ডায়ালসিলেট ডেস্ক::অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী ২২শে সেপ্টেম্বর মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। গতকাল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে বিচার কার্যক্রম শুরুর আদেশ দেন। দুদকের আইনজীবী মীর আহম্মেদ আলী সালাম সাংবাদিকদের বলেন, পি কে হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছে আদালত। আগামী ২২শে সেপ্টেম্বর মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। পি কে হালদার ছাড়া অন্য যাদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছে- পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদার, পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, প্রীতিশ কুমার হালদার, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায়, স্বপন কুমার মিস্ত্রি, অবন্তিকা বড়াল, শঙ্খ বেপারী, সুকুমার মৃধা ও অনিন্দিতা মৃধা। পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া প্রায় ৩৬টি মামলার মধ্যে এই প্রথম কোনো মামলার বিচার শুরু হলো। আদালতে অভিযোগ পড়ে শোনানো হলে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা অবন্তিকা বড়াল, শঙ্খ বেপারী, সুকুমার মৃধা ও অনিন্দিতা মৃধা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চান।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

তারা তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করেন। পি কে হালদারসহ ১০ আসামি পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে শুনানি হয়নি। পরে আদালত অব্যাহতি চাওয়া ৪ আসামির আবেদন নামঞ্জুর করে এবং আদালতে হাজির না থাকা ১০ জনকে পলাতক দেখিয়ে ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আদেশ গত ১০ই ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে এই ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয় ২৯শে আগস্ট। অভিযোগপত্রে বলা হয়, পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নানা কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন। ২০১৪ সালে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন। পি কে হালদার দেশের বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ ৬ হাজার ৭৯০ শতাংশ জমি কিনেছেন। এই সম্পদের বাজার মূল্য দেখানো হয়েছে ৩৯১ কোটি ৭৫ লাখ ৮১ হাজার ১২ টাকা। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এই সম্পদের মূল্য ৯৩৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে নিজের নামে তিনি জমি কিনেছেন ৪ হাজার ১৭৪ শতাংশ। এর দাম দলিলে দেখানো হয়েছে ৬৭ কোটি ৯৪ লাখ ২০ হাজার ৯৩০ টাকা। অথচ এই সম্পদের বর্তমান মূল্য ২২৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া ধানমণ্ডিতে পি কে হালদারের নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, পি কে হালদার তার নিকটাত্মীয় পূর্ণিমা রানী হালদারের নামে উত্তরায় একটি ভবন করেছেন, যার দাম ১২ কোটি টাকা। আর পূর্ণিমার ভাই উত্তম কুমার মিস্ত্রির নামে তেজগাঁও, তেজতুরী বাজার ও গ্রিনরোডে ১০৯ শতাংশ জমি কেনেন, যার বাজারমূল্য ২০০ কোটি টাকা। প্রশান্ত তার কাগুজে কোম্পানি ক্লিউইস্টোন ফুডসের নামে কক্সবাজারে ২ একর জমির ওপর আটতলা হোটেল (র‍্যাডিসন নামে পরিচিত) তৈরি করেছেন, যার আর্থিক মূল্য এখন ২৪০ কোটি টাকা। এ ছাড়া পি কে’র খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী এবং অনঙ্গ মোহন রায়ের নামে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৪০৪ শতাংশ জমি কিনেছেন, যার দাম ১৬৭ কোটি টাকা। এছাড়া দুদক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে পি কে হালদার তার ভাই প্রীতিশ হালদারের কাছে ১ কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার ১৬৪ কানাডীয় ডলার পাচার করেন। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮০ কোটি টাকা।
ডায়ালসিলেট এম/

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *