ডায়ালসিলেট ডেস্ক::
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিম শিপনের মৃত্যুর পর দুই দফায় ভিডিও ফুটেজ গায়েব করার চেষ্টা করে মাইন্ড এইড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একাধিকবার চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে আনিসুলকে পিটানোর ভিডিও ফুটেজ প্রথমে তার ভাই এবং পরবর্তীতে পুলিশ উদ্ধার করে। পুলিশ ভিডিও ফুটেজ জব্দ করার প্রায় আধা ঘণ্টারও বেশি সময় পর যখন আনিসুলের মৃতদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বের করে আনা হয় ঠিক তখন ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে এটা হাসপাতালের কেউ কৌতূহলী হয়ে ভাইরাল করে দেয়। পুলিশি রিমান্ডে থাকা আসামিরা এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তাদের। সূত্র জানায়, ফোমে ঘেরা বিশেষ কক্ষ থেকে মৃতপ্রায় আনিসুলকে বের করে তার শ্যালক, ছোট বোন-বোন জামাই একটি এম্বুলেন্সযোগে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যান। এ সময় তার বড় ভাই রেজাউল করিম ও বাবা ফাইজুদ্দিন আহমেদ দুজনে মাইন্ড এইড হাসপাতালেই অবস্থান করছিলেন। আনিসুলকে নিয়ে এম্বুলেন্সে বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই হাসপাতালের গেটে তালা দেন তার বড় ভাই রেজাউল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাসপাতালের ম্যানেজার ইমরানকে ডেকে রেজাউল বলেন, সিসি টিভি (ভিডিও) ফুটেজ কোথায় সেখানে নিয়ে যেতে। এ সময় তারা কালক্ষেপণের জন্য গড়িমসি করতে থাকে। একাধিকবার বলার পরেও আইটি কক্ষে নিয়ে না গেলে উত্তেজিত হয়ে পড়েন আনিসুলের ভাই। পরবর্তীতে হাসপাতালের এক কর্মচারী আইটি কক্ষে নিয়ে যান। গিয়ে দেখেন সে ভিডিও ফুটেজ ডিলিট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ সময় রেজাউল করিম উত্তেজিত হয়ে বারবার ভিডিও ফুটেজ দেখতে চান। তখন কম্পিউটার ডেস্কে থাকা ব্যক্তি ভিডিও ফুটেজটি তাকে দেখান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ফুটেজটি তার মোবাইল ফোনে ভিডিও করে নেন। তখন তারা বুঝে যায় এই ভিডিও ডিলিট করে আর কোনো লাভ নেই। এ সময় ডিউটি ডাক্তারের বক্তব্যের ভিডিও করেন রেজাউল। ডিউটি ডাক্তার তাকে জানান, মাইন্ড এইড হাসপাতালে থাকতেই আনিসুল মারা গেছেন। কিছু সময়ের মধ্যে পুলিশ চলে আসে। পুলিশ এ সময় হাসপাতালের কর্মচারীদের নানা প্রশ্ন করছিলেন। তখন আনিসুলের ভাই পুলিশকে অনুরোধ করে বলেন, আগে ভিডিও ফুটেজ জব্দ করেন, তারপরে প্রশ্ন। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও ফুটেজ জব্দ করে। পরবর্তীতে আসামিদের গ্রেপ্তার করে।
সূত্র জানায়, চিকিৎসার নামে মারধর করে এএসপি আনিসুল করিম শিপনকে হত্যার অভিযোগে মাইন্ড এইড হাসপাতালের পরিচালক ফাতেমা খাতুন ময়না (৪০)কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে হাসপাতালটির দুই পরিচালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফাতেমা খাতুন ওরফে ময়না নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিলেও তার কোনো ডাক্তারি সনদ নেই। সে বগুড়া থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে সে এনআইএমডিটি ম্যাটস অ্যান্ড নার্সিং ইনস্টিটিউটে একটি কোর্স করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) কিছুদিন মনোরোগ বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ নেন। প্রকৃতপক্ষে সে কোনো এমবিবিএস চিকিৎসক না হয়েও নিজেকে ডাক্তার বলে পরিচয় দিতেন। তার গ্রামের বাড়ি বগুড়া। সে স্থায়ীভাবে ঢাকায় থাকেন না। বেশির ভাগ সময় বগুড়ায় থাকেন। মাঝেমধ্যে ঢাকায় আসেন। অনেকদিন আগে ডাক্তার নিয়াজ মোর্শেদের সঙ্গে তার পরিচয় থেকে হাসপাতাল ব্যবসায় যুক্ত হন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ময়না জানায়, সে মাঝেমধ্যে হাসপাতালে আসেন। ডা. নিয়াজের সঙ্গে ব্যবসায়ীক আলাপ করে আবার বগুড়া চলে যান। হাসপাতালে খুব বেশি আসা হয় না তার। কার্ডিয়াক (হৃদযন্ত্রে) সমস্যা থাকায় বর্তমানে একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ময়না। তিনি একজন তালাকপ্রাপ্ত নারী। দশ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে তার পূর্বের স্বামীর সঙ্গে থাকেন। ময়না সাধারণত এককভাবে জীবনযাপন করেন। সম্প্রতি ডা. নিয়াজের (৩১) কোমর থেকে নিচের অংশ পুরোটাই অবস হওয়ায় বর্তমানে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি আছেন। প্রায় দেড় মাস আগে তিনি বিয়ে করেন। তদন্ত সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানিয়েছে, বাইরে থেকে বড় বড় বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালের প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন চিকিৎসককে হায়ার করে আনা হতো হাসপাতালে রোগী দেখতে। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক মোল্লা মানবজমিনকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ফাতেমা খাতুনকে তার ধানমণ্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১২ জন। তবে হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াজ এবং ফাতেমা খাতুন ওরফে ময়না অসুস্থ থাকায় বর্তমানে তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ/

