আন্তর্জাতিক ডেস্ক::মিশেল লোটিটো। একজন ফরাসি শিল্পী। জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫০ সালে, ফ্রান্সের গ্রেনোবেল শহরে। তাজ্জব করা এই মানুষটির কীর্তি বিশ্ব বিখ্যাত। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নিজের নাম তুলেছেন বিশাল আস্ত একটি বিমান চিবিয়ে খেয়ে। গিনেস বুকে তাঁর নাম দেয়া হয়েছে স্ট্রেঞ্জ ডায়েট নামে। তার অবশ্য একটি কারণও আছে। সাধারণ সিদ্ধ খাবার কিংবা ফল খেলে তার নাকি পেট খারাপ হত।অথচ ভাঙা সাইকেল বা লোহা যেকোনো ধাতব জিনিস দিলে তা অনায়াসে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে পারতেন ঠিক যেন স্ন্যাক্স খাচ্ছেন। আমার আপনার মত সাধারণ মানুষ এই ধরণের খাবার খেলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। অথচ মিশেল সাইকেল, টেলিভিশন, শপিং ট্রলি মুহূর্তের মধ্যেই খেয়ে সাবাড় করে দিতে পারতেন। মাত্র নয় বছর বয়স থেকেই ধরা পড়ে, ধাতব জিনিসের প্রতি তাঁর আসক্তি। হঠাৎ একদিন ভাঙা গ্লাসের টুকরো নিমেষে চিবিয়ে খেয়ে ফেলেন। তারপর থেকেই অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায় এক একটি গ্লাস ভেঙে খাওয়া। তাঁর অদ্ভুত হজম ক্ষমতা ছিল, কিন্তু সেদ্ধ খাবার খেলেই গোলমাল হত শরীরে। ১৯৬৬ সালে যখন মিশেলের মাত্র ১৬ বছর বয়স তখন প্রকাশ্যে আসেন ধাতব বস্তু খাওয়ার প্রদর্শনী নিয়ে। বহু দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসতেন তাঁর এই অদ্ভুত কীর্তি দেখতে। সারা বিশ্ববাসী বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছিলেন তাঁর প্রতিভায়। জনসমক্ষে একের পর এক কামড়ে খেতেন বাইসাইকেল, টিভি, কফিন প্রভৃতি। ১৯৫৯ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত মিশেল পায় ৯ টন ধাতব পদার্থ খেয়েছেন। যদিও প্রতিবার খাওয়ার আগেই তিনি প্রচুর পরিমাণে জল কিংবা মিনারেল অয়েল খেয়ে নিতেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত, মাত্র দু’বছরের মধ্যেই তিনি ‘সেসনা ১৫০’ নামক একটি বিমান চিবিয়ে খান। ধীরে ধীরে তাঁর এই খাওয়ার নেশাটাকেই পেশায় পরিণত করেন। মিশেলের খাদ্য তালিকায় থাকতো ১৮ টি সাইকেল, সাতটি টিভি সেট, দুটি বিছানা, ১৫ টি ট্রলি, একটি কম্পিউটার, একটি কফিন, এক জোড়া স্কি এবং ছয়টি ঝাড়বাতি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় মিশেলের এই খাদ্যাভ্যাস এক ধরনের অসুখ। যাকে বলা হয় পিকা রোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অযোগ্য খাদ্যবস্তুর প্রতি বেশি আকৃষ্ট হন। সেই তালিকায় রয়েছে চুল, মাটি, নানান ধাতব পদার্থ, কাচ প্রভৃতি। এই বিষয়টি অত্যন্ত অবান্তর মনে হলেও অত্যন্ত বাস্তব একটি ঘটনা। গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টরা মিশেলের পেটের এক্স-রে করেন এবং প্রতিদিন ৯০০ গ্রাম ধাতু হজম করার ক্ষমতাকে অনন্য বলে বর্ণনা করেন। যিনি অতি সহজেই ৯ টন পর্যন্ত মেটাল খেয়ে ফেলতে পারতেন তিনি আবার কলা বা ডিম সেদ্ধ হজম করতে পারতেন না। শুধু তাই নয়, গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম তোলার পর তাঁকে যে পিতলের স্মারক দেয়া হয়েছিল সেটিও দিব্যি হজম করে ফেলেছিলেন মিশেল। ২০০৭ সালে ২৫ জুন প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই এই ধাতব মানুষের মৃত্যু ঘটে। কিন্তু আজও তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন আস্ত একটি প্লেন চিবিয়ে খেয়ে ফেলার জন্য। সূত্র: academyofaviation.com

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *