ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার তৈমুছ আলী টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবন নির্মাণের কাজ। এ কলেজের নির্মাণ কাজ কচ্ছপের ধীরগতিকেও যেন হার মানিয়েছে। ২০২০ সালের জুনে কাজ শেষ হবার কথা থাকলেও মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন বছরেও শেষ হয়নি এ  টেকনিক্যাল কলেজ নির্মাণের কাজ‌। ফলে পিছিয়ে পড়ছে কারিগরি শিক্ষার প্রসার। জনমনে সৃষ্টি হয়েছে অসন্তোষ আর ক্ষোভ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের অবহেলাকেই দায়ি করছেন স্থানীয়রা।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষার প্রসার ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের ১০০টি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ তৈরির উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে  ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণের কাজ পায় ‘এম এন এন্টারপ্রাইজ’ ও ‘ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের ঢাকার দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর  উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর গ্রামে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ তৈমুছ আলী এমপি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মৌলভীবাজার-১ (জুড়ী-বড়লেখা) আসনের সংসদ সদস্য ও সরকারের পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন, এমপি। ২০২০ সালের  জুন মাসে কাজটি সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কাজের উদ্বোধনের পর কাজের ধীর গতি, কাজ বন্ধ থাকা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লাপাত্তা, বিভিন্ন সময়ে কাজে অনিয়ম, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকের মৃত্যু, একাধিকবার সময় বাড়ানো, এভাবেই কেটে গেছে প্রায় পাঁচটি বছর। তবুও শেষ হয়নি এ টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবন নির্মাণের কাজ। সাধারণ মানুষের মনে শুধু এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে জুড়ী উপজেলার তৈমুছ আলী টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাজ শেষ হবে কবে?

অনুসন্ধানে জানা যায়,  কার্যাদেশ পাওয়া এম এন এন্টারপ্রাইজ’ ও ‘ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের ঢাকার দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল ২০২০ সালের জুনের মধ্যে। এর মধ্যে তিন বছর অতিবাহিত হলেও কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৫২%।  সম্পূর্ণ কাজ বুঝিয়ে দেওয়াতো দূরের কথা বিভিন্ন সময়ে  কাজ বন্ধ থাকলেও ইতিমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৬ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকার বিল তুলে  নিয়েছেন। মন্ত্রনালয় ২০২৩ এর জানুয়ারি তে ক্লাস করার জন্য সময় বেধে দিলেও কাজ শেষ না হওয়ায় এখনও কলেজের কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। এতে করে সরকারের কারিগরি শিক্ষার প্রসারের যে উদ্যোগ তা মুখ থুবরে পরেছে। স্থানীয়দের  অভিযোগ করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ঠিকমতো তদারকি না করার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজে গাফিলতি সহ নানা টালবাহানা করছে।

বৃহস্পতিবার (১১ মে ) স্থনীয়দের সাথে কথা বলে ও  সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পাঁচ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তৃতীয় তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে। চতুর্থ তলার ছাদ ঢালাই হয়েছে অর্ধেক। আরেকটি চার তলা প্রশাসনিক ভবনের ছাদ সম্পন্ন হলেও ভবনটিতে এখনো  ইটের গাঁথুনির কাজ চলছে। অর্ধেকের বেশি কাজ বাকি থাকলেও ঈদের আগ থেকে এখন পর্যন্ত কাজ বন্ধ রয়েছে। এখনো যে পরিমাণ কাজ রয়েছে এ বছরে তো নয়ই, বরং ২০২৪ সালে কাজ শেষ করতে হলে দৈনিক ২০/২৫ জনের আরো অধিক পরিমাণে শ্রমিক প্রয়োজন বলে জানান স্থানীয়রা। অবশ্য ২০২৩/২০২৪ ইং সালের  ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ করার পরিকল্পনা যে নেই তা বেরিয়ে এসেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের গাফলাতির মাধ্যমে।

পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের হাসান জেবলু বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারিগরি শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে সারাদেশে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু জুড়ীতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে এখনও শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। অতি দ্রুত কাজ শেষ করার দাবি করছি।

আলাপকালে উপজেলার একাধিক সিনিয়র সাংবাদিক জানান, এ কাজে প্রশাসনিক তদারিকর অনেক ঘাটতি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রয়োজনীয় তদারকি থাকলে ঠিকাদার এত ধীরগতিতে কাজ চালাতে পারতেন না। ঠিকমতো কাজ পরিদর্শনেও আসেন না সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। এসব ঠিকাদারকে কালো তালিকাভূক্ত করা উচিত মন্তব্য করে তিনিও দ্রুত ভবনের নির্মাণকাজ শেষ করে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানান।

এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজ দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা ইকবাল খান ধীরগতির বিষয়টি স্বীকার করে তিনি ঠিকাদারের মৃত্যু,  প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিকে দুষলেন। ঠিকাদারের মৃত্যুর পর আর্থিক সংকট এবং বাজার অস্থিতিশীল হওয়ায় কাজ টানা যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৫২% কাজ হয়েছে। এ সময় তিনি ক্লাস শুরু করার জন্য দ্বিতীয় তলায় কয়েকটি কক্ষ প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান। তবে পুরোপুরি কাজ  ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ হবে তিনি বলে জানান তিনি।

উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রিংকু রঞ্জন দাস বলেন, এ টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের কাজ শেষ না হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অতি দ্রুত কাজ টি শেষ করার দাবি করছি‌।

কাজের অগ্রগতি ও ধীরগতির নিয়ে আলাপকালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের  উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) আফজাল হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে এ কলেজের কাজ শেষ হয়েছে  ৫২ শতাংশ। ২০২০/২১ সালে করোনাভাইরাসের কারণে এবং ঠিকাদার মারা যাওয়ায় ঠিকাদারি ‌প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সমস্যার কারণে কাজ বিলম্ব হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নতুন করে আবারো সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছে। নিয়মিত পরিদর্শন করে কাজ দ্রুত শেষ করতে তাগিদ দিচ্ছি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *