ফাইল ছবি

ডায়ালসিলেট ডেস্ক::রাজধানীর ম্যাপল লিফ স্কুলে নবম শ্রেণিতে টিউশন ফি ৮ হাজার ৫৫০ টাকা। করোনা উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানটি ৫০ টাকা ছাড় দিয়েছে। অন্যদিকে টিকাটুলির শেরেবাংলা মহিলা মহাবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিফিন ফিও আদায় করা হয়েছে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজে টিউশনের পাশাপাশি অন্যান্য খাতের ফি আদায় করা হয়েছে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শুধু বিলম্ব ফি মাফ করে অন্যান্য ফি শতভাগ আদায় করা হচ্ছে। আবাসিক স্কুল-কলেজগুলো শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়ার ফিও আদায় করছে। অথচ সব শিক্ষার্থী এখন বাসায় অবস্থান করছে।

করোনাকালে এভাবে ফি আদায়ের কারণে নাভিশ্বাস উঠেছে অভিভাবকদের। মন্ত্রণালয়ের নির্লিপ্ততায় হতাশ তারা। দেশে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের চিত্র প্রায় একইরকম। ফি আদায়ে অনেকটাই রুদ্রমূর্তিতে আবির্ভূত হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ক্ষেত্রে নানা কৌশলের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান ইউটিউবে পাঠ তুলে (আপলোড) দিচ্ছে।

কোনো প্রতিষ্ঠান মেসেঞ্জারে বা হোয়াটসঅ্যাপে আর কোনোটি জুমে পাঠদানের ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া ফেসবুকে শিক্ষকের পাঠদানের ভিডিও তুলে দেয়া হচ্ছে। এখানেই শেষ নয়, কিছু প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পরীক্ষাও নিচ্ছে।

গোটা অর্থ পরিশোধ না করলে এ পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা হচ্ছে না। অভিভাবকরা বলছেন, করোনায় স্কুল-মাদ্রাসা ও কলেজ বন্ধ থাকায় পানি, বিদ্যুৎ, আপ্যায়নসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় বন্ধ আছে। শুধু শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেয়া হচ্ছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান আবার টিউশন ফি অনাদায়ি দেখিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের আংশিক বেতন-ভাতা দিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে এভাবে ফি আদায় অনৈতিক এবং অবৈধ হিসেবে উল্লেখ করেন তারা। পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার এ ব্যাপারে নির্লিপ্ত। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা না দেয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো অভিভাবকদের এক ধরনের শোষণ করছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ইতিপূর্বে অভিভাবক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উভয়পক্ষকে এ ব্যাপারে মানবিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। আমাদের প্রত্যাশা ছিল উভয়পক্ষ মানবিক হবে। অভিভাবকরা শিক্ষকের বেতন-ভাতা অব্যাহত রাখার স্বার্থে প্রয়োজনীয় ফি পরিশোধ করবেন।

আর টিফিন বা হোস্টেল চার্জসহ যেসব খাতে শিক্ষার্থীকে সেবা দেয়া যায়নি সেই ফি প্রতিষ্ঠান নেবে না। কিন্তু সেবা না দেয়া খাতে ফি আদায় অনাকাক্সিক্ষত। এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে বলব। তবে উচ্চ আদালতে এ নিয়ে মামলা বিচারাধীন থাকায় উদ্যোগ নিয়েও আদেশ জারি করা যায়নি।

অভিভাবকদের অভিযোগ, অনলাইনে এসব পাঠ আর পরীক্ষার বেশির ভাগই নামমাত্র। শিক্ষার্থীরা এর থেকে তেমন একটা উপকৃত হচ্ছে না। এরপরও অনেক প্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্লাস আর পরীক্ষাকে জিম্মি করার হাতিয়ার বানিয়েছে। পাওয়া অর্থ পরিশোধ না করলে ক্লাসের লিঙ্ক দেয়া হচ্ছে না। ফি আদায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটাই বেপরোয়া।

ম্যাপল লিফ স্কুলের অভিভাবক মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানের কাছে অভিভাবক ফি কমানোর আবেদন করলে হাস্যকরভাবে ৫০ টাকা কমিয়েছে। বিভিন্ন ধরনের সেবা শিক্ষার্থীরা না পেলেও সেসব খাতের ফি আদায় করা হচ্ছে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজের আশরাফুল ইসলাম নামে একজন অভিভাবক জানান, করোনাকালে যেখানে ফি মওকুফ করবে সেখানে প্রতিষ্ঠানটি আগাম ফি নিয়েছে।

পরিচ্ছন্নতা, লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন খাতের ফি পর্যন্ত আদায় করেছে। একই প্রতিষ্ঠানের মুজিবুর রহমান নামে আরেক অভিভাবক বলেন, প্রতিষ্ঠানটি শ্রেণি শিক্ষকদের লেলিয়ে দিয়েছিল শিক্ষার্থীর পেছনে। অনলাইন ক্লাসের নামে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ফেসবুকের সঙ্গে পরিচিত করায়। একদিকে ফি আদায় করেছে, আরেকদিকে শিক্ষার্থীদের ফেসবুকে ভিড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

অথচ ক্লাস না নিলেও অনলাইনে শিক্ষার্থীদের ‘ট্রমা’মুক্ত (মানসিক আঘাত) করার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রাখতে পারত। রাজধানীর দনিয়ায় একে হাইস্কুলের একাধিক অভিভাবক জানান, আগস্টে প্রতিষ্ঠানটিতে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া হয়। পরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানের খরচ না থাকলেও ২০০ টাকা করে আদায় করা হয়। এছাড়া জুন পর্যন্ত টিউশন ফি বাধ্যতামূলক আদায় করা হয়।

ওয়ারীর শেরেবাংলা মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অভিভাবক রেজা রায়হান বলেন, প্রতিষ্ঠান টিফিনের টাকাটা পর্যন্ত মওকুফ করেনি। তার দুই কন্যা দ্বিতীয় ও নবম শ্রেণিতে পড়ে। সম্পূর্ণ পাওনা আদায় করে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

শেরেবাংলা মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মনওয়ার হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, টিফিন ফি আদায়ের কথা সঠিক নয়। তারা এটা মওকুফ করেছেন। এছাড়া কেউ সমস্যা জানিয়ে আবেদন করলে সেটা বিবেচনা করা হয়েছে।

করোনাকালীন ৬ মাসের টিউশন ফি মওকুফের দাবিতে গত কয়েক মাস ধরে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের অভিভাবকরা আন্দোলন করছেন। আগামীকাল ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের অভিভাবকদের একটি সংবাদ সম্মেলন আছে জাতীয় প্রেস ক্লাবে।

এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজকদের একজন শমি ইব্রাহিম বলেন, উচ্চ আদালতের এক আদেশে নির্দেশনা ছিল যে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস থেকে বিরত রাখা যাবে না। কিন্তু মাস্টারমাইন্ডসহ কিছু স্কুল ক্লাসের লিঙ্ক দিচ্ছে না। প্রায় শতভাগ ফি আদায় করছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে তারা কর্মসূচিতে যাবেন।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল কবির দুলু বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। মহামারী পরিস্থিতিতে বর্তমানে অনেক অভিভাবক আর্থিক সংকটে। কেউ চাকরিচ্যুত আবার কেউ ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের পক্ষে টিউশন ফি ও অন্যান্য চার্জ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এ পরিস্থিতিতে অনেকটা কসাইয়ের ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। অভিভাবকদের অসুবিধার কথা লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়কে একাধিকবার জানিয়ে ৬ মাসের টিউশন ফি মওকুফে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা চেয়েও আমরা তা পাইনি। এটা খুবই হতাশাজনক।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *