মনজু বিজয় চৌধুরী: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বন আইন উপেক্ষা করে অবৈধভাবে দোকান কোঠা নির্মান করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে অবৈধভাবে নির্মান করা এসব দোকান বিতরনে করা হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম।
২০১৯ ও ২০২০ সালে লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনের মধ্যে, বন বিভাগ ও লাউয়াছড়া সহ-ব্যবস্হাপনা কমিটি (সিএমসি) বন আইন উপেক্ষা করে অবৈধভাবে দোকান কোঠা নির্মান করে। নির্মান করা এসব দোকান কোঠা বিতরনেও করা হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম, অভিযোগ উঠেছে স্বজন প্রীতি ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে দোকান কোঠা বিতরন করা হয়েছে। সম্প্রতি লাউয়াছড়া উদ্যানের নারী কমিউনিটি পেট্রোলিং গ্রুপ ( সিপিজি) সদস্যের বরাদ্দকৃত দোকান কোঠা সিএমসি অবৈধ ভাবে অন্য একজনকে প্রদান করেছেন, লোকমুখে গুঞ্জন উঠেছে লাউয়াছড়া সহ-ব্যবস্হপনা কমিটি অর্থের বিনিময়ে দোকান কোঠা মোঃ ডালিম নামের একজনকে প্রদান করেছেন যিনি এই এলাকার স্থানীয় ব্যক্তি নয়, যা নিয়ে স্হানীয় জনসাধারণ সহ নারী সিপিজিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হতাশ হয়ে কয়েকজন নারী সিপিজি অভিযোগ করে বলেন, আমরা ১৬ জন নারী সিপিজিকে বিকল্প জীবিকায়ন হিসেবে সিএমসি ও প্রজেক্ট দোকান ঘরটি প্রদান করেছিলো, কিন্তু সিএমসি হঠাৎ করে মিটিংয়ে রেজুলেশন ছাড়াই আমাদের দোকান ঘরটি অন্য একজনকে প্রদান করেছেন, যা আমাদেরকে কোনভাবে অবগত করা হয়নি। উল্লেখ্য যে, সিএমসি কমিটি প্রায় ৪ বছর আগেই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে।
স্হানীয় কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও সিএমসির যোগসাজশে , অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে দোকান কোঠা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা সিএমসির রেজুলেশনে উল্লেখ নেই। এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতির সংরক্ষণ বিভাগ শ্রীমঙ্গল এর রেঞ্জ কর্মকর্তা ও লাউয়াছড়া সহ-ব্যবস্হাপনা কমিটির সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম, সংরক্ষিত বনে বেআইনি ভাবে দোকান ঘর নির্মান করার কথা স্বীকার করে বলেন, লাউয়াছড়ার দোকানগুলো উনার সময়ে নির্মাণ করা হয়নি। বর্তমান বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী বনের ভিতর থেকে দুটি দোকান ভেঙ্গে বাহিরে নিয়ে আসেন এবং নতুন ভাবে ৯টি দোকান ঘর নির্মান করেন, সেগুলো সিএমসির মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মহিলা সিপিজির দোকান অবৈধ ভাবে অন্য একজনকে বরাদ্দের বিষয়ে তিনি জানান, লাউয়াছড়া সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোসাদ্দেক আহমেদ মানিক ও সহ-সভাপতি মোঃ সিদ্দিক আলীর সিদ্ধান্তে প্রদান করা হয়েছে। তবে সিএমসির রেজুলেশনে দোকান ঘর বরাদ্দের বিষয়টি উল্লেখ না থাকার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। যদিও রেজুলেশনে উল্লেখ ছাড়াই দোকান ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অবৈধভাবে দোকান বরাদ্দের বিষয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতির সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, খবর পেয়েছি, এ নিয়ে সিএমসি কমিটির সভাপতির সাথে কথা বলবো। এ বিষয়ে লাউয়াছড়া সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ সিদ্দিক আলীর সাথে কথা বললে তিনি কোন মন্তব্য করেন নি। আরো জানতে মৌলভীবাজার (৪), শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ আসনের মাননীয় সাংসদ আলহাজ্ব উপাধ্যক্ষ ড. মোঃ আব্দুস শহিদ (এমপি) ছোট ভাই ও লাউয়াছড়া সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোসাদ্দেক আহমেদ মানিক এর সাথে ফোনে আলাপকালে বলেন, “বিধান মেনে ও রেজুলেশন করেই আমরা দোকান বরাদ্দ করেছি। তিনি আরো জানান, অনেকেই আবেদন করেছেন দোকান পাওয়ার জন্য, তাদেরকেও পরবর্তীতে প্রদান করা হবে। দোকান ঘর থেকে বঞ্চিত হওয়া একজন বলেন পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মূল শর্তই হলো স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করা যা দোকান বরাদ্দের ক্ষেত্রে মানা হয়নি,বরং করা হয়েছে তার বিপরীত। তবে স্হানীয় পরিবেশবাদীরা লাউয়াছড়া বনে দোকান ঘর তৈরির বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে বলেন এসব দোকানের কারনে বন ও বন্য প্রাণীর ক্ষতি হচ্ছে ধ্বংস হচ্ছে ইকো-ট্যুরিজম। পরিবেশবাদীরা বন ও বন্য প্রাণীর স্বার্থে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতর দোকান ঘর না রাখার দাবি জানান।

