ডায়ালসিলেট ডেস্ক::জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নিয়ন্ত্রণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে গেলে তা রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত সামনের জাতীয় নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পরিকল্পনার অংশ। এই ইস্যুতে ইসির উচিত নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করা। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে আলোচনা না করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে ‘নগ্ন হামলা’ বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।  সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘সরকার কর্তৃক জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করার উদ্যোগ ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে অংশ নিয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এসব মন্তব্য করেন। রোববার সকালে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, গণতন্ত্র না থাকলে নাগরিকদের সরকার তোয়াক্কা করে না। ন্যূনতম সৌজন্যবোধ সরকারের উচ্চ পর্যায়েও পাই না। পরের নির্বাচন যে সত্যিকার অর্থে সুষ্ঠু হবে না এর প্রস্তুতিপর্ব সরকারের মাধ্যমে শুরু হয়েছে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

সামনের নির্বাচন যেন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং কোনো অনিয়ম যেন চোখে না ধরা দেয় সে ব্যবস্থা হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্রের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার মাধ্যমে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের বুঝা উচিত নিজেদের কোথায় নামিয়েছে। যে সরকারের জন্য ভোটারদের সাথে অন্যায় করেছে সে সরকার তাদের সঙ্গে কী আচরণ করছে, তাদের উপলব্ধি করা উচিত। ইসির হাতে ভোটার তালিকা থাকলেও অবাক হবো না। কারণ তাদের হাতে এটা থাকা না থাকায় কিছু যায় আসে না। নির্বাচন কমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের থেকে লেসার ইভিল। তারা বাজে নির্বাচন করলেও ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয়নি। অপরদিকে যারা জঘন্য নির্বাচনের এনফোর্সার ছিল তাদের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র গেলে তা হবে আশঙ্কাজনক। আগামী নির্বাচন আরও নিপীড়নমূলক হওয়ার পরিকল্পনা হতে পারে। পুলিশের কাছে তথ্য গেলে রাজনৈতিকভাবে তারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। পুলিশের কাছে দায়িত্ব দিলে হয়রানি বাড়বে। নির্বাচন কমিশনারদের প্রতি তিনি বলেন, সরকারের কাছে মিনমিন করে হলেও আপনারা প্রতিবাদ করেছেন। সরকার কড়াভাবে কিছু বললে আত্মসমর্পণ করবেন না আশা করি। আপনাদের কিছু মেরুদণ্ড আছে দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা আওয়ামী লীগেরই দাবি ছিল। পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়কের সময় ছবিযুক্ত ভোটার তালিকার কাজ সফলভাবে শুরু হয়। জাতীয় পরিচয়পত্রের নিয়ন্ত্রণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে গেলে ইসির মাঠ পর্যায়ের দপ্তরগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে দিতে হবে। আর ইসির সঙ্গে আলোচনা করে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে ইসিকে নিচু করা হচ্ছে। সাংবাদিক সোহরাব হোসেন বলেন, সরকার নির্বাচন কমিশনকে অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের বাইরে কিছু মনে করে না। নির্বাচন কমিশনও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে পছন্দ করে না। তারা সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। স্বাধীনভাবে অনুগত প্রতিষ্ঠানকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বিষয়ে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করেনি সরকার। জাতীয় পরিচয়পত্রের নিয়ন্ত্রণ ইসির কাছ থেকে কেড়ে নেয়াকে ‘নগ্ন হামলা’ উল্লেখ করে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ডেটাবেজ সরকারের নিয়ন্ত্রণে গেলে নিজেদের পছন্দের লোককে যুক্ত করবে, অপছন্দের লোককে বাদ দেবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে গেলে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা আসবে। দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হবে। ড. মজুমদার আরও বলেন, আগামী নির্বাচন পুরোপুরি ইভিএমের মাধ্যমে হবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত। আমরা দেখেছি, ইভিএমে ফল নিয়ন্ত্রণ করা যায়। চট্টগ্রামে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুইবার ফল ঘোষণা হয়েছে আমরা দেখেছি। জাতীয় পরিচয়পত্র সরকারের নিয়ন্ত্রণে গেলে তা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। মধ্যরাতের ভোটে নির্বাচিত সরকারের পক্ষে যে কোনো কিছু করা সম্ভব বলেও আশংকা প্রকাশ করেন তিনি। সংলাপে সুজন-সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটি এম শামসুল হুদা, ড. হামিদা হোসেন, বিচারপতি এম এ মতিন, ড. তোফায়েল আহমেদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, বিশিষ্ট রাষ্ট্র বিজ্ঞানী  রওনক জাহান, সাবেক সচিব আব্দুল মন্ডল, ড. সি আর আবরার,  আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদসহ সুজন নেতৃবৃন্দ এবং বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ অংশ নেন।

এ/

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *