ছিল পিছুটান, তবু বাবার আহ্বান এড়াতে পারেননি সুলেমান

 

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: টাইটানিক পর্যটনে যাওয়া ডুবোজাহাজ টাইটানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। চার দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার ডুবোজাহাজটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। এদিন প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে পাঁচ আরোহীর মৃত্যুর কথা জানানো হয়। গত রোববার পাঁচ আরোহীসহ সাবমেরিনটি পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওশান গেট।

 

যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের আশপাশে টাইটান সাবমেরিনের বড় পাঁচটি টুকরোর সন্ধান পাওয়া গেছে। সাবমেরিনটি বিস্ফোরিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কখন সেটি বিস্ফোরিত হয়েছে, সে বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।

 

তবে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর শীর্ষ এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, গত রোববার ওই সাবমেরিন নিখোঁজ হওয়ার কিছু পরই অন্তর্মুখী বিস্ফোরণ হয়েছিল। একটি গোপন অ্যাকুস্টিক মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে বিষয়টি রেকর্ড করা হয়।

 

ডুবন্ত টাইটানিকের কাছেই পাওয়া গেল ধ্বংসাবশেষ, টাইটান সন্দেহ উদ্ধারকারীদেরডুবন্ত টাইটানিকের কাছেই পাওয়া গেল ধ্বংসাবশেষ, টাইটান সন্দেহ উদ্ধারকারীদের

 

এদিকে, রোববার থেকে কোনো খোঁজ না থাকার পরে হারানো সাবমেরিনের খোঁজে নেমেছিল রোবটচালিত জলযান ‘রোভ’। তারাই সাবমেরিন টাইটানের খোঁজ পায় শেষমেশ। তবে ততক্ষণে সব শেষ। কোস্ট গার্ডের শীর্ষ আধিকারিক জন মাগারের কথায়, ‘আমরা এখনো কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। কল্পনাতীত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কাজ হচ্ছে।’

 

ভূপৃষ্ঠের প্রায় দুই মাইল নিচে সমুদ্রের তলদেশে চলছে অভিযান। রোবটচালিত জলযান রোভ ওই ধ্বংসাবশেষস্থলের চারপাশে ঘুরছে এখনো। রয়েছে আরও ৯টি জাহাজ। আরও বিস্তারিত অনুসন্ধানের কাজ চলছে। মেডিকেল টিম, ইঞ্জিনিয়াররাও রয়েছেন। বিপদের ঝুঁকি নিয়ে এই উদ্ধার অভিযানে শামিল তারাও।

 

দুর্ঘটনার পর থেকেই নানা প্রশ্ন উঠেছে সমস্ত মহলে। কী করে আস্ত একটা সাবমেরিন নিখোঁজ হলো, কী করেই বা তা ধ্বংস হলো, কেমন করে ঘটল গোটা বিষয়টা—বিস্ময়ে হতবাক সবাই।

 

জন মাগার জানিয়েছেন, এখনই এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সহজ নয়। যেমন তথ্য মিলবে, তেমনই তাঁরা সব জানতে পারবেন।

 

এদিন সাবনেরিনের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের পাশাপাশি পাঁচ অভিযাত্রীর মৃত্যুর কথাও জানিয়েছে মার্কিন কোস্ট গার্ড। সাবমেরিনের ভেতরে থাকা অবস্থাতেই দম বন্ধ হয়ে মারা যান পাঁচজনই। তাঁদের পরিবারকে গভীর সমবেদনা জানিয়েছে তারা। তবে টাইটানের ভেতরে থাকা ওই পাঁচ অভিযাত্রীর দেহ উদ্ধার করা সম্ভব হবে কি না, তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না বলে জানিয়েছেন তারা।

 

ওশানগেটের তরফেও এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘আমাদের সিইও স্টকটন রাশ, শাহজাদা দাউদ, তাঁর ছেলে সুলেমান দাউদ, হামিশ হার্ডিং, পল নারজিওলেটকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। এ কথা বিশ্বাস করা কঠিন! তাঁরা দুঃসাহসিক অভিযাত্রী ছিলেন, যাঁরা গভীর সমুদ্রে পৌঁছেছিলেন অ্যাডভেঞ্চারের হাত ধরে। এই কঠিন সময়ে তাঁদের পরিবারের সমব্যথী আমরা।’

 

ছিল পিছুটান, তবু বাবার আহ্বান এড়াতে পারেননি সুলেমান

 

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে নির্মম পরিণতির শিকার পর্যটক দলটির সবচেয়ে কম বয়সী সদস্য ছিলেন সুলেমান। তাঁর বাবা শাহজাদা দাউদ ছিলেন পাকিস্তানের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম। এবারের বাবা দিবসকে স্মরণীয় করে রাখতেই পিতা-পুত্র রওনা হয়েছিলেন সমুদ্রের তলদেশে, কিংবদন্তির টাইটানিক স্বচক্ষে দেখতে।

 

তবে এই অভিযানকে সামনে রেখে ১৯ বছর বয়সী সুলেমানের মধ্যে কিছুটা ভীতি কাজ করছিল বলে দাবি করেছেন তাঁর ফুফু আজমেহ দাউদ। চিকিৎসাজনিত কারণে বর্তমানে তিনি নেদারল্যান্ডসের বসবাস করছেন।

 

মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আজমেহ জানান, সুলেমানের মধ্যে পিছুটান থাকলেও ছেলেকে নিয়ে একটি স্মরণীয় মুহূর্তের সাক্ষী হতে চেয়েছেন তাঁর প্রিয় বাবা শাহজাদা দাউদ। বাবা দিবসের মতো একটি বিশেষ দিনে পিতা-পুত্রের বন্ধনকে আরও জোরালো করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য।

 

বাবাকে খুশি করতেই শেষ পর্যন্ত টাইটানিক দেখার মিশনে যেতে রাজি হন সুলেমান।

 

টাইটান ডুবোযানটির ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারের পর এর মধ্যে থাকা পাঁচ আরোহীর সবাই নিশ্চিতভাবে মারা গেছেন বলে ঘোষণা করে উদ্ধারকারী দল। তবে বিষয়টিকে এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না শাহজাদা দাউদের বোন আজমেহ। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে যেন আমি কোনো বাজে সিনেমা দেখছি।’

 

আজমেহ জানান, ভাই এবং ভাজিতার জন্য তাঁর হৃদয় ভেঙে গেলেও তিনি মনকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন এই ভেবে যে—বিস্ফোরণের ফলে মুহূর্তের মধ্যেই তাঁদের জীবনপ্রদীপ নিভে গেছে। হয়তো তাঁরা কোনো ব্যথাই অনুভব করার সময়ই পাননি।

 

নিজের বিলিয়নিয়ার ভাইকে ‘দেবদূত’ আখ্যা দিয়ে আজমেহ জানান, অনেক কম বয়স থেকেই টাইটানিক জাহাজের প্রতি একটি মোহ কাজ করত শাহজাদা দাউদের মধ্যে। তাঁর ধ্যান-জ্ঞানে ছিল টাইটানিক। এছাড়া অসাধারণ কোনো উপায়ে নিজের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়ন করতে চাইতেন তিনি।

 

ভাই শাহজাদা সম্পর্কে আজমেহ বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত কিংবদন্তি টাইটানিকের একটি অংশ হয়ে গেল সে।’

 

পাকিস্তানের প্রখ্যাত পরিবারের সদস্য শাহজাদা দাউদ তাঁর ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে যুক্তরাজ্যে বসবাস করতেন। সুলেমান ছাড়াও এলিনা নামে তাঁর এক কন্যাসন্তানও আছেন।

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *