২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সারা বিশ্ব

মাকে হত্যার পর ছেলের আত্মহত্যা, চ্যাটজিপিটি-মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে মামলা

মাকে হত্যার পর ছেলের আত্মহত্যা, চ্যাটজিপিটি-মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে মামলা চ্যাটজিপিটির ইলাস্ট্রেশন

যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের ৮৩ বছর বয়সী এক নারীর পরিবার গতকাল বৃহস্পতিবার ওপেনএআই ও মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে ‘বেআইনি মৃত্যুর’ অভিযোগে একটি মামলা করেছে। তাদের অভিযোগ, চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি তাদের ছেলের মানসিক বিভ্রমকে আরও উসকে দিয়েছিল এবং এর ফলেই ওই নারী খুন হন।

সান ফ্রান্সিসকোর ক্যালিফোর্নিয়া সুপিরিয়র কোর্টে দায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ৩ আগস্ট ওল্ড গ্রিনউইচে নিজেদের বাড়িতে ৫৬ বছর বয়সী স্টেইন-এরিক সোলবার্গ তাঁর মা ৮৩ বছর বয়সী সুজান অ্যাডামসকে পিটিয়ে এবং শ্বাস রোধ করে হত্যা করেন। এরপর সোলবার্গ নিজেই নিজেকে ছুরিকাঘাত করে আত্মহত্যা করেন। সোলবার্গ একসময় প্রযুক্তি খাতে কাজ করতেন।

কয়েক মাস ধরে ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে ‘বেআইনি মৃত্যুর’ অভিযোগে মামলার সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

এর আগে গত আগস্টে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার ১৬ বছর বয়সী অ্যাডাম রেইনের মা–বাবা ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তাঁদের দাবি, চ্যাটজিপিটি তাঁদের ছেলেকে আত্মহত্যার পদ্ধতি সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছিল।

গত নভেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে দায়ের করা একাধিক মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের নির্ভরতা ও নিজেকে আঘাত করার জন্য প্ররোচিত করেছে, যার মধ্যে চারটি আত্মহত্যার ঘটনাও রয়েছে।

২৬ বছর বয়সী জোশুয়া এনেকিংয়ের পরিবারের অভিযোগ, তিনি আত্মহত্যার কথা প্রকাশ করার পর চ্যাটবট তাঁকে বন্দুক সংগ্রহ করার বিস্তারিত তথ্য দিয়েছিল।

১৭ বছর বয়সী আমাউরি লেসির পরিবারের দাবি, ‘কীভাবে ফাঁসির ফাঁস বাঁধতে হয় এবং শ্বাস না নিয়ে তিনি কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারবেন’—চ্যাটজিপিটি তাঁকে সেই বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছিল।

সর্বশেষ এ মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, চ্যাটজিপিটির সঙ্গে কয়েক মাস ধরে কথোপকথনের ফলে সোলবার্গের বিভ্রমজনিত চিন্তাভাবনা আরও শক্তিশালী হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর মাকে হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, সোলবার্গ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওগুলো পোস্ট করেছিলেন। তাতে দেখা যায়, ‘চ্যাটজিপিটি তাঁকে বলেছিল, তিনি এআই চ্যাটবটটির বোধজ্ঞান “জাগিয়ে তুলেছেন”।’

মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়েছে, কথোপকথনগুলোয় দেখা যায় ‘স্টেইন-এরিকের বিভ্রান্তিমূলক চিন্তার প্রতিটি সূত্রকে চ্যাটজিপিটি আগ্রহের সঙ্গে গ্রহণ করেছে এবং সেগুলোকে এমন এক জগতে পরিণত করেছে, যা স্টেইন-এরিকের ধ্যানজ্ঞান হয়ে উঠেছিল।’

মামলায় অভিযোগ করা হয়, চ্যাটবটটি সোলবার্গের প্যারানয়াজনিত বিশ্বাসকে আরও জোরালো করেছিল। চ্যাটজিপিটি তাঁকে বলেছিল, তাঁর ওপর নজর রাখা হচ্ছে এবং তাঁর মায়ের প্রিন্টারটি হচ্ছে একটি নজরদারি যন্ত্র।

যখন সোলবার্গ উদ্বেগ প্রকাশ চ্যাটজিপিটিকে বলেছিলেন, তাঁর মা তাঁকে বিষ প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করেছেন, তখন চ্যাটজিপিটি সেই উদ্বেগকে চ্যালেঞ্জ করার পরিবর্তে তাতে সায় দিয়েছিল।

এই মামলার প্রতিক্রিয়ায় ওপেনএআইয়ের এক মুখপাত্র গতকাল বলেন, ‘এটি খুবই হৃদয়বিদারক একটি ঘটনা এবং বিস্তারিত বুঝতে আমরা মামলার নথি পরীক্ষা করব।’

মামলায় ওপেনএআইয়ের সিইও স্যাম অল্টম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তিনি নিরাপত্তা দলের সদস্যদের আপত্তি সত্ত্বেও ২০২৪ সালের মে মাসে তাদের জিপিটি-৪০ মডেল বাজারে আনতে তাড়াহুড়ো করেছিলেন। তিনি কয়েক মাসের নিরাপত্তা পরীক্ষাকে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ করে দেন।

জিপিটি-৪০ মডেলটি আগের ভার্সনগুলোর তুলনায় আরও শক্তিশালী এবং মানুষের মতো হওয়া সত্ত্বেও ব্যবহারকারীদের প্রতি অতিরিক্ত তোষামোদকারী হওয়ায় ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। এটিকে মামলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

ওপেনএআইয়ের সবচেয়ে বড় অংশীদার মাইক্রোসফটকেও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিরাপত্তা প্রটোকলগুলো সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে জেনেও তারা পণ্যটি চালুর অনুমোদন দিয়েছে।

এ ছাড়া ওপেনএআইয়ের অজ্ঞাতনামা ২০ কর্মকর্তা ও বিনিয়োগকারীকেও মামলার আসামি করা হয়েছে।

অভিযোগে ক্ষতিপূরণ হিসেবে নির্দিষ্ট নয়, এমন অর্থ ও ওপেনএআইকে সুরক্ষার ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারির আবেদন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য মাইক্রোসফটের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউই তাৎক্ষণিক কোনো জবাব দেননি।

`);printWindow.document.close(); }) .catch(error => console.error("Error loading print page:", error)); }); });