ডায়ালসিলেট ডেস্ক: মৌলভীবাজারের ওপর দিয়ে কয়েকদিন থেকে বয়ে যাচ্ছে তীব্র দাবদাহ। গরমের দাপটে নাজেহাল জনজীবন। তার উপরে আছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। এরকম সময়ে মানুষজন হাঁপিয়ে উঠছেন দুঃসহ গরমে। আর এই গরম থেকে বাঁচতে অনেকেই বিকল্প মাধ্যম খুঁজে নেন। এরমধ্যে অন্যতম হাতপাখা। যার শীতল বাতাসে শরীরে এনে দেয় ক্ষণিকের প্রশান্তি

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

আধুনিক ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, ইলেকট্রিক পাখার দাপটে হরেক রকমের হাতপাখা বিলুপ্তপ্রায়। তবে এখনও সল্প পরিসরে হলেও নান্দনিক নকশি হাতপাখার চাহিদা রয়েছে।এই গরমে চলতি পথে একজন হাতপাখা ব্যবসায়ীর সঙ্গে দেখা হয় মৌলভীবাজার জেলা শহরের ব্যস্ততম এলাকা সেন্ট্রালরোডে। পাখা বিক্রেতার নাম বদরুল মিয়া। থাকেন জেলার শেষ সীমানা ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকায়। এক সপ্তাহ হলো শহরে এসেছেন। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে হাতপাখা বিক্রি করছেন তিনি।

আলাপকালে তিনি জানান, জেলার শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে এই হাতপাখা সংগ্রহ করেন। স্থানভেদে ১শ হাতপাখা ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকায় কেনেন। বিক্রি করেন প্রতি পিস ৬০ টাকা ও জোড়া ১০০ টাকা থেকে ১১০ টাকায়। দিনে ৩০ থেকে ৫০টির মতো পাখা বিক্রি হয় তার।

বদরুল মিয়া আরও বলেন, শীত শেষ হতেই হাতপাখা তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। প্রথমে বেত বাঁশকে ফালি করা হয়। পরে প্রয়োজন অনুসারে নানান রঙের পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয় অনেকক্ষণ। তারপর সেগুলো শুকানো হয়। রঙিন ফালিফালি বাঁশের বেতকে চৌকোণা চাটাইয়ের মতো প্রথমে তৈরি করা হয়। পরে আকার অনুযায়ী গোল করে কাটা, সরু লম্বা কাঠি দিয়ে বাঁধা ইত্যাদি নানা পর্বের মধ্য দিয়ে পাখা তৈরি হলে তা বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়।

শহরের বাসিন্দা শাম্মী আক্তার বলেন, একটি রঙিন বাঁশবেতের পাখা কিনলাম ৬০ টাকা দিয়ে। এটা দেখতেও সুন্দর আবার বিদ্যুৎ না থাকলে বাতাসও করা যাবে। এই গরমে বিদ্যুৎ বিভ্রাট তো লেগেই আছে। তাই এই পাখার কোনো বিকল্প নাই। এই পাখার বাতাসও অনেক প্রশান্তি দেয়।

গ্রাম থেকে শহরে আসা তুহিন রশিদ বলেন, বেতের রঙিন পাখা সবসময় পাওয়া যায় না, তাই একটি পাখা কিনলাম। প্রায়ই গ্রামে বিদ্যুৎ থাকে না, তখন এই পাখাই ভরসা।

আধুনিক প্রযুক্তির উপরই এখন সবাই নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় হাতপাখা এখন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে জানিয়ে স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী আব্দুর রব বলেন, একটা সময় বৈদ্যুতিক ফ্যানের প্রচলন তেমনটা ছিল না। মানুষ প্রাকৃতিক বাতাস আর হাতপাখার উপর নির্ভরশীল ছিল। কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেলে ছোটরা হাতপাখা নিয়ে এগিয়ে আসতো বাতাস করার জন্য। এখন আর সেটা লক্ষ করা যায় না।

স্থানীয় পরিবেশ কর্মী রিপন দে বলেন, যদিও বৈদ্যুতিক ফ্যান বা রিচার্জেবল ফ্যানকে এখন আর এড়িয়ে চলার সুযোগ নেই। তবুও আমাদের পূর্ব পুরুষদের একটি ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে হবে। আমাদের অস্তিত্ব রক্ষায় এসবের গুরুত্ব অপরিসীম। এই লোকশিল্পকে আমাদেরই বাঁচিয়ে রাখা উচিত বলে মনে করি।

শহরের প্রবীণ নাগরিক শৈলেন রায় বলেন, বাঁশ বেত ও তালপাতার তৈরি হাতপাখাগুলোতে নিপুণ হাতে এক সময় শিল্পীরা আঁকতেন গ্রাম বাংলা আহবান শিল্প সংস্কৃতি, পশু পাখি, ফুল লতাপাতাসহ সমসাময়িক নানান বিষয়াবলী। এখন আর তা দেখা যায়।

লোক গবেষক, লেখক আহমদ সিরাজ বলেন, একটা সময় সব মানুষের ভরসা ছিল হাতপাখা, বিশেষ করে গ্রাম এলাকায়। কিন্তু বর্তমানে এই পাখার দেখা মেলা ভার। আধুনিক ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, ইলেকট্রিক পাখার দাপটে এখন বাঁশবেতের তৈরি হরেক রকমের হাতপাখা বিলুপ্তপ্রায়। তবে এখনও সল্প পরিসরে হলেও বাঁশবেতের নান্দনিক হাত পাখার চাহিদা রয়েছে। এছাড়া, দেশের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এসব পাখা ও এইসব বুননশিল্প রক্ষার জন্য সকলকে আহ্বান জানান তিনি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *