ডায়াল সিলেট ডেস্ক     বাড়ি ভর্তি গাছগাছালি। গাছের শাখা-প্রশাখায় হরেক রকমের হাজারও পাখির বিচরণ। ধবল বক আর কালো রঙের পানকৌড়ির সরব উপস্থিতি জানান দেয় গাছে গাছে সংসার পেতেছে তারা। চারদিকে শুধু পাখি আর পাখি। তারা ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়াচ্ছে, খেলছে নিশ্চিন্ত মনে। এ যেন পাখিদের আপন ঠিকানা হয়ে উঠেছে হাওড়পাড়ের বাড়িটি।
এ চিত্রটি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের কাউয়াদীঘি হাওরপাড়ের বিরইমাবাদ গ্রামের নুরুল ইসলাম পঙ্কি মিয়ার বাড়ির।
সবুজ শ্যামল জীববৈচিত্রে ভরা বিশাল জলাধার কাউয়াদিঘি হাওড় এলাকার পঙ্কি মিয়ার বাড়িটি হাজারও পাখির নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে। হাওড়ের বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা এখানে গড়ে তুলেছে তাদের আপন ঠিকানা।
শুক্রবার ১০ ফেব্রুয়ারি পঙ্কি মিয়ার বাড়িতে গিয়ে শোনা যায় হরেক রকম পাখির ডাক। তখন সন্ধ্যা নামছিল। খাবার আহরণ শেষে, আশ-পাশের হাওর-জলাশয় থেকে আপন ঠিকানায় ফিরছিল পাখিদের ঝাঁক। সবচেয়ে বেশি দেখা মেলে সাদা বক আর পানকৌড়ির। আছে ঘুঘু, শালিক, শামুকখোলসহ অসংখ্য পাখি।
হাওরঘেঁষা পঙ্কি মিয়ার বাড়িটি যেন এক পাখির রাজ্য। আম, জাম, কাঁঠাল, নারকেল, সুপারি গাছ আর বাঁশঝাড় জুড়ে চেনা-অচেনা হাজারও পাখির বাস সেখানে। ওই পাখিদের কলতানে মুখরিত এ বাড়িতে আসলে যে কারও মনে আসবে প্রশান্তি।
বাড়ির উঠোনে দেখা হয়, গৃহকর্তা নুরুল ইসলাম পঙ্কি ও গৃহকর্ত্রী হোসনে আরা বেগমের সঙ্গে।
তারা জানান, পাখিগুলোকে তারা তাদের পরিবারের সদস্যের মতোই ভালোবাসেন। প্রতিদিন দলবেঁধে আসা এসব পাখির ডানার শব্দ আর কলতানে তাদের ঘুম ভাঙে। পাখিরা ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে উড়ে যায় খাবারের সন্ধানে। তারা ফিরে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকেন এই দম্পতি। বিকেল হলেই ছোট ছোট দলে এই পাখিরা উড়ে আসতে থাকে বাড়িতে। এখন এ বাড়ির প্রতিটি সন্ধ্যা নামে সাদা বক ও কালো পানকৌড়ির কলতানে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!


পঙ্কি মিয়া  বলেন, ১৫ বছর আগে কয়েকটি পানকৌড়ি, শামুকখোল প্রথমে তার বাড়িতে বাসা বাঁধে। তারপর থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পাখির সংখ্যা। এভাবেই এখন বাড়িটিতে ঠাঁই নিয়েছে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক পাখি।
তিনি বলেন, আমার বাড়িতে সারা বছরই বক, পানকৌড়ি, ঘুঘু, শালিক, শামুকখোলসহ নাম না-জানা অসংখ্য পাখি থাকে। তবে পৌষের শেষে পাখির সংখ্যা বাড়তে থাকে যা আষাঢ় মাস পর্যন্ত চলতে থাকে। এরই মধ্যে তারা ডিম দেয়, বাচ্চা ফোটায়। বর্ষা শুরু হলে বাচ্চাসহ মা পাখিরা বাড়ি ছেড়ে হাওড়ে পাড়ি জমায়। তবে ঘুঘু, শালিকসহ অন্যসব পাখি বাড়িতেই থেকে যায়।
পাখির চঞ্চল ওড়াউড়ি মুগ্ধ করে যেকোনো মানুষকে। তাই তো প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে পাখি প্রেমীরা।
পাখি দেখতে আসা তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী সামির আহমদ জামি বলে, আমি চাচার সঙ্গে পাখি দেখতে এসেছি। পাখি দেখতে ভালো লাগে। আবারও আসব পাখি দেখতে।
পাখি প্রেমিক মো. আমির বলেন, যান্ত্রিক কোলাহল ছেড়ে, প্রকৃতির মাঝে পাখিদের কিচিরমিচির অন্য এক আবহ সৃষ্টি হয়। যা মনকে প্রশান্তি দেয়, তাই এখানে আসা।
পাখির বসতবাড়ি সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে হাওড় রক্ষা সংগ্রাম কমিটি মৌলভীবাজার সদর শাখার সম্পাদক রাজন আহমদ বলেন, হাওড়াঞ্চলের বসতবাড়িতে যারা পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছেন তাদেরকে যদি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ পুরস্কৃত করেন, তবে ভবিষ্যতে যাদের বসতবাড়িতে পাখি যাবে তারাও পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় দিতে উৎসাহিত হবেন।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, পাখিরা নিজেদের যেখানে নিরাপদ মনে করবে তারা সেখানেই যাবে। যারা পাখিদের ভালবেসে নিরাপদ বসবাসের সুযোগ দিয়েছেন তারা পরিবেশ ও পাখিবান্ধব মানুষ। সেই মহৎ ব্যক্তিদের জন্য আমাদের কিছু করার আছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *