তালেবানের তাড়া খেয়ে কাবুল থেকে পালিয়েছে মার্কিন সেনারা! দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে, হাজার হাজার সৈন্যের ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়ে খালি হাতেই আফগানিস্তান থেকে ফিরতে হলো ‘মহাশক্তিধর’ আমেরিকাকে! মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার ১০০ দিনের মধ্যেই কাবুল দখল করে নিল তালেবান। আমেরিকা কেন তালেবানকে রুখতে পারল না-এ বিষয়ে নানা ব্যাখ্যা উঠে আসছে। আফগানিস্তানে ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটেনের, বিংশ শতাব্দীতে সোভিয়েত ইউনিয়নের কিংবা ভিয়েতনামে নিজেদের লজ্জাজনক পরাজয় থেকেও শিক্ষা নেয়নি আমেরিকা। কিন্তু ৮৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যে আফগান সেনাবাহিনী তৈরি ও প্রশিক্ষিত করা হয়েছিল, তারা কীভাবে এত সহজেই ভেঙে পড়ল? এর অন্যতম কারণ, আফগান সেনাবাহিনীর মনোবলের অভাব। বিশ্ব দেখেছে বছরের পর বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র আফগানদের বিষয়ে যেসব তথ্য দিয়েছে, সেগুলো ছিল অতিরঞ্জিত, অসম্পূর্ণ ও মিথ্যা। আফগানিস্তানে মার্কিন জেনারেলদের ব্যর্থ কৌশলগুলো এখন ইতিহাসের অংশ-যারা বলেছিলেন, সবকিছুই পরিকল্পনামাফিক চলছে। অন্যদিকে তালেবানরা বলেছিল, ‘ওদের হাতে রয়েছে ঘড়ি, আর আমাদের হাতে সময়।’

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

আমরা এখন দেখছি, পশ্চিমাসহ বলতে গেলে গোটা বিশ্বের মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীদের আফগান ও তালেবান প্রশ্নে ভাষা, শব্দচয়ন ও বিশ্লেষণ নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। এতদিন তাদের কাছে যারা ছিল তালেবান জঙ্গি, এখন তারাই হয়ে গেছে ‘তালেবান যোদ্ধা’। ২০১৮ সালে আফগানিস্তানের তোরাবোরা পাহাড় থেকে কাতারের দোহায় আলোচনার টেবিলে নিয়ে যাওয়া হয় তালেবানদের। তালেবান প্রতিনিধিরা ওয়াশিংটনেও আলোচনায় বসেছেন ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। গত কয়েক মাসে রাশিয়া, চীন, ইরান, তুরস্ক ও ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন তারা। ধীরে ধীরে জঙ্গিগোষ্ঠী থেকে তাদের রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার একটা ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনে ২০০১ সালে ক্ষমতা হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়া তালেবান গত ১৫ আগস্ট বিনা রক্তপাতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়। বাঁধভাঙা নদীর পানির মতোই অপ্রতিরোধ্য গতিতে সেখানে ঢুকে পড়ে তারা। পুরো আফগানিস্তান এখন তাদের দখলে। কাবুলে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদেরও নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা।

আমরা দেখছি, জাতিসংঘ এখন শুধু তালেবানকে নীতি শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তালেবানদের কী নীতি বা আদর্শ, সেটা এখনই দেখার বিষয় নয় বিশ্ব মোড়লদের, সেটা আফগান জনগণের ব্যাপার। ২০ বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন আফগানিস্তানে আগ্রাসন শুরু করে, তখনকার পরিস্থিতি আর বর্তমান পরিস্থিত এক নয়। এখন আফগানিস্তানের রাজনীতির সঙ্গে চীন, পাকিস্তান, ভারত, রাশিয়া, ইরান, কাতার ও তুরস্কের স্বার্থও যুক্ত হয়েছে। তালেবানদের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ, তাদের সশস্ত্র যোদ্ধাদের শান্ত ও নিরস্ত্র করা। বিদেশি সমর্থন আদায় এবং দেশকে যুদ্ধবিগ্রহ থেকে বের করে আধুনিক আফগানিস্তান নির্মাণ করা। তবে আধুনিক আফগানিস্তান গঠন নিয়ে তালেবানদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিতে পারে ।

মোহাম্মদ আবু নোমান : প্রাবন্ধিক

ডায়ালসিলেট/এম/এ/

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *