মনজু বিজয় চৌধুরী: মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব পেয়ে অফিসে রীতিমতো ঘুষের হাঁট বসিয়েছেন মীর আব্দুল্লাহ আল মামুন। সাম্প্রতিক সময়ে তার বিরুদ্ধে বদলি বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষা কর্মকর্তা মীর আব্দুল্লাহ আল মামুন নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা করেন না। ঘুষ ছাড়া কোনো কাগজেই স্বাক্ষর করেন না। ঘুষ হিসেবে তিনি ফ্লেক্সিলোড ও ইন্টারনেটের এমবিও নেন বলে প্রমাণ মিলেছে।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে নারী শিক্ষকদের যৌন হয়রানীরও অভিযোগ আছে। চাকরি হারানোর ভয়ে এতদিন কেউ প্রতিবাদ না করলেও সম্প্রতি কয়েকজন শিক্ষক এই প্রতিবেদকের কাছে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। নানা অনিয়ম-দুর্নীতির পরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তার খুঁটির জোর নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
অনুসন্ধানে ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মীর আব্দুল্লাহ আল মামুন ২০১৯ সালে উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে বড়লেখায় যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই নারী শিক্ষকদের প্রতি তার কু-দৃষ্টি পড়ে। ওই বছরের ২৮ অক্টোবর তিনি এক নারী শিক্ষককে কু-প্রস্তাব দেন। এতে অপর এক শিক্ষক এর প্রতিবাদ করেন। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মামুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো প্রতিবাদকারী ওই শিক্ষককে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।
এদিকে গত বছরের ১৬ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পান মীর আব্দুল্লাহ আল মামুন। দায়িত্ব পেয়ে যেন তিনি আরও বেপোরোয়া হয়ে উঠেন। ওই পদে টিকে থাকতে তিনি সব ব্যবস্থাই করে রেখেছেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর শিক্ষকদের বদলির ক্ষেত্রে ঘুষ বাণিজ্য ঠেকাতে অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া চালু করলেও নানা কৌশলে তিনি ঘুষ আদায় করেন। সম্প্রতি বদলির জন্য একই সময়ে দুই শিক্ষক আবেদন করলেও একজনের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে তাকে দ্রুত বদলির ব্যবস্থা করেন। আর ঘুষের টাকা না দেওয়ায় অপর এক শিক্ষকের বদলির আবেদন বাতিল করে দেন। এছাড়া সরকারি নিদের্শনা অনুযায়ী নতুন বছরে বিনামূল্যে বই বিতরণের নিয়ম থাকলেও তার দাবিকৃত ৫০০ টাকা না দেওয়ায় তিনি বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেনের বই আটকে রাখেন। পরে দাবিকৃত টাকা প্রদানের পর বই দেন বলেও কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও মেরামতের বরাদ্দকৃত টাকায় ২৫ থেকে ৫০ ভাগ পর্যন্ত ভাগ বসানোর অভিযোগ রয়েছে। তার দাবিকৃত টাকা না দিলে তিনি সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের বরাদ্দের টাকা আটকে রাখেন। এমনকি তার মুঠোফোনের ব্যালেন্স ও ইন্টারনেট এমবি ফুরিয়ে গেলে তিনি শিক্ষকদের কাছ থেকে তা নেন বলে কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন। তিনি কোনো বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে গেলে তার জন্য আগে থেকে দুপুরের খাবার তৈরি করে রাখতে হয়। কখনো হলুদ খামে ভরে টাকাও দিতে হয়। তা নাহলে তিনি সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে শিক্ষককে নানা হয়রানি করেন। এমনকি তিনি নিজে যথাসময়ে অফিসে না এলেও কোনো কারণে কোনো শিক্ষক বিদ্যালয়ে হাজির হতে একটু দেরি হলে তিনি ওই শিক্ষককে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত দেখিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়ে অর্থ আদায় করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, যে কোনো কাজে শিক্ষা অফিসে গেলে শিক্ষা কর্মকর্তা মীর আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ঘুষ দিতে হয়। তা না হলে তিনি কোনো কাজই করেন না। ছুটির জন্য তাকে ঘুষ দিতে হয়। মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে বিদ্যালয়ে যোগদানের জন্যও তাকে ঘুষ দিতে হয়। বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত টাকার ভাগ তাকে না দিলে তিনি শিক্ষকদের হয়রানি করেন। চাকরি হারানোর ভয়ে ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে মুখ খুলেন না।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মীর আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে মিটিংয়ে আছেন বলে ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন রেখে দেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ সোমবার দুপুরে বলেন, এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্তপূর্বক তিনি প্রয়োজনীয় নেওয়া হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শামসুর রহমান বলেন, এসব বিষয়ে কোনো শিক্ষক আমাদের কাছে কিছু জানাননি। তবে আপনি যেহেতু জানিয়েছেন আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো।

