ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. মো. শফিকুর রহমানের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. আবুল বাসার।
জামায়াত আমিরের পক্ষে অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাকসহ কয়েকজন আইনজীবী তার জামিন চেয়ে আবেদন করেন। এসময় রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালতের যাত্রাবাড়ীর থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মাহমুদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর উত্তরা থেকে জামায়াত আমিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
গত ৯ নভেম্বর শফিকুর রহমানের ছেলে রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। সাদিক সাইফুল্লাহর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে যে মামলা করা হয়েছিল সেই মামলাতেই শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
শফিকুর রহমান জামায়াতের আমির হিসেবে শপথ নেন বছর তিনেক আগে। এরপর ২০২৩-২৫ মেয়াদের জন্যও তিনি আমির নির্বাচিত হন।
শফিকুর রহমানের বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায়। তিনি সিলেট মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। একসময় ছাত্রশিবিরের সিলেট শহর শাখার সভাপতি ছিলেন তিনি।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

ছেলের জঙ্গি কার্যক্রমের সহযোগী জামায়াতের আমির : ছেলের জঙ্গি কার্যক্রমে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। এজন্য তার ছেলের বিরুদ্ধে করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সঙ্গে নিজের ছেলের জড়ানোর বিষয়টি জানতেন শফিকুর রহমান। ছেলেসহ অন্য জঙ্গিদের হিজরতে তিনি সহযোগিতা করেছেন।
মঙ্গলবার রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ছেলে নতুন জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়েছেন এটা জেনেও সমর্থন দিয়ে গেছেন জামায়াত আমির। এক পর্যায়ে তার ছেলে ওই জঙ্গি সংগঠনের সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়ক হন। ওই সংগঠনে জড়ানো অনেকেই আগে শিবিরের সাথী ও কর্মী ছিলেন। তাদের হিজরতের খরচও দিয়েছেন জামায়াত আমির।এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আজ ভোরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসির একটি দল।
তিনি বলেন, গত ৯ নভেম্বর জামায়াত আমিরের ছেলে ডা. রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারও আগে সিলেট থেকে হিজরত করা তিন জঙ্গি সদস্যকে যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা প্রত্যেকেই শিবিরের সাথী ছিলেন। সহযোগী আরিফও শিবিরের সাথী ছিলেন।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, এর আগে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছেন জামায়াত আমিরের ছেলে ডা. রাফাত। পরে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র দাওয়াত পেয়ে দলবলসহ তাতে যুক্ত হন তিনি।
আসাদুজ্জামান দাবি করেন, ডা. রাফাত পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তার বাবার সম্মতিক্রমেই ২০২১ সালের জুন মাসে বান্দরবান থেকে ফিরে আসেন তিনি। ১১ ছেলেসহ রাফাত যে হিজরত করেছেন এর সবই জানতেন জামায়াত আমির। ক্ষেত্র-বিশেষে তিনি সহযোগিতাও করেছেন। হিজরতের যাবতীয় ব্যয়ভারও তিনি বহন করেছিলেন।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, ডাক্তার শাকের নামে আরেকজনকে আমরা কয়েকদিন আগে গ্রেপ্তার করেছি। তিনি নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র দাওয়াতি শাখার প্রধান ছিলেন। এই সংগঠন থেকে আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিকভাবে অনেক সহযোগিতাই তারা পেতেন। যারা ডা. রাফাতের সঙ্গে হিজরত করেছেন তারাও জামায়াতের ছাত্র সংগঠন শিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। নতুন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জামায়াতের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ও সমর্থন ছিল কি না তা জানতে এবং এই মামলায় জামায়াত আমিরের সরাসরি সম্পৃক্ততার কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, গ্রেপ্তার এড়াতে ছেলেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করেছেন জামায়াত আমির। আরও কয়েকজনকে তিনি সহযোগিতা করেছেন। আমরা এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য তাকে জ্ঞিাসাবাদ করব।
সিলেট অঞ্চল থেকে হিজরত করা অধিকাংশেরই পূর্বে শিবিরের সংশ্লিষ্টতা ছিল দাবি করে আসাদুজ্জামান বলেন, জামায়াত ও শিবিরের সঙ্গে নতুন জঙ্গি সংগঠনের আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকতে পারে। যাদের গ্রেপ্তার করেছি তারা জামায়াতে ইসলামী থেকে সহযোগিতা পাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি।
জামায়াত আমির ছাড়া নতুন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জামায়াতের অন্য কোনো নেতার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জামায়াত আমিরের ছেলেই প্রথম হিজরতকারী। তার নেতৃত্বেই একটি বড় অংশ হিজরত করেছে। জামায়াতের আঞ্চলিক পর্যায়ের কিছু নেতার সমর্থন-সহযোগিতা ছিল বলে জেনেছি, কিছু তথ্য পেয়েছি। এ বিষয়ে আরও জানার চেষ্টা করবে পুলিশ।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *