ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: সিলেটের গোলাপগঞ্জের কৈলাশটিলা গ্যাসক্ষেত্রের ৭ নম্বর কূপ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে।
শনিবার বেলা ১১টায় জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেন সিলেট গ্যাসফিল্ডের অধীন এই গ্যাস সরবরাহের উদ্বোধন করেন।
সিলেট গ্যাসফিল্ডের মহাব্যবস্থাপক (পরিচালন) প্রকৌশলী আব্দুল জলিল প্রামাণিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শনিবার সকাল থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। এই কূপ থেকে প্রতিদিন ১৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এর ফলে গ্যাসের সংকট কিছুটা কমবে বলে আশা এই প্রকৌশলীর।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কৈলাসটিলা গ্যাসক্ষেত্রের ৭ নম্বর কূপ থেকে গত ৭ মে পরীক্ষামূলক গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। এই প্রক্রিয়া সফলতা পাওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে পুরোদমে গ্যাস সরবরাহ শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার আনুষ্ঠানিক গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে।
নানা ত্রুটির কারণে এই কূপ থেকে ২০১৬ সালের দিকে গ্যাস উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে সিলেট গ্যাসফিল্ড কর্তৃপক্ষের হয়ে কূপটিতে ওয়ার্ক-ওভার শুরু করে রাষ্ট্রীয় তেল, গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্স। তা শেষ হয় গতমাসের দিকে।
সিলেট গ্যাসফিল্ড সূত্রে জানা গেছে, কৈলাসটিলা গ্যাস ফিল্ডের সাতটি কূপের মধ্যে এতদিন দুটি কূপ থেকে দৈনিক ২ কোটি ৯০ লাখ ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হতো। এখন ৭ নম্বর কূপ থেকে ১ কোটি ৯০ লাখ ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হচ্ছে। সবমিলিয়ে এখান থেকে ৪ কোটি ৪০ লাখ ঘনফুট গ্যাস প্রতিদিন যাচ্ছে জাতীয় গ্রিডে।
সিলেট গ্যাস ফিল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, এ কূপটি (৭ নম্বর) ওয়ার্ক ওভারের আগে তাদের প্রত্যাশা ছিল দৈনিক ১০ থেকে ১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এখান থেকে পাওয়া যাবে। কিন্তু দৈনিক পাওয়া যাচ্ছে ১৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এর সঙ্গে উপজাত হিসেবে মিলবে প্রতিদিন ২৫০ ব্যারেল কনডেনসেট যা থেকে ২২ লাখ টাকার জ্বালানি তেল পাওয়া যাবে।
মিজানুর রহমান আরও জানান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আরপিসের ধারণা মতে, এই স্তরে মজুত রয়েছে ৭৫৮ বিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস। প্রতি হাজার ঘটফুট গ্যাস ১০ মার্কিন ডলারে হিসাব করলে যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা বলে তিনি জানান।
সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের দেওয়া তথ্যানুসারে, ২০১০-১২ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানকারী কোম্পানি বাপেক্সের কারিগরি সহায়তায় সিলেটের গোলাপগঞ্জের কৈলাসটিলা, জৈন্তাপুরের হরিপুর ও হবিগঞ্জের রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্রে নতুন করে ত্রিমাত্রিক ভূতাত্ত্বিক (থ্রিডি সাসমিক) জরিপ চালানো হয়। এ জরিপে কৈলাসটিলা গ্যাসক্ষেত্রের ৭ নম্বর কূপে তেল ও গ্যাস মজুতের সম্ভাব্যতা পায় বাপেক্স। এ কূপের ১২টি স্তরে তেল ও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানায় তারা। তারমধ্যে চারটিতে তেল, একটিতে তেল-গ্যাস আর বাকি সাতটিতে গ্যাস মজুতের ধারণা দেওয়া হয়।
২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোলাপগঞ্জ সফর করে দেশের প্রথম তেল খনি হিসেবে ঘোষণা করে এই কূপের খনন কাজের উদ্বোধন করেন। পুরোদমে খনন শুরু হয় ২০১৪ সালের ১৭ অক্টোবর। ২০১৫ সালের ৮ মার্চ খনন কাজ শেষে একটি স্তরে গ্যাসের সন্ধান পেলেও তেলের খোঁজ পায়নি বাপেক্স। ২০১৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় গ্রিডে ৮-১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ শুরু হয় এই কূপ থেকে। কিন্তু ২০১৬ সালের অক্টোবরে গ্যাস উত্তোলনের হার ০.৫ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এলে ২ নভেম্বর বন্ধ হয়ে যায় এই কূপ।
এখন ফের শুরু হলো গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ। মূলত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সিলেট গ্যাসফিল্ড কর্তৃপক্ষ কূপটিতে ওয়ার্ক-ওভার শুরু করে। তাদের হয়ে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব তেল, গ্যাস অনুসন্ধানকারী কোম্পানি বাপেক্স এই কাজ শুরু করে। গত এপ্রিল মাসে ওয়ার্ক-ওভার কাজ শেষ হয়। এরপরই নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এ কূপ থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *