ডায়ালসিলেট ডেস্ক:;অভিযোগ ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের। আর এ অভিযোগ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে করেছেন ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা। অনেকে র‌্যাব’র কাছেও অভিযোগ করেছেন। যদিও যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি বলছেন, ১০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে ১১০ কোটি টাকা দিয়ে তিনি যাত্রা শুরু করেছিলেন। এসব টাকা দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ১৭টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীরা পাওয়ার কথা থাকলেও তাদের দেয়া হয়নি। এতেকরেই ক্ষুব্ধ হন বিনিয়োগকারীরা। কথা ছিল নির্দিষ্ট সময়ে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়া হবে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

কিন্তু দিনের পর দিন তাদের কোনো লভ্যাংশ না দিয়ে পুরো টাকাই আত্মসাৎ করে ফেলেন। আত্মসাৎ করা এসব টাকা বিনিয়োগ করেছেন ব্যক্তিগত বিভিন্ন ব্যবসায়। এছাড়া পাচার করেছেন বিদেশে। দিনের পর দিন লভ্যাংশ না পেয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা অফিসে ও কোম্পানি সংশ্লিষ্টদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বরং কোম্পানি কর্তাদের কাছ থেকে লাঞ্ছনা বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। উপায়ান্তর না পেয়ে ভুক্তভোগীরা মামলা করেন। পরে শুক্রবার ভোররাতে র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০ এর একটি দল রাজধানীর শাহ্বাগ এলাকার তোপখানা থেকে অভিযুক্ত কোম্পানি এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান রাগীব আহসান ও তার সহযোগী আবুল বাশার খানকে গ্রেপ্তার করে। রাগীবের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়া শতাধিক ভুক্তভোগী রাগীবের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে অভিযোগ করেছেন।

গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এসব তথ্য জানিয়ে র‌্যাব’র মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রোববার রাজধানীতে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন রাগীবের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা। এছাড়া অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় সাম্প্রতিক সময়ে ভুক্তভোগীরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, পিরোজপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। সে সময় গ্রাহকরা বলেন, লক্ষাধিক গ্রাহক প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ওই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। ভুক্তভোগী অনেকে র‌্যাব’র কাছে সরাসরি অভিযোগ করলে র‌্যাব ছায়া তদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাগীব দাবি করেছেন, ২০০৮ সালে দশ হাজার গ্রাহককে তার কোম্পানিতে যুক্ত করেন। আর ১৭টি প্রতিষ্ঠান গড়ে গ্রাহকের কাছ থেকে ১১০ কোটি টাকা তিনি সংগ্রহ করেছেন। এই টাকা তিনি গ্রাহককে দেননি।

মঈন বলেন, রাগীব ১৯৮৬ সালে পিরোজপুরের একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯৯৬-১৯৯৯ পর্যন্ত হাটহাজারীর একটি মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস এবং ১৯৯৯-২০০০ পর্যন্ত খুলনার একটি মাদ্রাসা থেকে মুফতি শেষ করেন। পরে পিরোজপুরে একটি মাদ্রাসায় চাকরি শুরু করেন। ২০০৬-২০০৭ সালে ইমামতির পাশাপাশি ‘এহসান এস মাল্টিপারপাস’ নামে একটি এমএলএম কোম্পানিতে ৯০০ টাকা বেতনের চাকরি করতেন। ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে ‘এমএলএম’ কোম্পানির প্রতারণার বিষয়টি রপ্ত করেন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে ‘এহসান রিয়েল এস্ট্রেট’ নামে একটি এমএলএম কোম্পানি করেন। ধর্মীয় আবেগ অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ‘এমএলএম কোম্পানির’ ফাঁদ তৈরি করেছিলেন রাগীব।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার রাগীব দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যুক্ত ব্যক্তি, মসজিদের ইমাম ও অন্যদের টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করেছিলেন। তিনি ‘শরীয়তসম্মত সুদবিহীন বিনিয়োগ’-এর বিষয়টি ব্যাপক প্রচারণা করে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করেন। তাছাড়া ওয়াজ-মাহফিলের আয়োজন করে ব্যবসায়িক প্রচার-প্রচারণা করতেন। লাখ টাকার বিনিয়োগে প্রতিমাসে বিনিয়োগকারীদের মাত্রাতিরিক্ত লাভের প্রলোভন দেখাতেন। ২০০৮ সালে দশহাজার গ্রাহককে কোম্পানিতে যুক্ত করেন। এখন গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক। প্রতারক রাগীবের প্রায় তিন শতাধিক কর্মচারী রয়েছে। যাদেরকে কোনো বেতন দেয়া হতো না। তারাই মাঠ পর্যায় থেকে বিনিয়োগকারী সংগ্রহ করে দিতো। এতে ২০ শতাংশ লভ্যাংশের প্রলোভন দেখাতো। এভাবেই রাগীবের দ্রুত গ্রাহক বাড়তে থাকে। তবে বর্তমানে তিনি তার কর্মচারী, গ্রাহক সকলকেই প্রতারিত করেছেন। কাউকেই তিনি কোনো কমিশন বা লভ্যাংশ দেননি।

