মনজু বিজয় চৌধুরী: মৌলভীবাজার শহরে হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (র.) উরুস উপলক্ষে আয়োজিত মেলায় দেখা যায় এই বাঁশিওয়ালাকে।এই মেলাই হয়তো আমার শেষ মেলা। বয়স তো অনেক হলো। আর কখনও মেলায় মেলায় ঘুরেফিরে বাঁশি বাজাতে পারবো কিনা জানি না—দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন বাঁশিওয়ালা ফজলুর রহমান (৭৫)।আপনমনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন তিনি। তাকে ঘিরে রয়েছেন বেশ কয়েকজন আগন্তুক। মেলার চারিদিকে মানুষজনের জটলা, চলছে দোকানে দোকানে কেনাবেচা। আছে হই-হুল্লোড়। এসব ভেত করে কানে আসছে তার বাঁশির মায়াবী সুর। প্রবীণ এই মানুষটি বাঁশের বাঁশি নিজে তৈরি করেন। সেই বাঁশি বাজিয়ে গ্রাম থেকে শহর, শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামের পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়ান আর বিক্রি করেন।ফজলুর রহমান জানান, কিশোরগঞ্জের ভৈরবে তার বাড়ি। ১৯৬২ সালে চৌদ্দ বৎসর বয়সে শিখেছিলেন বাঁশি বাজানো। ’৬৯ সালে ডেমরার একটি জুট মিলে চাকরি হয়। চাকরিরত অবস্থায় বাঁশের বাঁশি তৈরি করে বিক্রি করতেন। তখনও বাজাতেন বাঁশি। স্ত্রী, ৪ ছেলে ১ মেয়ে নিয়ে তার পরিবার। এক ছেলে বিদেশ থাকে। ছোট ছেলে প্রতিবন্ধী। অন্য ছেলেদের ও মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ২০০৬ সালে চাকরি থেকে অবসরে আসেন। তারপর বাঁশের বাঁশিই শখ, নেশা আর পেশার সঙ্গে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন তিনি।চাকরি থেকে অবসরের পর নিজে বাঁশের বাঁশি তৈরি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত মেলায় বাঁশি বাজান আর বিক্রি করেন। গত দুই বৎসর ধরে মৌলভীবাজারের এই মেলায় আসছেন। প্রতি পিস বাঁশি ২০ টাকা থেকে শুরু করে আকার ও নকশা অনুযায়ী ১৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন।বাঁশিওয়ালা বলেন, ছেলেরা সংসার চালায়, এখন কোনো অভাব অনটন নেই। তারপরও বাঁশি বাজানোর নেশায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াই। এখন বাঁশি তৈরি করি না, পাইকারি কিনে অল্প লাভেই বিক্রি করি। ছেলেরা মেলায় আসতে দেয় না, লুকিয়ে চলে আসি।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!আলাপের মাঝে একজন দুজন করে ক্রেতারা আসেন, বাঁশি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করেন। তাদের একজন ফৌজি আক্তার। তিনি বলেন, গতবার উনার কাছ থেকে বাচ্চার জন্য একটি বাঁশি কিনেছিলাম, এবারও ৪০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি নিলাম।
বাবার সঙ্গে মেলায় এসেছে স্কুলে পড়ুয়া ভাইবোন জিত ও পারিজাত। তারা বলে, বাঁশি বাজানো শিখবো, তাই দুটি বাঁশি ৬০ টাকা দিয়ে কিনেছি।এই মেলায় বাঁশি বিক্রি কেমন হচ্ছে এমন প্রশ্নে বাঁশিওয়ালা ফজলুর রহমান জানান, এখন আর আগের মতো বাঁশের বাঁশি বিক্রি হয় না। যান্ত্রিক যুগে এই বাঁশির সুর কেউ শুনতে চায় না, কিনতেই চায় না। তবে মাঝেমধ্যে ছোট্ট বাচ্চাদের জন্য কেউ কেউ বাঁশি কিনে নেন।
আক্ষেপের সুরে ফজলুর রহমান বলেন, জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে বাঁশি বাজাতে গিয়ে, শ্বাস নিতে এখন বড় কষ্ট হয়। কিন্তু শখের কাছে শারীরিক যন্ত্রণা যে হার মানে না।
শুধুমাত্র শরীরকে সুস্থ ও মানসিক প্রশান্তির জন্য এই বাঁশিকে আমরণ আগলে রাখতে চান বলে জানান তিনি।

