দেশের পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই সিলেটসহ দেশের পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই লক্ষ্যে শুরু হয়েছে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি। আগামী জুনে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর পর্যায়ক্রমে রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল সিটির নির্বাচন আয়োজন করা হতে পারে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ৩৪ ধারা অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে অনুযায়ী আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গাজীপুর, ১০ অক্টোবরের মধ্যে রাজশাহী ও খুলনা, ৫ নভেম্বরের মধ্যে সিলেট এবং ১৩ নভেম্বরের মধ্যে বরিশাল সিটি করপোরেশনে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। তবে কোনো কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হলে পুনরায় ভোটগ্রহণসহ আইনগত নানা দিক বিবেচনায় নির্ধারিত সময়ের কমপক্ষে দুই মাস আগে নির্বাচনের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চায় ইসি।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি। প্রাথমিকভাবে ভোটকেন্দ্রের তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায় জুন-জুলাইয়ের মধ্যেই হয়তো দুই ধাপে সিটি নির্বাচন সম্পন্ন করা হতে পারে। রোজার মধ্যেই হয়তো কমিশন সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
এদিকে পাঁচ সিটির নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের আগ্রহ ততই বাড়ছে। তবে জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগে এসব সিটি করপোরেশনের প্রার্থী মনোনয়নে তেমন কোনো চমকের সম্ভাবনা নেই।
২০১৮ সালের প্রার্থীদের মধ্যে বদরউদ্দীন আহমদ কামরান মারা যাওয়ায় সিলেটে এবার নতুন মুখ আসছে। এছাড়া বাকি চার সিটিতেই আগের প্রার্থীরাই দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি এসব নির্বাচনেও প্রার্থী দেবে না। ফলে পাঁচ মহানগরে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে সিটি নির্বাচন নিয়ে কোনো তৎপরতা নেই। তবে নির্বাচন সামনে রেখে মাঠে তৎপর রয়েছেন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বিভিন্ন দিবসে পোস্টার, ব্যানার আর ফেস্টুনে সিটির জনগণকে সালাম-শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তারা। দলীয় এবং সামাজিক নানা অনুষ্ঠানে নিয়মিত যোগ দিচ্ছেন তারা। এ সময় অনেকেই নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা করে দোয়া ও সমর্থন চাইছেন। পাশাপাশি কেন্দ্রেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তারা। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও নীতিনির্ধারকদের দ্বারে দ্বারে ধরনা দিয়ে যাচ্ছেন। সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও মাঠে তৎপর রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে এরই মধ্যে পাঁচটি মহানগরের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় প্রার্থিতাও প্রায় চূড়ান্ত। তফসিল ঘোষণার পর সব রকম আনুষ্ঠানিতার মধ্য দিয়ে দলীয় ফোরামের অনুমোদন নিয়ে মেয়র প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, ভোটারদের কাছে যার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা আছে, তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে বিগত সময়ে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছে কিনা, তাও দেখা হবে। যদি কেউ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়ে থাকে তার পরিবর্তে মেয়র পদে নতুন একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
সিলেট সিটিতে ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক মেয়র বদরউদ্দীন আহমেদ কামরান। ওই নির্বাচনে তিনি বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হেরে যান। তিনি ২০২০ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ফলে আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের নতুন প্রার্থী হবেন।
এছাড়া রাজশাহীতে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, খুলনায় তালুকদার আব্দুল খালেক এবং বরিশালে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এবারও দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন। তিনজনই নির্বাচিত মেয়র হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন।
সিলেটে নৌকার প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান?
২০১৮ সালের ৩০ জুলাই সিলেট সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ওই বছরের ৭ নভেম্বর। সেই হিসেবে পরবর্তী নির্বাচনের ক্ষণ-গণনা শুরু হচ্ছে আগামী ১৪ মে। আর ১৩ নভেম্বরের মধ্যে এই সিটির নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
সিলেটে বদরউদ্দীন আহমেদ কামরানের জীবদ্দশায় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা প্রার্থী হতে চাইলেও দলের মনোনয়ন পাননি। কামরানের মৃত্যুর পর থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে আওয়ামী লীগের অন্তত আটজন নেতার বিলবোর্ড, পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে নগর। এখন পর্যন্ত মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এ টি এম হাসান জেবুল ও আজাদুর রহমান আজাদ, মহানগর সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী এবং বাফুফের কার্যনির্বাহী সদস্য ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম।
তাদের মধ্যে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের গ্রিন সিগন্যাল নিয়ে প্রায় দেড় মাস ধরে তিনি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই সিলেট-২ আসনে প্রার্থী হতে তৎপর থাকলেও দলীয় মনোনয়ন পাননি। তারপরও তিনি বসে থাকেননি। জাতীয় সংসদ থেকে স্থানীয় সরকার- সব নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর হয়ে কাজ করতে ছুটে এসেছেন দেশে।
মেয়র নির্বাচন সামনে রেখে সিলেটে আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাকর্মী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে একাট্টা বলেও জানা গেছে। এ কারণে অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হালে পানি পাচ্ছে না।

