ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: রোববার রাতে সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চা-শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠকে বসে প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ। সিলেটে জেলা প্রশাসন, আওয়ামী লীগ ও চা-শ্রমিকদের মধ্যে ত্রি-পক্ষীয় বৈঠক আবারও ব্যর্থ হয়েছে। রোববার রাতে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চা-শ্রমিকদের কর্মবিরতিসহ আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হলে তারা তা প্রত্যাখ্যান করেন।
তবে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা তার অধীনস্থ ইউনিটগুলোর শ্রমিকদের নিয়ে সোমবার বাগানে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন। বৈঠকে উপস্থিত বেশিরভাগ চা-শ্রমিক প্রশাসনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় রাজু গোয়ালার এ প্রতিশ্রুতি কতটুকু সফল হবে এনিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চা-শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বৈঠকে সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও অংশ নেন।
প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, সিলেট জেলা পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুদ উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, স্থানীয় সরকার সিলেটের উপ-পরিচালক মো. মামুনুর রশীদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আনোয়ার সাদাত, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরুল হাসান, সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুশরাত আজমিরি হক প্রমুখ। বৈঠকে চা-শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা ও বিভিন্ন চা-শ্রমিক ইউনিট কমিটি এবং পঞ্চায়েত প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে সিলেট জেলা প্রশাসক চা-শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবগত আছেন বলে চা-শ্রমিক নেতাদের জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে চা-শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে এর সমাধান হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি। তবে উপস্থিত চা-শ্রমিক নেতারা বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে পরে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানান।
বৈঠক শেষে রাত সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, আমাদের সঙ্গে আবারও বৈঠক হয়েছে। আমরা প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের প্রস্তাবনা শুনেছি। এ নিয়ে আমাদের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবো। এরপর আমরা নিজেদের অবস্থান আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবো।
তবে রাজু গোয়ালা এমন কথা বললেও উপস্থিত বেশিরভাগ চা-শ্রমিক ও পঞ্চায়েত প্রধানরা প্রশাসনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, আমরা তাদের নিয়ে বৈঠক করেছি। কিন্তু তারা আমাদের কাছ থেকে সময় নিয়েছেন। আমরা এও বলেছি- এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের নিয়ে বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর শেষে দেশে ফিরলে তাদের নিয়ে আলোচনায় বসবেন।
এর আগে শনিবার রাতে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের আহ্বানে চা-শ্রমিক নেতারা আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা জানালেও সাধারণ শ্রমিকরা তাদের দাবিতে অনড় থাকেন। ফলে রোববার সকাল থেকে তারা কাজে যোগ না দিয়ে কর্মবিরতিসহ আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন।
দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে সিলেটসহ সারা দেশের চা-শ্রমিকরা গত ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলন করছেন। ৯ থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত তারা প্রতিদিন দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন। এরপর ১৩ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত তারা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি (ধর্মঘট) পালনসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি ও সড়ক অবরোধ করছেন। আন্দোলন থামাতে শ্রম অধিদপ্তরের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হলেও সমাধান হয়নি। চলমান সংকট সমাধানে সর্বশেষ গত শনিবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম দপ্তর অফিসে মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী ও বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয়সহ বিভিন্ন শাখা কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।
ত্রি-পক্ষীয় এই বৈঠকে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে নেতারা এ সিদ্ধান্ত মেনে আসলেও শ্রমিকরা তা প্রত্যাখ্যান করে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এ অবস্থায় শনিবার রাতে সিলেট ভ্যালির শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন জেলা প্রশাসক। বৈঠকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়। সে আহ্বান মেনেও নেন স্থানীয় চা-শ্রমিক নেতারা। কিন্তু সাধারণ চা শ্রমিকরা বেঁকে বসেন। তারা সিলেট বিভাগের রোববার দিনভর কর্মবিরতি পালনের পাশাপাশি সড়ক অবরোধ, মিছিল ও বিক্ষোভ করেন।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

সৌজন্যে : জাগোনিউজ২৪.কম

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *