ডায়াল সিলেট ডেস্ক :  মৌলভীবাজারে চা শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে চা শ্রমিক অধিকার দিবস পালন, লাল পতাকা মিছিল এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত।
ঐতিহাসিক মুল্লুক চলো আন্দোলনের ১০২ তম বর্ষে ২০ মে-কে ‘চা শ্রমিক অধিকার দিবস’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় ঘোষণার এবং চা-শ্রমিকদের সবেতন ছুটি, দৈনিক মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণ, ২০২১-২২ সালের এরিয়ার সম্পূর্নরুপে পরিশোধ সহ ৭ দফা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন, কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে অদ্য রবিবার মৌলভীবাজার জেলা সদর লাল পতাকা মিছিল এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শহরের এম সাইফুর রহমান অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন, কেন্দ্রীয় কমিটি এই কর্মসূচির আয়োজন করে। দুপুর ১২ টায় কর্মসূচি উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল -বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়কারী জননেতা বজলুর রশিদ ফিরোজ। উদ্বোধনের পরে একটি লাল পতাকার মিছিল শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিন করে। পরবর্তীতে সংগঠনের সভাপতি বিপ্লব মাদ্রাজি পাশীর সভাপতিত্বে এবং দীপংকর ঘোষ এবং কীরণ বৈদ্যের যৌথ সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব বুলবুল, পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে অবস্থিত নর্থ বেঙ্গল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক অজিত রায়, অল ইন্ডিয়া সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ ট্রেড ইউনিয়নের অন্যতম জাতীয় সভাপতি নবেন্দু দাশগুপ্ত, একই সংগঠনের অন্যতম জাতীয় সম্পাদক এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক, তরাই সংগ্রামি চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বাসুদেব বসু, শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সহ সম্পাদক জনার্দন দত্ত নান্টু, বাসদ মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয়ক মঈনুর রহমান মগনু, সিলেট জেলা বাসদ আহবায়ক আবু জাফর, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ফ্লোরা বাবলি তালাং, বৃহত্তর সিলেট ত্রিপুরা উন্নয়ন পরিষদ সভাপতি জনক দেববর্মা, যুব ইউনিয়ন জেলা শাখার যুগ্ম আহবায়ক জাভেদ ভুইঁয়া, চা শ্রমিক নেতা কাজল রায়, আকুল বুনার্জী, রাজিব আলী, গোপিনাথ সাধু, অমৃত তেলী, অমিত রুদ্রপাল, প্রেম কুমার পাল প্রমুখ।
সভায় চা শ্রমিক প্রতিনিধিরা বলেন, ১৭০ টাকা মজুরিতে বর্তমান বাজারে সংসার চালানো অসম্ভব। মালিকরা আমাদের বকেয়া মজুরি থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র করছে। নেতারা দালালি করছে।
সমাবেশে ভারতের শ্রমিক নেতারা বলেন, ভারতের চা শ্রমিকরা একই রকম শোষনের শিকার। চা বাগানের জমিতে ইকো টুরিজম প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে, শ্রমিকদের ভূমি অধিকার বঞ্চিত করে। একই পুঁজিবাদী শাসন শোষণের শিকার উভয় দেশের শ্রমিকরা।
বক্তারা আরও বলেন,  চা-শ্রমিকসহ শ্রমজীবী মানুষের উন্নতি ছাড়া এসডিজি কিংবা মধ্য আয়ের দেশ গ্রহণযোগ্য হবে না। আর শ্রমিকদের সঙ্গে অন্যায্য পদক্ষেপ বেশি দিন চলবে না। এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে বলে জানান বক্তারা।
আগামী দিনে চা শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃত্বে ৭ দফা দাবি আদায়ে আপোষহীন ধারায় ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
৭ দফা দাবিগুলো হলো: মজুরি বোর্ড ও মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করে মানসম্মত জীবনযাপনের জন্য কমপক্ষে ৬০০ টাকা মজুরি ঘোষণা এবং বর্তমান এরিয়ারের সম্পূর্ণ মজুরি পরিশোধ; চা-শ্রমিকদের ভূমির অধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা এবং চা-বাগানের জমি ইকোনোমিক জোনসহ অন্য কোনও প্রজেক্টে ব্যবহার না করা; পর্যাপ্ত স্কুল-হাসপাতাল তৈরি করে শিক্ষা-চিকিৎসার ব্যবস্থা করা; বৃদ্ধ বয়সে চলার উপযোগী পেনশনের ব্যবস্থা এবং শ্রম আইনের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা; চা যুবগোষ্ঠীর জন্য কাজের ব্যবস্থা করা; সবেতন ছুটি ঘোষণা করা; ২০ মে-কে চা শ্রমিক অধিকার দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া ইত্যাদি।
0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *