মনজু বিজয় চৌধুরী॥  স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতির আকাক্সক্ষার মধ্য দিয়ে যে আন্দোলন ও সংগ্রামগুলো রূপ নিয়েছিল সেগুলোকে নিরব প্রতীকী অভিব্যক্তিতে স্মরণ ও প্রকাশ করার জন্য মৌলভীবাজার পুলিশ লাইনে স্থাপন করা হচ্ছে টেরাকোটায় মুক্তিযুদ্ধ।
একটি টেরাকোটার ফ্রেমে তুলে ধরা হয়েছে মহান স্বাধীনতার দৃশ্যপট। আছে পরাধীনতার শেকল থেকে বাঙালির মুক্তির স্বাদ। প্রতিফলিত হচ্ছে স্বপ্ন, বেদনা ও গৌরব। জাগ্রত করছে চেতনাবোধ। টেরাকোটা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয়দের ভূমিকাও এ টেরাকোটায় স্থান পেয়েছে। এটা উদ্বোধনের অপেক্ষায়। পুলিশ প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন (আইজিপি) এটা উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নির্মিত টেরাকোটার দৈর্ঘ্য ৬০ ফুট ও প্রস্থ ৫ ফুট। কোনোটা বড় আকারের মুখোশ, কোনোটা নারীর গড়ন। মধ্যখানে বড় পরিসরে নির্মিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তেজদীপ্ত তর্জনী।
এছাড়া, বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে যোদ্ধারা। এক প্রান্তে ৮ ডিসেম্বর ৭১ এর শীতের সকালে একটি নতুন উদীয়মান সূর্যের উন্মোচন করতে সকালের কুয়াশা উঠেছিল। দীর্ঘ প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, আন্দোলন এবং স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত নয় মাসের লড়াইয়ে মৌলভীবাজার হানাদার মুক্ত দিবসে বিজয় উল্লাসের স্মৃতিপট।
শিল্পীর শৈল্পিক ছোঁয়ায় টেরাকোটার ফ্রেমে নির্মাণশৈলীর দিক দিয়ে স্থাপনাটি এক অনন্য নিদর্শন। এছাড়াও টেরাকোটার ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনসহ পরবর্তী ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান। ’৭০ এর নির্বাচন। মহান মুক্তিযুদ্ধে চা বাগানে গণহত্যা। অদম্য সাহসী যোদ্ধা সর্বকনিষ্ঠ বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি শহীদ হামিদুর রহমানের অসীম সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধের কাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের সময় পুলিশ সদস্যরা যে জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন আমাদের স্বাধীনতার প্রথম দিকে রাজারবাগ থেকে শুরু মহাকাব্যগুলি এই স্মরণীয় টেরাকোটার কাঠামোতে অনুরণিত হয়েছে।
শিল্পী আহসান আহমেদ টেরাকোটার কাজটি করছেন। অসাধারণ কাজের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে বাংলাদেশের বিবর্তন ও পরিবর্তনের ঐতিহাসিক মুহূর্তগুলো।
সরেজমিন পুলিশ লাইনে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকের উত্তর দিকে সবুজ ও সতেজতায় ল্যান্ডস্কেপে কংক্রিটের সেটে লম্বাকৃতির একটি সংমিশ্রণ, পোড়ামাটির ম্যুরাল এবং কংক্রিটের গ্রাফিক্যাল ভাস্কর্যে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রনায়ক ও সর্বস্বত্যাগী সংগ্রামী মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের তেজোদীপ্ত ভাষণের কারুকার্য, স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ দেশমাতৃকার বীর সন্তানদের মুক্তিযুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের সময়ের সুচারু অবয়ব। এতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রাইফেল হাতে বীর মুক্তিযোদ্ধার নজরকাড়া বিপ্লবী ভঙ্গিমা। এদিকে, পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় স্থাপন করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু কর্ণার। বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ ছবি এবং প্রকাশনা এখানে স্থান পাবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদর্শন কুমার রায় বলেন, পুলিশ সদস্যরা যাতে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারে এজন্য জেলা পুলিশ এ উদ্যোগ নিয়েছে। মৌলভীবাজার-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে স্থাপন করা হয়েছে যাতে পথচারীরাও দেখতে পারেন। টেরাকোটা সবার জন্য উন্মুক্ত। দেশ-বিদেশ থেকে আসা পর্যটকরাও গাড়ি থামিয়ে দেখতে পারবেন। বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এটা দেখে অনেক কিছু জানতে পারবে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *