রোমাঞ্চের খানিক আশা জাগলেও শেষ পর্যন্ত নিষ্ফলাই থেকে গেলো চট্টগ্রাম টেস্ট। এক ঘণ্টা বাকি থাকতেই ড্র মেনে নিলো দুই দল। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৬০ রান করেছিল শ্রীলঙ্কা। তাদের লিড দাঁড়িয়েছিল ১৯২ রানের।
তবে ফল আসার কোনো সম্ভাবনা না থাকায়, শেষ দিনের খেলা এক ঘণ্টা বাকি থাকতে দুই দল খেলা শেষ করার সম্মতি দিয়েছে। তাই আবারও বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ শেষ হলো কোনো ফল ছাড়াই।
গতবছর শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে সিরিজের প্রথম টেস্ট ড্র করেছিল বাংলাদেশ। এরপর টাইগারদের খেলা আট ম্যাচের কোনোটিই ড্র’তে শেষ হয়নি। বাংলাদেশ জেতে দুইটি, হেরে যায় বাকি ছয়টি। এবার শ্রীলঙ্কাকে পেয়ে আবারও ড্র করলো মুমিনুল হকের দল।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

চতুর্থ দিন বাংলাদেশের ধীরগতির ব্যাটিংয়ের পরই মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল এই ম্যাচের ফল। তবু আশা ছিল দ্বিতীয় ইনিংসে স্বাগতিকদের জাদুকরী বোলিং পারফরম্যান্সের। যা পেলে হয়তো ম্যাচ জিততেও পারতো টাইগাররা।

সেই আশার পালে হাওয়া দিয়েছিল তাইজুল ইসলাম ও সাকিব আল হাসানের বোলিং। বিশেষ করে আজকের দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই তাইজুল ও সাকিবের ঘূর্ণিতে দিমুথ করুনারাত্নে ও ধনঞ্জয় ডি সিলভার বিদায়ে নাটকীয়তা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল।

কিন্তু সপ্তম উইকেট জুটিতে নিরোশান ডিকভেলা ও দিনেশ চান্দিমালের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে পরাজয়ের সব আশঙ্কা উড়িয়ে দেয় লঙ্কানরা। অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৩৩.৫ ওভারে ৯৯ রান যোগ করেছেন এ দুজন। ডিকভেলা ৬১ ও চান্দিমাল ৩৯ রানে অপরাজিত ছিলেন।

চতুর্থ দিন বিকেলে ১৭.১ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৩৯ রান করেছিল শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের চেয়ে তারা পিছিয়ে ছিল ২৯ রানে। আজ সকালে খেলতে নেমে এই ২৯ রান করতে মোটে ৪ ওভার লাগে লঙ্কানদের। দিনের শুরুতেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকেন কুশল।

দিনের প্রথম ওভারেই তাইজুলকে জোড়া বাউন্ডারি হাঁকান এ ডানহারি মিডল অর্ডার। দুই ওভার পর খালেদ আহমেদ হজম করেন হ্যাটট্রিক বাউন্ডারি। আগের ইনিংসের সফলতম বোলার নাইম হাসানের বলেও চার-ছক্কা মেরে দলকে দারুণ শুরু এনে দেন কুশল।

রানের গতি থামানোর জন্য অবশেষে সাকিব আল হাসানকে আক্রমণে আনেন মুমিনুল হক। নিজের ওভারের তৃতীয় বলেই দারুণ টার্নিং ডেলিভারিতে করুনারাত্নেকে বিপদে ফেলেন দেন সাকিব। তবে অল্পের জন্য বেঁচে যান লঙ্কান অধিনায়ক। প্রথম ঘণ্টায় ৬৭ রান তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা।

পানি পানের বিরতির পরের ওভারেই কুশলকে ফেরান তাইজুল। তার মিডল স্ট্যাম্পে পড়া ডেলিভারি সূক্ষ্ম টার্নে পরাস্ত করে কুশলের ব্যাট, বল গিয়ে আঘাত হানে অফস্ট্যাম্পে। সাজঘরে ফেরার আগে ৮ চার ও ১ ছয়ের মারে মাত্র ৪৩ বলে ৪৮ রান করেন এ মিডল অর্ডার ব্যাটার।

এরপর প্রথম ইনিংসে ১৯৯ রান করা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজকে এবার রানের খাতাই খুলতে দেননি তাইজুল। রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে শুরু করা ম্যাথিউজ ১৫ বল খেলেও রান করতে পারেননি। তাইজুলের ফুল লেন্থের বলে সজোরে ড্রাইভ করতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দেন তিনি। দুর্দান্ত ক্যাচে তাইজুল নিজের তৃতীয় উইকেটটি নেন।

সেশনের বাকি সময়ে আর বিপদ ঘটতে দেননি অধিনায়ক করুনারাত্নে ও অলরাউন্ডার ধনঞ্জয় ডি সিলভা। তবে দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই তাইজুলের চতুর্থ শিকারে পরিণত হন লঙ্কান অধিনায়ক। আক্রমণাত্মক শট খেলতে গিয়ে মুমিনুল হকের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন ১৩৮ বলে ৫২ রান করা করুনারাত্নে।

এরপর প্রথম ইনিংসের মতো এবারও ৭৫ নম্বর জার্সি পরিহিত ধনঞ্জয়কে সাজঘরে পাঠান সাকিব। হাফ ট্র্যাকার ডেলিভারি পুল করে সোজা শর্ট মিড উইকেটে দাঁড়ানো মুশফিকুর রহিমের হাতে তুলে দেন ধনঞ্জয়। তার ব্যাট থেকে আসে ৬০ বলে ৩৩ রান। তখন লঙ্কানদের লিড মাত্র ৯৩ রানের।

এর ঠিক পরের বলে ফিরতে পারতেন ডিকভেলাও। লেগস্ট্যাম্পের বাইরের বলে সুইপ করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো তাইজুলের হাতে প্রায় ধরা পড়ে গিয়েছিলেন ডিকভেলা। অল্পের জন্য তাইজুলের হাতের ওপর দিয়ে বল চলে যায় বাউন্ডারিতে।

শুরুতেই জীবন পাওয়ার পরেও রয়েসয়ে খেলার কথা ভাবেননি ডিকভেলা। সুযোগ পেলেই হাত খুলে রানের পথে হেঁটেছেন লঙ্কান উইকেটরক্ষক ব্যাটার। অন্যদিকে চান্দিমাল ছিলেন অবিচল। একের পর এক ডিফেন্ড করে গেছেন তিনি। শেষ পর্যন্র অবিচ্ছিন্ন থেকেই মাঠ ছাড়েন তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস: ৩৯৭/১০, ১৫৩ ওভার (ম্যাথিউজ ১৯৯, চান্ডিমাল ৬৬, কুশল মেন্ডিস ৫৪, ওশাদা ফার্নান্দো ৩৬; নাঈম হাসান ৬/১০৫, সাকিব আল হাসান ৩/৬০, তাইজুল ১/১০৭)। দ্বিতীয় ইনিংস: ২৬০/৬, ৯০.১ ওভার (নিরোশান ডিকভেলা ৬১*, দিমুথ করুনারত্নে ৫২, কুশল মেন্ডিস ৪৮, চান্ডিমাল ৩৯*, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ৩৩; তাইজুল ইসলাম ৪/৮২, সাকিব আল হাসান ১/৫৮)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৪৬৫/১০, ১৭০.১ ওভার (তামিম ইকবাল ১৩৩, মুশফিকুর রহিম ১০৫, লিটন দাস ৮৮, মাহমুদুল হাসান জয় ৫৮, সাকিব আল হাসান ২৬, তাইজুল ২০; কাসুন রাজিথা ৪/৬০, আসিথা ফার্নান্দো ৩/৭২, ধনঞ্জয়া ১/৪৮, লাসিথ এম্বুলদেনিয়া ১/১০৪)।
ফল: ম্যাচ ড্র, ম্যান অব দ্য ম্যাচ: অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *