ডায়ালসিলেট ডেস্ক::হঠাৎ করেই পিয়াজের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। রাজধানীতে দুইদিনে কেজিপ্রতি পিয়াজের দর ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। অথচ সরবরাহ স্বাভাবিক। তারপরও কেন বেড়েছে এই নিত্যপণ্যের দাম- সরকার, ব্যবসায়ী, আমদানিকারক তা কেউই জানেন না। সোমবার রাজধানীর বেশকিছু বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) তাদের প্রতিবেদনে দাম বাড়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছে। সোমবার প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। গত সপ্তাহে দাম ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এক মাস আগে প্রতি কেজি পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা। টিসিবি’র হিসাবে, গত এক মাসে দেশি পিয়াজের দাম ৩৪.৬৮ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের এই সময় প্রতি কেজি পিয়াজের দাম ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা। এদিকে আমদানি করা পিয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি পিয়াজের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। টিসিবি’র হিসাবে, গত এক মাসে আমদানিকৃত পিয়াজের দাম ২৩.৫৩ শতাংশ বেড়েছে। শুধু পিয়াজই নয়, দাম বাড়ার তালিকায় আরও রয়েছে ভোজ্য তেল, ব্রয়লার মুরগি, ডিম, আদা, হলুদ ও রসুন। পিয়াজসহ বেশ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
পিয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পিয়াজ মজুত রেখে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ তাদের। এই সময় দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বাজারে এখন দেশি পিয়াজের সরবরাহ কম। আর ভারতেও পিয়াজের দাম বেড়েছে। ফলে দেশের বাজারে পিয়াজের দাম বাড়তি।
খুচরা বিক্রেতারা জানান, তিন থেকে চারদিন আগেও পিয়াজের দর ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা। খুচরা বাজারে এখন প্রতিকেজি দেশি পিয়াজের দাম ৬৫ টাকার উপরে। আর কাওরান বাজারের পাইকারিতে কেজি প্রতি রাখা হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। তবে পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে দাম বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। এ ছাড়া ভারত বা বাংলাদেশ কোনো পক্ষই পিয়াজের আমদানি বন্ধ করেছে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আমদানিকারকরাও বলছেন, পিয়াজের আমদানির গতি কিছুটা কমলেও বন্ধ হয়নি। ভারতে বৃষ্টির কারণে কিছু পিয়াজ নষ্ট হওয়ায় গতি কমেছে।
কাওরান বাজারের পিয়াজ বিক্রেতা মকবুল মিয়া বলেন, আমদানি কম হচ্ছে। যার ফলে দাম বাড়ছে। এ ছাড়া পিয়াজের মৌসুম শেষের দিকে। তাই দামও চড়া। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারেও দাম বেড়েছে। মণপ্রতি পিয়াজের দাম বেড়েছে ২০০ টাকা। তাই আমরাও বাড়িয়ে বিক্রি করছি। আগামীতে আরও দাম বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
দেশের অন্যতম বৃহত্তর পিয়াজের আড়ত শ্যামবাজারে গত সপ্তাহের শেষদিকে দেশি পিয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি। এখন সেই পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা কেজি। আমদানির পিয়াজ গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি। এখন তা ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা কেজিতে উঠে গেছে।
শ্যামবাজার পিয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী আবদুল মাজেদ বলেন, কাঁচামালের বাজার এমনই। সরবরাহ কমে গেলে দাম বাড়ে। বাজারে এখন পিয়াজ কম, তাই দামও বেশি।
এদিকে দেশের সবচেয়ে বেশি পিয়াজ উৎপাদন হয় ফরিদপুর জেলায়। এখানেই হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে পিয়াজের দাম। তিনদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। হঠাৎ করে পিয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গত তিনদিন আগেও ফরিদপুরের বিভিন্ন খুচরা বাজারগুলোতে পিয়াজ বিক্রি হতো প্রতি কেজি ৩৮ থেকে ৪০ টাকায়। আর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হতো ২৫ থেকে ২৮ টাকায়। গত শুক্রবার থেকে ফরিদপুরের বিভিন্ন বাজারগুলোতে পিয়াজের দাম বৃদ্ধি পেতে থাকে।
জেলার বিভিন্ন হাটবাজারগুলোতে প্রতি কেজি পিয়াজ ২০ টাকা করে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০/৬২ টাকায়। হঠাৎ করে কেজিতে ২০/২২ টাকা বেড়ে যাওয়ার তেমন কোনো কারণ জানাতে পারেনি খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তবে তারা বলছেন, ভারত থেকে পিয়াজ আমদানি বন্ধ থাকা এবং রাখি ব্যবসায়ীরা পিয়াজ বাজারে না ছাড়ার কারণেই পিয়াজের দাম বেড়েছে।
পিয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। তাদের দাবি, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পিয়াজ মজুত রেখে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা লাভের আশা করছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের প্রতি বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান ক্রেতারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হিলি বা বেনাপোল কোনো বন্দর দিয়েই পিয়াজ আমদানি বন্ধ হয়নি। তবে পূজার কারণে সীমান্তের ওপার থেকে পিয়াজসহ সব ধরনের পণ্যবাহী পরিবহন আসছে কম। তবে পিয়াজের তেমন কোনো ঘাটতি নেই। তারপরও দাম বাড়ছে। ভারতে পূজা আর বর্ষার কারণে দাম বৃদ্ধি, তার প্রভাবে পিয়াজ আমদানি কম হওয়ার কারণে দামও বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বন্দরের পিয়াজ আমদানিকারকরা। এখানে তিন-চার দিন আগেও প্রতি কেজি পিয়াজের আমদানি মূল্য ছিল মানভেদে ৩০ থেকে ৩২ টাকা। কিন্তু এখন আমদানি করা পিয়াজের দাম পড়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এর প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারে।
উল্লেখ্য, প্রতিবছর দেশে পিয়াজের চাহিদা ২৫ লাখ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছর দেশে উৎপাদন হয়েছে ২৫ লাখ ৫৭ হাজার টন। উৎপাদিত পিয়াজের ২৫ শতাংশ পচে যায়। তাই প্রকৃত উৎপাদন ১৯ লাখ ১১ হাজার টন। চাহিদার বাকি ঘাটতি মেটাতেই আমদানি করা হয়েছে ৪ লাখ ৫৯ হাজার টন।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

ডায়ালসিলেট এম/

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *