ডায়াল সিলেট রিপোর্ট :: দৈনিক মজুরী ১২০টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়ে ভিন্ন অবস্থানে সিলেটের চা শ্রমিকরা। এক পক্ষ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা রেখে রোববার থেকে কাজে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অপরপক্ষ নতুন নির্ধারিত ১৪৫টাকা মজুরী প্রত্যাহার করেছে। এই পক্ষের দাবী একটাই- ৩০০টাকা মজুরী।
এ অবস্থায় সিদ্ধান্ত নিয়ে বিপাকে সিলেটের অনেক চা শ্রমিক। রোববার থেকে কাজে যোগ দেবেন কি না এ নিয়ে এখনও সিদ্ধান্তহীনতায় তারা।
জানা গেছে, শনিবার বিকেলে দৈনিক মজুরী ১২০টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা নির্ধারণের খবর বাইরে এসে পৌঁছালে শ্রীমঙ্গলে শ্রম দপ্তরের সামনেই বিক্ষোভ করেন স্থানীয় চা শ্রমিকরা। এর পাশাপাশি সিলেট মহানগরীর মালনিছড়া, হিলুয়াছড়া ও তারাপুর চা বাগানের শ্রমিকরাও নতুন মজুরীর এ সিদ্ধান্তকে বয়কট করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পরে কয়েকশ’ চা শ্রমিক বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মালনিছড়া বাগানের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল করে আম্বরখানা হয়ে চৌহাট্টা পয়েন্টে গিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে। সেখানে কিছু সময় অবস্থান করে তারা ঘরে ফিরেন। তবে ৩০০টাকা মজুরীর দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
এরপর সন্ধ্যায় সিলেটের জেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠকে বসেন চা শ্রমিক নেতারা। দীর্ঘ আলোচনার পর সে বৈঠক সিদ্ধান্তহীন অবস্থায় শেষ হয়। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে দ্বিতীয় দফায় চা শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান। এতে চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালাসহ শ্রমিক নেতারা অংশ নেন। এছাড়া জেলা প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকর্তারাও বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন।
রাত পৌনে ১১টায় শেষ হয় এ বৈঠক। বৈঠক শেষে আন্দোলন প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান। সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা ও তাঁর প্রতি সম্মান রেখে রোববার থেকে কাজে যোগ দেয়ার ঘোষণা দেন শ্রমিক নেতা রাজু গোয়ালা।
এর আগে ধর্মঘট শুরুর ১১তম দিনে শনিবার বিকেলে শ্রম অধিদপ্তরের শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বৈঠকে বসেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। এসময় বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে ‘দরকষাকষি’র পর একপর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে ১৪৫ টাকা মজুরির প্রস্তাব দেয়া হলেও তা মেনে নেন চা শ্রমিক নেতারা। এরপর রোববার থেকে পুরোদমে কাজে ফিরবেন বলেও ঘোষণা দেন তারা।
বৈঠক শেষে সরকারের প্রতিনিধি মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চা শ্রমিকদেরকে আশ্বস্ত করেছেন যে, আসন্ন ভারত ও আমেরিকা সফর শেষে তিনি শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বসবেন। তাদের কথা শুনবেন। প্রধানমন্ত্রীর এমন আশ্বাসের প্রেক্ষিতে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এরপর চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেণ পাল জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান রেখে তারা চলমান আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তবে এ ঘোষণার কিছুক্ষণ পর সমঝোতা না মানার ঘোষণা দেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেণ পাল।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সীদ্ধান্তকে আমরা সম্মান জানাই। ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর বিভিন্ন চা বাগান থেকে পঞ্চায়েত কমিটি ও ভ্যালী কমিটির নেতারা আমাদের ফোন দিয়ে জানান ১৪৫ টাকা মেনে নেওয়ার কারণে শ্রমিকরা বাগানে বাগানে আন্দোলন শুরু করেছেন। শ্রমিকরা এই সীদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছে না। তাই আমরা শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছি।’
এসময় চা শ্রমিক ফেডারেশনের সংগঠক অজিত রায় বলেন, ‘আমরা এ সিদ্ধান্ত মানি না। কমপক্ষে ২০০ টাকা দৈনিক মজুরি ছাড়া মানবো না। আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’
আন্দোলন নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে এমন বিভক্তির পর রাতে আবারও শ্রমিক নেতাদের সাথে বৈঠকে বসেন জেলা প্রশাসক। প্রথম দফা আলোচনা ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় দফায় সফল হয়েছেন বলে দাবী জেলা প্রশাসকের।
বৈঠক শেষে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, আমাদের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করেছেন। এর প্রেক্ষিতে চা শ্রমিকেরা তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। রোববার সকাল থেকে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ফিরবেন সিলেটসহ সারা দেশের চা শ্রমিকেরা।
এ সময় স্থানীয় সরকার সিলেটের উপ পরিচালক মো. মামুনুর রশীদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আনোয়ার সাদাত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ইয়াসমিন নাহার রুমাসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সিলেটের বিভিন্ন ভ্যালির চা শ্রমিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে রাতের এ বৈঠকে যোগ দেয়নি সিলেট ভ্যালীর বেশ কয়েকটি বাগানের শ্রমিক নেতারা। রাতে তাদের সাথে কথা হলে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নিজেদের অনড় অবস্থানের কথা জানান। এমনকি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা মজুরী প্রত্যাখ্যান করেন।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *