ডায়ালসিলেট ডেস্ক ::  পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে কোটাবিরোধী আন্দোলনের সাধারণ শিক্ষার্থী সংঘর্ষে গতকাল ছয়জন নিহত হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের নিহতের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ গতকাল রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

 

একইসাথে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের কক্ষে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে। হল থেকে বেরিয়ে গেছে প্রতিটি হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় ছাত্রলীগের বিভিন্ন কক্ষ থেকে দেশীয় অস্ত্র, পেনসিডিল পাওয়া গেছে।

 

 

 

সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের পরই বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের তিনটি আবাসিক হল-অমর একুশে হল, শহীদুল্লাহ হল ও ফজলুল হক হলের নিয়ন্ত্রণ নেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এদিন থেকেই এই তিন হলে ছাত্রলীগের আর কোনো শীর্ষ নেতা প্রবেশ করতে পারেননি। গতকাল রাতে রোকেয়া হলে এক ছাত্রলীগ নেত্রীর কক্ষ ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

 

 

এ সময় তোপের মুখে হল ছাত্রলীগ সভাপতিসহ সংগঠনটির ১০ নেতাকর্মী হল থেকে বেরিয়ে যান। এরপর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে রোকেয়া হলকে রাজনীতি মুক্ত বলে বিজ্ঞপ্তি দেন হলের প্রভোস্ট নিলুফার পারভিন। এর পর কুয়েত মৈত্রী হলেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হলছাড়া করার ঘটনা ঘটে। এরপর মধ্যরাতে লাঠিসোটা নিয়ে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থীরা বের হয়ে হলের নিয়ন্ত্রণ নেন। এ সময় হল ছাত্রলীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতারা হল ত্যাগ করেন।

 

 

হলগেট বন্ধ করে স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ এসে চেষ্টা করেও শিক্ষার্থীদের সেখান থেকে সরাতে পারেনি। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এ হলের প্রভোস্ট জহুরুল হক হলকে রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করেন। ভোর ৫টার পর হলের মূলগেটের সামনে পরপর কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বাইকে করে এসে ককটেল ছুড়েন। এতে উত্তেজিত হয়ে পড়েন হলে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীরা। পরে তারা একত্রিত হয়ে বিভিন্ন ব্লকে থাকা ছাত্রলীগ নেতাদের অন্তত ২০টি কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর করেন।

 

 

 

এদিকে মধ্যরাত থেকে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে হাজি মুহাম্মদ মহসিন হল, বঙ্গবন্ধু হল, জসিম উদ্দিন হল, বিজয় একাত্তর হলেও নিয়ন্ত্রণ হারায় ছাত্রলীগ। বিপদ বুঝতে পেরে এসব হল থেকে আগেই নেমে গিয়েছিলেন অধিকাংশ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী পালায়। পরে শিক্ষার্থীদের জড়ো হওয়ার সময় দৌড়ে নেমে যান ছাত্রলীগের বাকিরাও। এর আগের দিন সকাল আটটার পর বিজয় একাত্তর হলেরও দখলে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা গেটের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। ভেতরে থাকা বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধর করেন তারা। এই হলে থাকতেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান। তালা ভেঙে তার রুমেও হামলা চালায় শিক্ষার্থীরা।

 

 

 

কবি জসিম উদ্দিন হলে থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত। এ হলের ছাত্রলীগের বেশ কয়েকটি কক্ষে ভাঙচুরের একপর্যায়ে এই শীর্ষ ছাত্রলীগ নেতার রুমটিতেও হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ভেঙে ফেলা হয় তার রুমে থাকা আসসবাবপত্র। তার কক্ষে থাকা একটি টিভি ও ফ্রিজ ভেঙে নিচে ফেলে দেয় তারা। সর্বশেষ আজ সকাল ১১টার দিকে ভাঙচুর করা হয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের কক্ষ। স্যার এএফ রহমান হলে তার কক্ষের তালা ভেঙে ভাঙচুর করে শিক্ষার্থীরা।

 

 

হলগুলো নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর কোটা ও ছাত্রলীগ বিরোধী স্লোগান দিতে থাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের প্রত্যাশা, হলগুলো আর কখনো ক্ষমতাসিন ছাত্রলীগের দখলে যাবে না। বন্ধ হবে সব ধরনের গেস্টরুম ও গণরুম কালচার। প্রশাসনিক পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হবে প্রতিটি হলে। জোরপূর্বক ক্যাম্পাসে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে একচ্ছত্র আধিপত্য থাকা ছাত্রলীগকে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে সেটি চিন্তাই করতে পারছেন না সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।

 

 

এদিকে গতকাল দুপুর দুইটায় শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদে গায়েবানা জানাজা ও বিক্ষোভ মিছিল ডেকেছে কোটা বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজ’।

 

 

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *