অভিনেতা আহমেদ শরীফঢালিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা জসীম জীবনের শেষ দিকে শুটিং নিয়ে ছিলেন ব্যাপক ব্যস্ত। ঠিক সেই সময়ই হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। চিকিৎসকের পরামর্শে দ্রুত হার্টের অপারেশন করাতে হয়। অপারেশনের পর পুরো বিশ্রামে থাকার কথা থাকলেও মাত্র ২০ দিন পরই তিনি ফিরে দাঁড়ান ক্যামেরার সামনে। বিষয়টি শুনে পরিচালক থেকে সহশিল্পী—সবার মধ্যেই মিশে ছিল বিস্ময় আর শঙ্কা।
ফিরেই যে দৃশ্যে অংশ নেন তা ছিল অ্যাকশননির্ভর ক্লাইম্যাক্স। মারপিটের দৃশ্য হওয়ায় ইউনিটের সবাই চেয়েছিলেন শান্ত-ধীরে শুটিং করতে। কিন্তু শিডিউল ও নিজের কাজের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই জসীম সিদ্ধান্ত নেন, পূর্ণ শক্তিতেই শুটিং করবেন।
সম্প্রতি ‘ঠিকানা’ অনুষ্ঠানের এক আলাপে সেই স্মৃতি তুলে ধরেন খলনায়ক অভিনেতা আহমেদ শরীফ। তিনি জানান, “জসীমের অপারেশন হয়েছে—এটা মাথায় ঘুরছিল সব সময়। আমি ভয় পাচ্ছিলাম কোথাও একটু বেশি চাপ পড়ে যায় কি না। কিন্তু জসীম বললেন, আগের মতোই ফাইট করতে হবে, কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না।”
প্রথম দুই–তিনটা ঘুষির পরই মন খুলে অভিনয় করতে পারছিলেন না আহমেদ শরীফ। ভয়ে এক পর্যায়ে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক হালকা ঘুষি মারেন তিনি। ঘুষি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জসীম শট থামিয়ে বলেন, “এভাবে হলে হবে না।”
এই ঘটনায় খানিকটা অস্বস্তিতে পড়েন আহমেদ শরীফ। তিনি ভাবছিলেন ঘুষি বেশি লেগে গেছে হয়তো। কিন্তু উল্টো জসীম কাছে এসে জানান, ঘুষিটা এতই আস্তে ছিল যে তার মনে হয়েছে ‘হাওয়াও লাগেনি’। এরপরই দুষ্টুমি ভরা ভঙ্গিতে বলেন, “আপনার শুটিং মুড নেই নাকি? হলে প্যাকআপ করে দিই!”
জসীমের সেই কথাতেই বোঝা যায় সিনেমার প্রতি তাঁর নিবেদন কত গভীর ছিল। অপারেশনের বিষয়টি ভুলে গিয়ে সহশিল্পীকে বলেন, “আগের মতোই মারবেন। শুটিংয়ে ছাড় দেওয়া চলবে না।” জসীমের দৃঢ়তায় স্বাভাবিক ফাইটিং শুরু করেন আহমেদ শরীফ। পরে জসীম হাসতে হাসতে বলেন, “শ্বশুর, এখন ঠিক আছে।”
ঢালিউডে নায়ক ও খলনায়কের ভিন্ন দুই পথ পাড়ি দিলেও দুজনের জুটি দর্শকদের কাছে সবসময়ই ছিল জনপ্রিয়। ‘ঠিকানা’ আয়োজনে এই স্মৃতিচারণার সময় উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা জায়েদ খান।