আন্তর্জাতিক ডেস্ক::করোনা প্যানডেমিকে সারা বিশ্ব আক্রান্ত হওয়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান এবং বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল যে তারা এই অতিমারি আটকাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। চীনের উহান থেকেই যে সারা বিশ্বে এই মারণ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে তা সামনে আসতেই প্রশ্ন ওঠে, সব জেনে শুনে কেন আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলে কোনও নিয়ন্ত্রণ আনেনি বেইজিং। এবার সেই বেইজিংই করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থানটি দখল করতে চলেছে । ল্যাবরেটরিগুলোতে চোখ রাখলে দেখা যাবে বিজ্ঞানীরা লম্বা লম্বা করিডোরে হ্যাজমাট স্যুট পরে ছোট ছোট টেস্ট টিউবে তরল জাতীয় পদার্থ ভরছেন এবং তা বাক্সবন্দী করা হচ্ছে সরবরাহের জন্য। দক্ষিণ বেইজিংয়ের ল্যাবরেটরিগুলোতে প্রতিদিন হাজার হাজার ডোজ ভ্যাকসিন উৎপন্ন হচ্ছে , গোটা কার্যক্রমের দায়িত্বে রয়েছে চীনা ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানি সিনোভ্যাক। তাদের দাবি, আগামী বছরের গোড়ার দিকে বিশ্বজুড়ে এই ভ্যাকসিন ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে। মানব দেহে যে ৪ টি চীনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলছে তার মধ্যে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে সিনোভ্যাক। যুক্তরাজ্য এবং আমেরিকার মতো দেশগুলোতেও ভ্যাকসিনের ট্রায়াল প্রায় শেষ পর্যায়ে। সিনোভ্যাকের সিইও ইয়িন ওয়েডং জানিয়েছেন, তাদের লক্ষ্য গোটা বিশ্বে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেয়া। পশ্চিমের দেশগুলো থেকে ছাড়পত্র মিললে তারা আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলোতেও এই ভ্যাকসিন পৌঁছে দেবে। ইতিমধ্যেই করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিজেদের বিজয়ী বলে দাবি করা চীন, বিশ্বে ভ্যাকসিন বিতরণের মতো বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিশেজ্ঞদের দাবি, করোনা মহামারির আঁতুরঘর বলে পরিচিত চীনের ওপর ক্ষুব্ধ বিশ্বের একাধিক দেশ। তাই ভ্যাকসিন বিতরণের মধ্যে দিয়ে ক্ষোভ প্রশমিত করার কৌশল নিয়েছে চীন সরকার। বিশ্বের দরবারে পৌঁছানোর আগে প্রথম দরকার দেশবাসীর আস্থা অর্জন করা। কারণ মহামারির প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার পরও সেদেশের সরকার পুরো ঘটনাটি চেপে গিয়েছিলো, সংবাদমাধ্যমকেও মুখ খোলার অনুমতি দেয়া হয়নি। এমনকি সত্য ঢাকতে নানারকম গল্প ফাঁদা হয়েছিল, এমনটাই দাবি করেছেন চীনের সেন্টার অফ ডিজিসের প্রধান মিস্টার ইয়িন এবং গাও ফু। জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য সিনোভ্যাকের ৩০০০ কর্মীর ওপর এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে, এটা প্রমাণ করতে যে এই ভ্যাকসিন আদপে সুরক্ষিত এবং নিরাপদ। ক্লিনিক্যালি ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে তা মানব দেহে প্রবেশ করানো হচ্ছে যাতে কেউ অসুস্থ হয়ে না পড়েন। গোটা বিশ্বের আস্থা অর্জনের জন্য সিনোভ্যাকের কার্যকলাপে সম্পৃক্ত হয়েছে বেইজিংও। গবেষণাগারের গুণগতমান পর্যবেক্ষণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রেস সফরের আয়োজন করা হয়েছে ল্যাবরেটরিগুলোতে। প্রথম ধাপে সরকারি আধিকারিক, মেডিকেল কর্মী এবং সীমান্তে কর্মরত আধিকারিকদের কাছে এই ভ্যাকসিন পৌঁছে দেবার লক্ষমাত্রা রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যেই সিনোভ্যাক আপদকালীন টিকাকরণ হিসেবে ১০ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন উৎপন্ন করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছে ফেজ- থ্রি ট্রায়ালের আগে এই ভ্যাকসিন বিতরণের ঝুঁকি রয়েছে। যদিও আত্মপক্ষ সমর্থন করে সিনোভ্যাকের সিইও ইয়িন বলেছেন গোটা পরীক্ষা নিরীক্ষা তাঁর তত্ত্বাবধানে হচ্ছে , মে মাসে প্রকাশিত একটি সাইন্স জার্নালের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে ইয়িন জানিয়েছেন , ইতিমধ্যেই এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগ করা হয়েছে বাঁদর এবং ইঁদুরের শরীরে , দেখা গেছে সফলভাবেই এন্টিবডি তৈরী হয়েছে প্রাণীগুলোর দেহে । চলতি মাসে ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবকের ওপর তাদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছিল , কারোর দেহেই কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি । পাশাপাশি ৯০ শতাংশ রোগীর দেহে এন্টিবডি তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিস্টার ইয়িন। সিনোভ্যাক আশা করে যে ,এই বছর চূড়ান্ত পর্যায়ে টেস্টগুলো থেকে তৃতীয় ধাপের ডেটা বিশ্লেষণ শুরু করা সম্ভব হবে। ব্রাজিল, তুরস্ক এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলো যেখানে এই মহামারি ভয়াবহ আকার নিয়েছে অথচ উন্নত পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই সেখানে ভ্যাকসিন পৌঁছে দিতে চায় সিনোভ্যাক পাশাপাশি তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ এবং চিলিও , জানিয়েছেন মিস্টার ইয়িন। তৃতীয় ধাপে প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে এই টিকাকরণের আওতায় এনে ডেটা সংগ্রহ করা হবে, সব ঠিকঠাক থাকলে পরের ধাপে প্রবীণ এবং শিশুদের ওপরে এর প্রতিক্রিয়া কী হয় তা দেখা হবে বলে জানিয়েছে সিনোভ্যাক।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *