মনজু চৌধুরী: ‘রাতে সাহ্রি খাওয়ার আগে আমার পোয়া (ছেলে) ফোন করিয়া কইছে রাইত যারগি আম্মা সাহ্রি খাইয়া আবার ফোন দিমুনে। পরে ফোন কাটি দেয়। এর বাদে আমার সুমনের আর ফোন আইছে না।’ কথাগুলো বলে মূর্ছা যাচ্ছেন নিহত ফার্নিচার ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান সুমনের (২৮) মা রহিমা বেগম।গত সোমবার ভোর ৫টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের বাঘাউড়া গ্রামে সুমনকে ‘গুলি’ করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ঘটে। সুমন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আলিপুর গ্রামের মৃত আবু মিয়ার ছেলে।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!সুমনের পরিবার জানায়, সুমন প্রথমে ফার্নিচারের দোকানে কাজ করতেন, এরপর দোকান দেন। সুমনের সঙ্গে পাশের বাড়ির সোহেল কাজ করতেন। সোহেল দোকানে থাকা অবস্থায় সুমনের ১০ ফুট কাঠ দোকান থেকে চুরি হয়। এ ঘটনায় তাঁদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। প্রায় তিন বছর আগে সুমন সোহেলকে নবীনগরে নিয়ে কাজ দেন। একই বাড়িতে তাঁরা দুজন ভাড়া থাকতেন। এ ঘটনায় সুমনের পরিবার সোহেলকে সন্দেহ করছে। তাঁরা বলেন, সোহেলকে জিজ্ঞাসা করলে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।
সুমনের মা রহিমা বেগম জানান, ফজরের নামাজের পর ছেলের ফোনের জন্য অপেক্ষা করেন তিনি। ভোরে সোহেলের বাবা বলেন তাঁর ছেলের অবস্থা খারাপ। সঙ্গে সঙ্গে সুমনের মোবাইলে কল দিয়ে পাননি।
দিকে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সুমন নিহত হয়েছেন। মা রহিমা বেগম বলেন, ‘যারা আমার কোল খালি করেছে তাদের সঠিক বিচার চাই।’
এ বিষয়ে সোহেলের বাবা ফারুক মিয়া বলেন, ‘সোহেল ফোন করে বলে সাহ্রির সময় সুমন দরজা খুলে বাইরে যায়। পরে সুমনের চিৎকার শুনে বাইরে গিয়ে দেখে সে মারা গেছে।’
এদিকে সুমন হত্যার ঘটনায় তাঁর বড় ভাই মজিবুর রহমান মসদ্দর বাদী হয়ে সোমবার রাতে নবীনগর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে ফার্নিচারের দোকান দেন সুমন। কয়েক বছর আগে তাঁর পাশের বাড়ির সোহেলকে কাজে নেন। আগে তাঁরা একসঙ্গে কাজ করতেন। কয়েক মাস আগে সোহেল সুমনের কাছ থেকে আলাদা হয়ে নতুন দোকান করে। হত্যাকাণ্ডের আগের দিন রাতে সুমনের দোকানে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়। সুমনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।সুমনের বড় ভাই মজিবুর রহমান মসদ্দর বলেন, ‘ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার রাতে সুমনকে দাফন করা হয়। ময়নাতদন্তে সুমনের গায়ে বন্দুকের গুলি নয়, ধারালো অস্ত্রর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সুমন হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন হবে। আমরা আমাদের ভাইয়ের সঠিক বিচার দাবি করছি।’নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রশীদজানান, গুলি করে নয় ধারালো অন্ত্র দিয়ে সুমনকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার দিন সকালে প্রাথমিকভাবে চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

