ডায়ালসিলেট ডেস্ক :কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজধানীর বাজারগুলোতে বোতলজাত সয়াবিন তেলের তীব্র সংকট চলছে। কোথাও কোথাও সয়াবিন তেল মোটেই পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু পাওয়া গেলেও তা খুবই কম এবং চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত সামান্য। বিশেষ করে এক ও দুই লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ কম। একদিকে সরবরাহ কম অন্যদিকে গায়ের মূল্যে বিক্রি হচ্ছে না। গায়ের মূল্য ঘষে তুলে ফেলা হয়েছে। নির্দিষ্ট মূল্যের থেকে ১৬ থেকে ২০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে এসব তেল। তবে হাতেগোনা কয়েকটি দোকানে তেল বিক্রি করছে গায়ের রেটেই। খোলাবাজারে প্রতি কেজি তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায়। তেলের এই সংকট ও ঊর্ধ্বমুখী দামে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ক্রেতা ও বিক্রেতারা দুষছেন সিন্ডিকেটকে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে প্রতিদিনই ক্রেতা-বিক্রেতারা বিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাজারে ঘোরাঘুরি করে খোলা তেল কিনেই বাড়ি ফিরছেন ক্রেতারা।বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমপ্রতি পাম ও সয়াবিন তেল আমদানিতে শুল্ক-কর কমিয়েছে সরকার। এতে প্রতিকেজি ভোজ্য তেল আমদানিতে শুল্ক-কর ১০-১১ টাকা কমানো হয়। কিন্তু এতেও আমদানি বাড়েনি। বরং বিভিন্ন বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট সবচেয়ে বেশি।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!সংশ্লিষ্টরা জানান, কোনো পণ্যের ওপর শুল্ক-কর কমানোর অর্থ হলো- ওই পণ্যের আমদানি বাড়বে এবং দাম কমবে। গত অক্টোবরে সয়াবিন ও পাম তেল আমদানিতে দুই দফায় শুল্ক-কর কমায় সরকার। শুল্ক-কর কমিয়ে তা নামিয়ে আনা হয় ৫ শতাংশে। কিন্তু দেশের বাজারে পণ্যটির দাম কমার বিপরীতে উল্টো বাড়তে দেখা গেছে।
ক্যাব’র কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, সংকটের কোনো কারণ নেই। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়ার পর সাপ্লাই বন্ধ করে দেন। যখন সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায় তখন তারা সরকারের কাছে প্রস্তাব দেবে দাম বাড়ানোর। এ কাজটা আমরা দীর্ঘদিন দেখে আসছি, এবারও তাই হবে। সরকারকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এখন যে মজুতগুলো আছে, কোথায় কী অবস্থায় আছে- এগুলো তদারকি করে দেখতে হবে। কিন্তু সমস্যা হলো- যখন এসব তদারকি করতে যাবে তখন ব্যবসায়ীরা বলবে আমাদের হয়রানি করতে আসছে। ওরা কোনো নিয়ম-কানুন মানতে চান না। এখানে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করে জাত-ধর্ম নির্বিশেষে বিচার করতে হবে।দোকানিরা বলছেন, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েল লিটারপ্রতি ৫ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে খোলা পাম অয়েল ১৬০-১৬২ এবং সয়াবিন ১৭০-১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৬৭ টাকা, দুই লিটার ৩৩৪ টাকা ও ৫ লিটার ৮১৮ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে তেল সরবরাহ কমেছে বলে দাবি তেল আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর।
টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তাসলিম গণমাধ্যমে জানান, সরকার শুল্ক-কর যা কমিয়েছে, তার চেয়ে বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে বেশি। কোম্পানিগুলো লোকসানের ঝুঁকিতে থাকলেও সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। চলতি মাসে সরবরাহ বাড়িয়েছে।
ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা ২২ লাখ টন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় ২ লাখ টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি হয় ২৩ লাখ টন। আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে দেশে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার টন। গত বছরের একই সময়ে এই আমদানির পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৬০ হাজার টন। সে হিসাবে আমদানি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ।
রাজধানীর মিরপুর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুদি দোকানগুলোতে বোতলজাত সয়াবিন চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নেই। খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে কয়েকটি কোম্পানি ছাড়া অন্য ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। দু’-একটি দোকানে তেল পাওয়া গেলেও রাখা হচ্ছে গায়ের দাম থেকে বেশি। ক্রেতারা বলছেন, দোকানিরা আগেই কিনে স্টক করে রেখেছিলেন। যা এখন বেশি দামে বিক্রি করছেন। বিক্রেতারা বলছেন, আমাদের এখানে কিছুই নাই। কোম্পানি যেভাবে মাল সরবরাহ করছে। আমরা সেভাবেই বিক্রি করছি। মহিউদ্দীন নামে এক মুদি দোকানি বলেন, বাজারে চাহিদা বেশি থাকলেও কোম্পানি সরবরাহ করছে কম। ফলে কোম্পানিও তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে এই সুযোগে। ৫-১০ টাকা লাভ হলেই আমরা বিক্রি করে দেই। শরীয়তপুর জেনারেল স্টোরের মালিক দুলাল হোসেন বলেন, ক্রেতারা গায়ের রেটে সয়াবিন তেলের বোতল কিনতে চান। দুই লিটার ফ্রেশ কোম্পানির তেলের বোতল আমি কিনেছি ১৪৫ টাকা দরে, বিক্রি করছি ১৫০ টাকায়। বোতলের গায়ে মূল্য ৩৩৪ টাকা উল্লেখ থাকা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, গায়ের মূল্য দেখে লাভ নেই। বেশি দামে কিনে আমি কম দামে তো বিক্রি করতে পারবো না। আমিন এন্টারপ্রাইজের দোকানি সাগর হোসেন বলেন, সিন্ডিকেট ভাঙলে এমনিতেই সয়াবিন তেলের দাম কমে আসবে।
মিরপুরের বাসিন্দা সালাহউদ্দীন কাজী বলেন, আমি সিঙ্গাড়া সমুচা বিক্রি করি। বেশির ভাগ সময়ই আমাকে তেল কিনে রাখতে হয় আগে থেকেই। গত তিন মাস আগে যে তেল খোলা বাজারে ১৪০ টাকায় কিনেছি, এখন সেটা কিনতে হচ্ছে ১৯০ টাকায়। কিন্তু আমার সিঙ্গাড়া, সমুচা, চপ এগুলোতে দাম বাড়াতে পারছি না।

