মোবাইল ফোনও। অন্য কাউকে নিজের ছবি তুলে দেওয়ার অনুরোধ করছেন, নয়তো নিজেই ধরে রাখছেন স্মৃতি। এমসিজির দুই আর তিন নম্বর গেটের মাঝামাঝি যে জায়গাটায় এসে দলে দলে মানুষ থমকে যাচ্ছিলেন, সেখানেই দেখা মিলছে বল ডেলিভারি দেওয়ার ঠিক আগমুহূর্তের শেন ওয়ার্নের।
রক্তমাংসের ওয়ার্নকে সামনে পাওয়ার সুযোগ আর কোনো দিনই আসবে না। তবু ব্রোঞ্জের ম্যুরালে জীবন্ত হয়ে আছেন এই লেগস্পিন শিল্পী। তাঁর সামনে এসে হাঁটু মুড়ে পুরো অবয়ব নিজের মোবাইল ফোনে ধরার চেষ্টায় থাকা একজনকে অবশ্য সাধারণ জনতার কাতারে ফেলার সুযোগ নেই। অনুশীলনের জন্য ইয়ারা পার্ক পেরিয়ে এমসিজিতে ঢোকার আগে ওয়ার্নকে পেয়ে সমান রোমাঞ্চিত পল কলিংউডের গায়েও যে বিশ্বজয়ী অধিনায়কের তকমা।
২০১০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি-টোয়েন্টির তৃতীয় বিশ্ব আসরের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে নেতৃত্ব দেওয়া অলরাউন্ডার এখন দলটির সহকারী কোচও। এক যুগ পর আবার যখন এই সংস্করণে ইংলিশরা শ্রেষ্ঠত্বের দুয়ারে এসে দাঁড়িয়েছে, তখন তাদের ড্রেসিংরুমকে তাতিয়ে দেওয়ার মতো বিশ্বজয়ী একাই নন কলিংউড। চূড়ান্ত সাফল্যে তিনি দূর অতীতের একমাত্র প্রতিনিধি হয়ে থাকলে কাছাকাছি সময়ের মধ্যে আছেন আরো অনেকেই। জস বাটলার, বেন স্টোকস থেকে শুরু করে আরো কতজন!
মাত্র তিন বছর আগেই তাঁরা ৪৪ বছরের খরা কাটিয়ে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন ইংল্যান্ডকে। সাফল্যের টাটকা স্মৃতি যখন বাটলারদের অফুরন্ত প্রেরণার উৎস, তখন শিরোপার মহামঞ্চে আজ পাকিস্তানকেও পিঠ চাপড়ে দিচ্ছে সোনালি অতীত। ২০০৯ সালে তারাও একবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে। অবশ্য সেই দলের কেউই এবার কোনোভাবে যুক্ত নন পাকিস্তান দলের সঙ্গে। আজ বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় শুরু হতে যাওয়া ফাইনালের আগের দিন তা নিয়ে কোনো টুঁ শব্দও শোনা গেল না।
কয়েক দিন ধরে যা নিয়ে চর্চা হচ্ছে, তা শুধুই ১৯৯২ সালে ইমরান খানের ‘কর্নার্ড টাইগার্স’-এর অলৌকিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। ৩০ বছর আগের যে গল্পের সঙ্গে মিল রেখে মেলবোর্নের ঠিকানায় এসে পৌঁছেছে বাবর আজমের দলও। তিন দশকের ব্যবধানে শুরুতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার একই ভাগ্য পাকিস্তানের। হারতে হারতে বিদায়ের কানাগলি দেখে ফেলার পর টানা জয়ের বীরত্বে দুই সময়ের দুই দলই উঠে আসে সাফল্যের রাজপথে। সেমিফাইনালে সেই নিউজিল্যান্ড, দুবারই তাদের হারিয়ে মেলবোর্নের ফাইনালে সেই ইংল্যান্ডের সঙ্গেই দেখা। ইমরানের পাকিস্তান ট্রফি উঁচিয়ে ধরলেও বাবর আজমের এখনো শেষ বাধাটা ’৯২-র মতো করে পার হওয়াটা বাকি।
এই শেষ পথটুকুও পাড়ি দেওয়ার বিশ্বাসের পালে হাওয়া দিতে তাঁদের সঙ্গে দেখা করে গেছেন ইমরানের বিশ্বজয়ী দলের অপরিহার্য সদস্য রমিজ রাজাও। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) বর্তমান চেয়ারম্যানের ‘মোটিভেশনাল স্পিচ’ও যে টনিকের মতোই কাজ করছে, গতকাল এমসিজির অলিম্পিক স্ট্যান্ডে হওয়া সংবাদ সম্মেলনে তা বলতে গিয়ে আলোড়িত বাবরও, ‘‘যখন বোর্ডের চেয়ারম্যান আসেন এবং দলকে বিশ্বাস জোগান, তখন আমাদের আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে যায়। চেয়ারম্যান এসে তাঁর ১৯৯২ বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন এবং ভরসা জুগিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বাস রাখো এবং রিল্যাক্সড থাকো। নিজের খেলাটা খেলো। ’ তাঁর কথায় আমাদের বিশ্বাস বেড়ে গেছে। ’’
টেস্ট ক্রিকেটের জন্মস্থানে তাই আজ দুই দলেরই সঙ্গী হচ্ছে ইতিহাস। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ওয়ানডে ক্রিকেটের সুদীর্ঘ ইতিহাসও। ১৯৭১ সালে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড টেস্ট ম্যাচের প্রথম তিন দিনই বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করে আয়োজকরা ঠিক করেছিলেন ৪০ ওভারের এক দিনের ম্যাচ হবে। একেকটি ওভার হবে ৮ বলের। সেই শুরুর পর দিন দিন বাজার পেয়েছে ওয়ানডে ক্রিকেট। আজ যখন রমরমায় ওয়ানডেকেও ছাড়িয়ে গিয়ে আরো জমিয়ে বসার অপেক্ষায় টি-টোয়েন্টি, তখন অল্প সময়ের এই খেলার বিশ্বকাপ ফাইনালও কিনা ভুগছে বৃষ্টির আশঙ্কায়।
অস্ট্রেলিয়ার সরকারি আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস বলছে, রবিবার বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু হতে যাওয়া ম্যাচের সময়ও হতে পারে বৃষ্টি। আশা বলতে, পূর্বাভাস ঘন ঘন বদলায়। বদলে না গেলে কী হবে, তা নিয়েও চলছে নড়াচড়া। ফাইনালের জন্য রিজার্ভ ডে যদিও রাখা আছে। তবে সোমবারও বৃষ্টি না হওয়ার নিশ্চয়তা নেই। তবে আইসিসি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, অন্তত ১০ ওভারের ম্যাচ হলেও রবিবারই শিরোপার নিষ্পত্তি করে ফেলার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে তাদের। সম্ভব না হলে খেলা গড়াবে পরের দিনে। রবিবার যেখানে খেলা থামবে, সোমবার সেখান থেকেই খেলা শুরু হবে স্থানীয় সময় দুপুর ৩টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা)।
যদিও দুই অধিনায়কের কেউই বৃষ্টি নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী হলেন না। যেটিতে তাঁদের হাত নেই, সেটি নিয়ে পড়ে না থেকে তাঁরা শিরোপার ছক কষায়ই বরং বেশি মনোযোগী। বাটলার যেমন অখণ্ড মনোযোগে নিকট অতীতের সাফল্যে খুঁজে বেড়াচ্ছেন আরেকটি শিরোপার রসদও, ‘দল হিসেবে অনেক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই আমরা গেছি। কাজে লাগে সব কিছুই। সেটি বিশ্বকাপের ফাইনালই হোক বা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ফাইনাল। ২০১৯-এর ফাইনালও আমাদের সুবিধা দেবে বলেই বিশ্বাস। ’
’৯২-র ফাইনালের প্রেরণার সঙ্গে বাবরদের পাশে আছে এই আসরে খেলা তাঁদের শেষ কয়েকটি ম্যাচও। টানা জিতে শিরোপার মঞ্চে আসা অধিনায়ক বলছিলেন, ‘গত তিন-চার ম্যাচে দল হিসেবে আমরা ভালো করেছি। সেই বিশ্বাসই আমাদের সঙ্গী। ভালো করার বিশ্বাস আছে এবং ফাইনালেও আমরা তা করতে চাই। ’
ওয়ার্নের অজস্র কীর্তিতে ধন্য এই মাঠে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মিলবে অবশ্য এক দলেরই। এর আগে দুই দলই যেন একবিন্দুতে। যাদের বর্তমান রাঙিয়ে নেওয়ার স্বপ্নে আছে সোনালি অতীতের প্রেরণাও!

