ডায়ালসিলেট ডেস্ক::

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রোধে সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এসব নির্দেশনা দেন।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রস্তুতকারী ব্যক্তির নাম, পদবি, মোবাইল ফোন নম্বরসহ সিল ও তাঁর সংক্ষিপ্ত স্বাক্ষর ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে প্রথম নির্দেশনার অংশে। যাতে পরোয়ানা কার্যকরকারী ব্যক্তি পরোয়ানার সঠিকতা সম্পর্কে কোনো সন্দেহ হলে পরোয়ানা প্রস্তুতকারীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। এর সঠিকতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন। এটিসহ আরও বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়।

প্রথম নির্দেশনায় উচ্চ আদালত বলেছেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যুর সময় পরোয়ানা প্রস্তুতকারী ব্যক্তিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৭৫ ধারার বিধান অনুসারে নির্ধারিত ফরম চাহিদা অনুযায়ী সঠিক ও সুস্পষ্টভাবে তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে। যেমন:

ক) যে ব্যক্তি বা যেসব ব্যক্তি পরোয়ানা কার্যকর করবেন, তাঁর বা তাঁদের নাম, পদবি ও ঠিকানা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

খ) যাঁর প্রতি পরোয়ানা ইস্যু করা হচ্ছে, অর্থাৎ অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম, ঠিকানা, এজাহার বা নালিশ মামলা কিংবা অভিযোগপত্রে প্রণীত সংশ্লিষ্ট মামলার নম্বর ও ধারা এবং আদালতের মামলার নম্বর ও ধারা সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

গ) সংশ্লিষ্ট বিচারক বা ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষরের নিচে নাম ও পদবির সিল এবং ক্ষেত্রমতে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারকের নাম ও পদবির সিলসহ বাঁ পাশে বর্ণিত সংশ্লিষ্ট আদালতের সিলসহ ব্যবহার করতে হবে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রোগ্রাম অফিসার আওলাদ হোসেনের ভুয়া পরোয়ানায় আটকের বৈধতা নিয়ে তাঁর স্ত্রী উচ্চ আদালতে একটি রিট করেছিলেন। এই রিটের ধারাবাহিকতায় আজ উচ্চ আদালত এসব নির্দেশনাসংবলিত সিদ্ধান্ত দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এমাদুল হক বশীর। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। পরে এমাদুল হক বশীর বলেন, আদালত সাত দফা নির্দেশনা দিয়ে রিট আবেদনটি হাইকোর্টের রিট এখতিয়ারভুক্ত বেঞ্চে উপস্থাপন করতে বলেন। এর আগে পরোয়ানার নিচে শুধু সিল থাকত। উচ্চ আদালত এখন পরোয়ানা প্রস্তুতকারীর সিল, পদবি ও ফোন নম্বর উল্লেখ করতে বলেছেন। এটি ভুয়া পরোয়ানা রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

আওলাদ হোসেনকে একের পর এক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখিয়ে এক কারাগার থেকে আরেক কারাগারে এবং এক আদালত থেকে অন্য আদালতে হাজির করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলে তাঁকে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়নি, তা নিশ্চিতে হাইকোর্টে হাজির করার জন্য নির্দেশনা চেয়ে রিট করেছেন আওলাদের স্ত্রী।

রিটের নথিপত্র অনুসারে জানা যায়, নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে কক্সবাজারের এক মামলায় গত ৩০ অক্টোবর আওলাদকে আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেদিন আওলাদকে ঢাকার আদালতে হাজির করা হলে তাঁর জামিন চাওয়া হয়। ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আশুলিয়া) জামিন নামঞ্জুর করে নথিপত্র কক্সবাজারের আদালতে পাঠানোর আদেশ দেন।

রিট আবেদনকারীপক্ষ জানায়, নথিপত্র কক্সবাজারের আদালতে পৌঁছার পর আওলাদের জামিন চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ নভেম্বর কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর দেওয়া আদেশে বলা হয়, ওই মামলায় আওলাদ নামের কোনো আসামি নেই। গ্রেপ্তারি পরোয়ানাটি ট্রাইব্যুনাল থেকে ইস্যু হয়নি। ওই পরোয়ানা সৃজন করা হয়েছে। তাঁকে (আওলাদ) মুক্তি দেওয়া হোক। কক্সবাজারের আদালতের দেওয়া আদেশ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছায়। আদেশ পৌঁছার পর ঢাকা কারাগার থেকে জানানো হয়, নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে রাজশাহীর এক মামলায় (১৩৭/২০১৬) আওলাদকে রাজশাহীর আদালতে নিয়ে যাওয়া হবে।

এরপর আওলাদকে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনাল গত ২৪ নভেম্বর আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এই ট্রাইব্যুনালের নয়, সার্বিক পর্যালোচনায় ওই মামলায় আওলাদ আসামি নন। তাঁকে অব্যাহতি ও মুক্তি দেওয়া হোক। এরপর ট্রাইব্যুনালের ওই আদেশ রাজশাহীর কারাগারে পৌঁছায়। তখন জানানো হয়, বাগেরহাটের একটি সিআর মামলায় (২৪৫/১৭) আওলাদকে বাগেরহাটে নিয়ে যাওয়া হবে। পরে আওলাদকে বাগেরহাট আদালতে হাজির করা হলে তাঁর জামিন চাওয়া হয়। ১ ডিসেম্বর বাগেরহাটের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশে বলা হয়, হাজিরাপরোয়ানামূলে হাজির আওলাদ এই মামলায় আসামি নন। হাজিরাপরোয়ানাও এই আদালত কর্তৃক ইস্যু করা হয়নি।

বিচারকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অস্তিত্বহীন স্মারক নম্বর ব্যবহার করে পরোয়ানাটি প্রস্তুত করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। আদালতের ওই আদেশ বাগেরহাট কারাগারে পৌঁছায়। তখন জানানো হয়, শেরপুরের একটি মামলায় (সিআর ১৫৯/১৮) আওলাদকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *