মনজু চৌধুরী ঃ পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে সারা দেশের ন্যায় মৌলভীবাজারেও চলছে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ভর্তুকিমূল্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের টিসিবির পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম ‘ফ্যামেলি কার্ড’ কর্মসূচী। ইতিমধ্যে প্রথম পর্যায়ে জেলার ৭২ হাজার ৪২৬ পরিবার পেয়েছেন টিসিবি’র পণ্যে। এদিকে গত ৭ এপ্রিল জেলার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়ন পরিষদে দ্বিতীয় পর্যায়ের টিসিবির পণ্য বিক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। আগামী রোববার থেকে জেলার সবক’টি উপজেলায় দ্বিতীয় পর্যায়ের টিসিবি’র পণ্যে বিক্রি শুরু হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ২০ মার্চ সারা দেশে একযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক কোটি নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে টিসিবির পণ্য বিক্রয়ের উদ্বোধন করেন। এরপর মৌলভীবাজার জেলার ৭ উপজেলার ৬৭টি ইউনিয়নে মোট ১৭ লাখ ৭৪ হাজার ২১৯ জনের মধ্যে ২ লাখ ৬৮ হাজার ২০৯ জন দরিদ্র জনসংখ্যার মধ্যে থেকে মোট ২৯ হাজার ১৪০ জন উপকারভোগী টিসিবির পণ্য ক্রয় করেন। এছাড়া করোনাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নগদ অর্থ সহায়তা প্রদানের জন্য প্রণীত ডাটাবেজ থেকে প্রস্তুতকৃত তালিকা থেকে ৩৪ হাজার ৮৮৭ জন এবং জেলার ৫টি পৌরসভায় মোট ৮ হাজার ৩৯৯ জন উপকারভোগী এই পণ্য ক্রয় করেন। ‘ফ্যামিলি কার্ড’ কর্মসূচির মাধ্যমে জেলায় ৭২ হাজার ৪২৬ জন উপকারভোগীদের মাঝে ভর্তুকিমূল্যে এ পণ্য বিক্রয় করা হচ্ছে। প্রতিদিন জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সিবাজারে টিসিবি পণ্যের প্যাকেট প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই পণ্যের প্যাকেট সঠিকভাবে তৈরি করা হচ্ছে কিনা, পণ্যের ওজন ঠিক আছে কিনা এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একজন এডিসিসহ ৫-৬জন কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ১৩৫ জন শ্রমিক দিয়ে প্যাকেট তৈরি করে সেগুলো ডিলারদের গাড়িতে তুলে দেয়া হচ্ছে।
১ম পর্যায়ে জেলার বড়লেখায় ১০ ইউনিয়নে ২ হাজার ৬৪৯ জন, জুড়ীর ৬ ইউনিয়নে ৩ হাজার ৩৫৪ জন, কমলগঞ্জে ৯ ইউনিয়নে ৪ হাজার ৯০ জন, কুলাউড়ায় ১৩ ইউনিয়নে ৩ হাজার ৯০৫ জন, মৌলভীবাজার সদরে ১২ ইউনিয়নে ৪ হাজার ১৪৭ জন, রাজনগরে ৮ ইউনিয়নে ২ হাজার ৮৭১ জন ও শ্রীমঙ্গলে ৯ ইউনিয়নে ৮ হাজার ১২৪ জন উপকারভোগী টিসিবির পণ্য ক্রয় করেন। করোনাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নগদ অর্থ সহায়তা প্রদানের জন্য প্রণীত ডাটাবেজ থেকে প্রস্তুতকৃত তালিকা থেকে বড়লেখায় ৫ হাজার ২৪৩ জন, জুড়ীতে ৩ হাজার ৬৪৫ জন, কমলগঞ্জে ৩ হাজার ৬৯২ জন, কুলাউড়ায় ৭ হাজার ৩৮৯ জন, মৌলভীবাজার সদরে ৫ হাজার ৮৫৬ জন, রাজনগরে ৩ হাজার ৫০৯ জন ও শ্রীমঙ্গলে ৫ হাজার ৫০৩ জন উপকারভোগী পণ্য ক্রয় করেন। এদিকে ৫ পৌরসভার মধ্যে মৌলভীবাজার পৌরসভায় ২ হাজার ১৯৭ জন, শ্রীমঙ্গলে ১ হাজার ৯৯৪ জন, কুলাউড়ায় ১ হাজার ৫৭০ জন, কমলগঞ্জে ১ হাজার ২৮৫ জন, বড়লেখায় ১ হাজার ৩৫৩ জন উপকারভোগী টিসিবি পণ্য ক্রয় করেন। দ্বিতীয় পর্যায়েও সেই উপকারভোগীরা টিসিবি পণ্য ক্রয় করবেন।
টিসিবির পণ্য ডিলারদের কাছে সরবরাহের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ জাহিদ আখতার বলেন, জেলায় মোট ২৯ জন টিসিবির ডিলার রয়েছেন। জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান স্যারের নির্দেশে খুবই সুষ্ঠুভাবে টিসিবির পণ্যের প্যাকেট প্রস্তুত করা হচ্ছে। টিসিবি’র প্রত্যেক ভোক্তা দুই কেজি চিনি, দুই কেজি মশুর ডাল, দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি ছোলা ক্রয় করতে পারছেন। প্রতি প্যাকেজ মূল্যে ৫৬০ টাকা। তিনি আরো বলেন, দেশের সবক’টি জেলার মধ্যে যে ৬টি জেলায় টিসিবি পণ্য বিক্রয়ে কোন ধরনের অনিয়ম ঘটেনি তারমধ্যে মৌলভীবাজার জেলা রয়েছে। সেটা আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, জেলা পর্যায়ে টিসিবির কোন কার্যালয় না থাকায় জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে টিসিবির পণ্যের প্যাকেট প্রস্তুত করে সরাসরি ডিলারদের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে। ডিলাররা ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে নির্ধারিত কার্ডধারীদের হাতে পণ্যে পৌঁছে দিচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে টিসিবি’র পণ্য বিতরণে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতিরোধে সরকার এবার প্রথমবারের মতো তালিকাভুক্ত করে নির্ধারিত কার্ডের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসন কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, ৭২ হাজার ৪২৬ উপকারভোগী পরিবারে চারজন সদস্য ধরে প্রায় আড়াই লাখ লোক এই টিসিবি পণ্যের সুবিধা পাচ্ছে এটা অনেক বড় একটি বিষয়। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে টিসিবি পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম চলমান আছে। টিসিবির পণ্যের প্যাকেট তৈরিতে ১জন এডিসিসহ ৫-৬ জন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে দুই শিফটে ১৩৫জন শ্রমিক সকাল ৯টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত কাজ করছেন।

