৫ দফা দাবীতে সিলেটে আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করেছে ৬টি পরিবহন শ্রমিক সংগঠন। এদিকে আগামীকাল বুধবার থেকে প্রিলি. টু মাস্টার্স ১ম পর্ব এবং বৃহস্পতিবার থেকে এসএসসি সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষার আগ মুহুর্তে পরিবহন ধর্মঘটের সংবাদে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ।
এদিকে ৫ দফা দাবীতে অনড় পরিবহন শ্রমিকেরা ধর্মঘট পালনের প্রস্তুতি নিয়েছে। মঙ্গলবার ভোর থেকে সিএনজি অটোরিক্সাসহ সকল প্রকার পরিবহণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এসএসসি পরীক্ষা সামনে রেখে এমন অযৌক্তিক ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। ধর্মঘট নিয়ে কোন বক্তব্য দিতে নারাজ সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। তারা প্রচলিত আইনের তাদের নিয়মিত অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে অঙ্গিকারাবদ্ধ।
জানা গেছে, ৫ দফা দাবীতে সিলেটের ৬টি রেজিস্ট্রার্ড শ্রমিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর হুমায়ুন রশিদ চত্তরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে একই দাবীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি পেশ করা হয়। স্মারকলিপির অনুলিপি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে প্রেরণ করা হয়। এরপরও তাদের দাবী না মানায় সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে মঙ্গলবার থেকে সিলেট জেলায় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ধর্মঘট সফল করতে সিলেট জেলা ট্রাক পিকাপ কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন, সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন, ইমা লেগুনা হিউম্যান হুলার শ্রমিক ইউনিয়ন, সিলেট জেলা অটো টেম্পু অটোরিকশা শ্রমিক জোট, সিলেট জেলা ট্যাংক লরি শ্রমিক ইউনিয়ন, সিলেট জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত পরিবহন শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে সোমবার এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সকল পর্যায়ের পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পরিষদের ৫ দফা দাবি হচ্ছে: সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার ও উপ কমিশনারের (ট্রাফিক) অপসারণ, ট্রাফিক পুলিশের হয়রানী, রেকার ও মাত্রাতিরিক্ত জরিমানা বন্ধ করা, সিলেটে শ্রম আদালতের প্রতিনিধি শ্রমিক লীগের নাম ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তারকারী নাজমুল আলম রোমেনকে প্রত্যাহার করা, উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে সিলেটের পাথর কোয়ারি খুলে দেয়া, ভাঙ্গাচোরা রাস্তাগুলোর দ্রুত সংস্কার, নতুন সিএনজি চালিত অটোরিকশা বিক্রি বন্ধ এবং বিক্রয়কৃত গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দেয়া, অনুমোদনহীন গাড়ি যেমন: অটো বাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ডাম্পিংকৃত গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা।
সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া আহমদ বলেন, আমাদের দাবীগুলো যৌক্তিক। আমরা নিয়মতান্ত্রিক ভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী চালিয়ে আসছি। কিন্তু প্রশাসন আমাদের দাবীগুলো বিবেচনায় না নিয়ে ধর্মঘটের দিকে ধাবিত করেছে। এর দায় প্রশাসনের। সিলেটে ট্রাফিক পুলিশ কি পরিমাণ হয়রানী করছে তা এক মাসে ২ কোটি টাকা জরিমানার হিসেব দেখলেই বুঝা যায়। যেসব আইনী মামলা আছে সেগুলো পুলিশ দিতে পারে। কিন্তু কিছু মামলা আছে পুলিশ ইচ্ছে করে দিয়ে থাকে। যেমন রেকার ও মাত্রাতিরিক্ত জরিমানা। একই কারণে এক গাড়ীকে টানা ২ দিন মামলা দেয়ার নজির অতীতে ছিলনা। সংশোধিত সড়ক পরিবহন আইনের পরিবর্তে আগের আইনে পুলিশ অতিউৎসাহী হয়ে মামলা দিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার থেকে এসএসসি ও বুধবার থেকে মাস্টার্স ১ম পর্ব পরীক্ষার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা হয়েছে পরে। আর আমাদের কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে অনেক আগে। তাই চাইলেও এখন কর্মসূচী প্রত্যাহার করা যাচ্ছেনা। তবে পরীক্ষার্থীদের বহনকারী যানবাহন ধর্মঘটের আওতামুক্ত থাকবে।
জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আকবর রাজন বলেন, পরিবহন ধর্মঘটে জনগনের চাইতে শ্রমিকদের ক্ষতি বেশী। কিন্তু এছাড়া আর কোন পথ খোলা না থাকায় চুড়ান্ত কর্মসূচী দিতে আমরা বাধ্য হয়েছি। আমাদের ৫ দফার দাবীর মধ্যে সবগুলো দাবী যৌক্তিক। পরিবহন শ্রমিকরা আন্দোলনে নামলেও পুলিশের মামলার মুখোমুখি সাধারণ মানুষও হয়ে থাকেন। পরিবহন শ্রমিকরা ছাড়াও সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত গাড়ীও পুলিশের মামলা হয়রানী থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। আমাদের দাবী না মানা পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাবো। প্রথমে সিলেট জেলা, এরপর সিলেট বিভাগ পর্যায়ক্রমে এই ধর্মঘট সারাদেশের পরিবহন শ্রমিকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে। আমরা আশা করি যতদ্রুত প্রশাসনের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে ততই মঙ্গল।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের আন্দোলন নিয়ে আমাদের কোন বক্তব্য নেই। তারা আমার এবং উপ কমিশনার (ট্রাফিক) এর অপসারন চায়। এই সিদ্ধান্ত সরকার নিবে। পুলিশ তার আইনী তৎপরতা চালিয়ে যেতে দায়বদ্ধ। আইন সবার জন্য সমান। সড়ক পরিবহন আইনের ব্যত্যয় হলে পরেই পুলিশ মামলা দিয়ে থাকে। যা মামলায় উল্লেখও থাকে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান বলেন, পরিবহন শ্রমিক সংগঠন নেতৃবৃন্দকে আমি বলেছি তাদের দাবীগুলো অযৌক্তিক। সামনে এসএসসি পরীক্ষা তাই এই মুহুর্তে এসব দাবীতে ধর্মঘট প্রত্যাহার করতে। এরপরও তারা যদি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে তাহলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, তাদের দাবীর মধ্যে কয়েকটি দাবী আছে যা প্রচলিত আইনের বিরোধী। সেগুলো কোনভাবেই মেনে নেয়া সম্ভব না।