র‌্যাব জানায়, ২০১৯ সাল থেকে রাগীব গ্রাহকের টাকা পরিশোধ না করে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ওই সময় প্রতারণার মামলায় একবার জেল খেটেছেন। পরে জামিন পেয়ে আবার পলাতক ছিলেন। ভুক্তভোগীরা তাকে খুঁজেও পায়নি আবার অফিসে গিয়ে কোনো সমাধান পায়নি। এরপর থেকে অন্তত ২০টি জেলায় গ্রাহকরা মানববন্ধন শুরু করে। একা ১৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন এমন ভুক্তভোগীও আছেন। র‌্যাব জানায়, মূলত করোনাকাল আসার পর থেকে রাগীব বেশি সমস্যায় পড়েন। ওই সময় চারটি বিলাস বহুল গাড়িও বিক্রি করে দেন। ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও মামলা দায়েরের পর তিনি সঙ্গে আইনজীবী নিয়ে ঘুরতেন। যাতে তাকে গ্রেপ্তার করা না যায়। এছাড়া রাগীব ঘন ঘন সৌদি আরবে যাওয়ার তথ্য পেয়েছেন র‌্যাব সদস্যরা। র‌্যাব ধারণা করছে আত্মসাৎ করা টাকার বড় একটি অংশ বিদেশে পাচার করেছেন রাগীব।

র‌্যাব জানিয়েছে, রাগীব আহসান প্রতারণার মাধ্যমে যে ১৭টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন সেগুলো হলো- এহসান গ্রুপ বাংলাদেশ, এহসান পিরোজপুর বাংলাদেশ (পাবলিক) লিমিটেড, এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমেটেড, নূর-ই-মদিনা ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট একাডেমি, জামিয়া আরাবিয়া নূরজাহান মহিলা মাদ্রাসা, হোটেল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল (আবাসিক), আল্লাহ্র দান বস্ত্রালয়, পিরোজপুর বস্ত্রালয়-১ ও ২, এহসান মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, মেসার্স বিস্মিল্লাহ্ ট্রেডিং অ্যান্ড কোং, মেসার্স মক্কা এন্টারপ্রাইজ, এহ্সান মাইক অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেম, এহসান ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস, ইসলাম নিবাস প্রজেক্ট, এহসান পিরোজপুর হাসপাতাল, এহ্সান পিরোজপুর গবেষণাগার ও এহসান পিরোজপুর বৃদ্ধাশ্রম। ভুক্তভোগীরা দাবি করেছেন, এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানের নামে তিনি অর্থ সংগ্রহ করে পরিবারের সদস্য ও নিকট আত্মীয়দের নামে-বেনামে সম্পত্তি ও জায়গা জমি কিনেছেন। এছাড়া তার পরিবারের সদস্যদের নামে ব্যবসায়িক কাঠামো তৈরি করেন। শ্বশুরকে প্রতিষ্ঠানের সহ-সভাপতি, বাবাকে প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা, ভগ্নিপতিকে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার করেছিলেন প্রতারক রাগীব।

র‌্যাব জানায়, রাগীব আহসান গ্রাহকের টাকা দিয়ে হাউজিং, ল্যান্ড প্রজেক্ট, মার্কেট-দোকান, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের আড়ালে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এখন পর্যন্ত ১১০ কোটি টাকা সংগ্রহের স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এছাড়া রাগীব আহসান সাধারণ গ্রাহককে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতারিত করেছেন। অনেকে পাওনা টাকার চেক নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। অনেকেই ভয়ভীতি, লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত হতেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। পাওনা টাকা চাইতে যাওয়া গ্রাহককে এসিড দিয়ে দগ্ধ করেছেন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *