ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারত প্রতিবেশি রাষ্ট্র। দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক আছে। দুই দেশের সম্পর্ক ন্যায্যতা, পারস্পারিক আস্থা, সম্মান ও বিশ্বাসের। দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে নয়। কিন্তু দেশের কিছু লোক এটা নিয়ে অপপ্রচার চালায়। এর মাধ্যমে তারা দেশের মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করে।
শনিবার দুপুরে ভারত সরকারের অর্থায়নে সিলেট নগরীর ধোপাদিঘী সংস্কার ও সৌন্দর্য্যবর্ধন, কাস্টঘরে সুইপার কলোনিতে আবাসিক ভবন এবং চারাদিঘীরপাড়ে স্কুলের বহুতল ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকার রয়েছে। সব ধর্মেই কিছু উশৃঙ্খল লোক আছে। তারা মাঝে মধ্যে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মন্দ কাজ করে। কিন্তু যারা বিবেকবান তাদেরকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। যাতে এমন কোন পরিস্থিতি তৈরি না হয়, যাতে দেশ ও জাতির বড় ক্ষতি হয়ে যায়।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, দুই প্রতিবেশি দেশের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমান সরকার অর্থাৎ শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর দুই দেশের অমীমাংসিত অনেক বড় বড় সমস্যার সমাধান হয়েছে। ভারতের সাথে ছিটমহল নিয়ে যে সমস্যা ছিল সেটির সমাধান হয়েছে। সীমানা নির্ধারিত না হওয়ায় আগে ছিটমহলে দুইদেশের কেউই সরকারি স্কুল করতো না। ছিটমহলবাসীর বিয়ের কাবিন রেজিস্ট্রি হতো না। তারা জায়গা-জমি বিক্রি করতে পারতেন না। এমনকি তারা হাসপাতালেও ভর্তি হতে পারতেন না।
এই সমস্যা সমাধানে ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চেষ্টায় মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হয়। কিন্তু পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলে সমস্যার সমাধান আর হয়নি। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে। বিরোধপূর্ণ ভূমির মধ্যে ১৭ হাজার একর বাংলাদেশ ও ভারত ৭ হাজার একর পেয়েছে। বিরোধপূর্ণ সমূদ্রসীমানার সমাধান হয়েছে। ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ১৯ হাজার ৪শ’ বর্গকিলোমিটার। এতেই বোঝা যায়, ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বার্থ বিক্রি করে নয়, ন্যায্যতা ও বিশ্বাসের।
মন্ত্রী বলেন, ভারত থেকে সাড়ে ৫টাকা দামে বিদ্যুৎ কিনে আনা হয়। অথচ দেশে উৎপাদন করতে হলে খরচ হয় ৭ টাকা। ভারত তাদের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ আমাদের কাছে বিক্রি করায় আমাদেরকে উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ করতে হচ্ছে না। আবার উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দানে আমরা বিদ্যুৎ পাচ্ছি। এতে ভারত না বাংলাদেশ লাভবান হচ্ছে সেটা আমাদেরকে বুঝতে হবে।
দুঃসময়ে যারা বাংলাদেশের পাশে ছিল তাদের কোন ক্ষতি চাইবে না বাংলাদেশ এমন মন্তব্য করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল আহমদ বলেন, ১৯৭১ সালে আমাদেরকে ভারত, রাশিয়া, আমেরিকার বিভিন্ন সংস্থা এবং ইউরোপের কিছু কিছু দেশ সাহায্য করেছে। আমরা তাদের খারাপ কাজের সমর্থন করবো না। আবার তাদের সাথে শত্রুতা বা বিপদে ফেলার বিষয়টিও চাইবো না। আমাদের জন্য যারা যতটুকু করেছে আমরা মানুষ হলে সেগুলো মনে রাখতে হবে।
মন্ত্রী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট মেরামতের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়া সিটি করপোরেশনের বর্ধিত অংশের জন্য প্রকল্প তৈরি করে পাঠালে সেই প্রকল্পগুলো অনুমোদন দেয়ার ব্যাপারেও আশ্বস্ত করেন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সভাপতিত্বে এবং কাশমির রেজা ও ফাতেমা রশিদ সাবা’র উপস্থাপনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মিসবাহ উদ্দিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রকল্প সংক্ষেপ তুলে ধরেন সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান।
উল্লেখ্য, ভারত সরকারের অর্থায়নে ২৪ কোটি ২৮ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে নগরীর ধোপাদীঘির তীর সংরক্ষণ, কাষ্টঘরে ৬ তলাবিশিষ্ট ক্লিনার কলোনি ও চারাদীঘিরপাড় মজলিস আমীন স্কুলের ৬ তলাবিশিষ্ট ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

