মনজু চৌধুরী ॥ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মুখপাত্র নূপুর শর্মা ও দলটির মিডিয়া শাখার প্রধান নবীন কুমার জিন্দালের আপত্তিকর মন্তব্যে ও অশালিন কটুক্তির জেরে দেশব্যাপী বিক্ষোভের অংশ হিসেবে মৌলভীবাজারে সাপ্তাহ জোড়ে ধর্মপ্রান মুসল্লীদের প্রতিবাদে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। দলমত নির্বিশেষে গ্রাম থেকে শহর সর্বত্রই মিছিল শ্লোগানে উত্তাল ছিল পুরো মৌলভীবাজার জেলা। এমন বিক্ষোভ নিকঠ অতীতে আর কখনো চোখে পড়েনি।
সোমবার ১৩ জুন সকাল ১১টার দিকে মৌলভীবাজার শহরের টাউন ঈদগাহ প্রাঙ্গণে জেলা উলামা পরিষদের ব্যানারে শীর্ষ আলেমদের ডাকে প্রবল বৃষ্টিতে ভিজে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্টিত হয়েছে। কর্মসূচিতে জেলার বিভিন্ন কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু সাধারণ মুসল্লীরাও অংশ নেন।
জেলায় দীর্ঘদিন যাবত ধর্মীয় নানা ইস্যু নিয়ে আন্দোলন কর্মসূচিতে ধর্মীয় অঙ্গনের শীর্ষ মুরব্বী শায়খুল হাদীস মরহুম আল্লামা আব্দুল বারী ধর্মপুরী নেতৃত্বে দিয়ে আসলেও এবারই প্রথম চলমান ইস্যুতে শীর্ষ এই আলেমের অনুপস্থিতিতে নেতৃত্ব দেন বরুনার পীর প্রখ্যাত আলেম ও শেখবাড়ী কওমী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি মাওলানা রশীদুর রহমান ফারুক।
বরুনার পীর মুফতি মাওলানা রশীদুর রহমান ফারুক এর সভাপতিত্বে ও শহরের দারুল উলুম মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা মুজাহিদুল ইসলাম ও জগন্নাথপুর বায়তুল আমান জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল মুগ্নী’র যৌথ সঞ্চালনায় বিক্ষোভ পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, রায়পুর মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা গিয়াস উদ্দিন,নুরুল কোরআন মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও রাজনগর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আহমদ বিলাল,উলামা পরিষদের সহ-সভাপতি মাওলানা মুফতি হাবিবুর রহমান,মাওলানা সৈয়দ মুজাদ্দিদ আলী,মুফতি জিয়া উদ্দিন ইউসুফ, তাবলীগ জামাতের মুরব্বী শেখ আব্দুর রহিম,বরুনা মাদ্রাসার শিক্ষা সচিব মাওলানা সাইফুর রহমান,মাওলানা সাইফুর রহমান ফয়সল,হাফিজ আজমানসহ জেলার বিভিন্ন কওমী মাদ্রাসার শীর্ষ পর্যায়ের আলেমরা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন,ভারতে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) ও উম্মুল মু’মিনিন হজরত আয়েশা (রাঃ) কে নিয়ে যে অশালিন,কুরুচীপূর্ণ কটূক্তি ও অবমাননাকর মন্তব্য করা হয়েছে,এই সমাবেশ থেকে তাঁর তীব্র নিন্দ,প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি। এসময় ভারত সরকারের উদ্দেশ্যে বক্তারা বলেন,নুপূর শর্মা ও নবীন কুমার জিন্দালকে শুধুমাত্র দল থেকে বহিস্কার করলেই হবেনা,অনতিবিলম্বে এই দুইজনকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, তাদেরকে ফাঁসির কাষ্টে ঝুলাতে হবে। নতুবা মনে রাখবেন,ধর্মনিরপেক্ষর দেশ ভারতে যেভাবে মুসলিম নির্যাতন হচ্ছে, ইনশাআল্লাহ আজকে গোটা বিশ্বের মুসলমানরা যেভাবে জেগে উঠছে তা ভারত সরকারকে কোনভাবেই ক্ষমা করা হবেনা। এসময় বক্তারা বাংলাদেশ সরকারের কাছে চলমান সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাশেরও আহবান জানান।
এদিকে প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে মুষলধারে বৃষ্টির মদ্যেই শুরু হয় কয়েক হাজার আলেম-উলামা,মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মুসল্লীদের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ মিছিল। বিক্ষোভ মিছিলটি টাউন ঈদগাহ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে চৌমুহনা হয়ে কুসুমবাগ এলাকার এসআর প্লাজার সামনে গিয়ে মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়। মিছিলে বিক্ষোভকারীরা নুপূর শর্মা ও নবীন কুমার জিন্দালকে গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবি জানিয়ে নানা প্রতিবাদী শ্লোগান দিয়ে পুরো রাজপথ দখলে রাখেন। এসময় কিছুক্ষণের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় কুসুমবাগ এলাকায়। মিছিল শেষে একদিকে বৃষ্টি অপরদিকে বরুনার পীর মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক হাজারো প্রতিবাদী মুসল্লীদের নিয়ে মোনাজাতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
অপরদিকে কর্মসূচি ঘিরে যেকোন ধরনের পরিস্থিতিতে এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেশ তৎপর থাকতে দেখা যায়। শহরের কুসুমবাগ এলাকায় মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: জিয়াউর রহমনের নেতৃত্বে অবস্থান করতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *