গুনাহ : রিজিকে বরকত আসার জন্য আল্লাহর ওপর ঈমান ও তাকওয়া অবলম্বন অত্যন্ত জরুরি। যে বান্দা এই দুটি জিনিস অর্জন করতে পারবে না, তার রিজিকে সংকীর্ণতা নেমে আসবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আর যদি জনপদগুলোর অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও জমিন থেকে বরকতগুলো তাদের ওপর খুলে দিতাম; কিন্তু তারা অস্বীকার করল। অতঃপর তারা যা অর্জন করত, তার কারণে আমি তাদের পাকড়াও করলাম।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৯৬)
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!তা ছাড়া গুনাহ ঈমানকে ক্ষতিগস্ত করে। এবং মুমিন বান্দাদের কখনো কখনো দুনিয়াতেই গুনাহের শাস্তি ভোগ করতে হয়, ফলে তার ওপর বড় বিপদাপদ, অভাব-অনটন, অসুস্থতা ইত্যাদি চেপে বসতে পারে, যা স্বাভাবিকভাবেই তাদের রিজিকের অভাবে ফেলে দেয়। প্রিয় নবী (সা.)-এর হাদিসে এ ধরনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সৎকর্ম ছাড়া অন্য কিছু আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারে না এবং দোয়া ছাড়া অন্য কিছুতে তাকদির রদ হয় না। মানুষ তার পাপকাজের দরুন তার প্রাপ্য রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০২২)
সুদ : মানবতাকে ধ্বংস করার হাতিয়ার এই সুদ। সুদখোর সর্বাবস্থায় আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধাবস্থায় থাকে। এটি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের দৃষ্টিতে অত্যন্ত জঘন্য একটি অপরাধ। রাসুল (সা.) সুদখোর, সুদদাতা ও সুদের সাক্ষীকে অভিশাপ দিয়েছেন। এবং বলেছেন, তারা সবাই সমান অপরাধী। (মুসলিম) তিনি বিদায় হজের ভাষণে সব ধরনের সুদকে নিষিদ্ধ করেছেন। (বুখারি) পবিত্র কোরআনেও মহান আল্লাহ বিভিন্ন আয়াতে মুমিনদের সুদ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। যেমন—সুরা বাকারার ২৭৮-২৭৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমাদের যে সুদ বাকি আছে তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা ঈমানদার হও। যদি তোমরা এমন না করো তাহলে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও।’ আল্লাহ সুদের কারণে বান্দার রিজিক কমিয়ে দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সুদকে হ্রাস করেন এবং সদকাকে বর্ধিত করেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৬)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা বলেন, সুদ সম্পদের বরকত নষ্ট করে দেয়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে জাতির মধ্যে সুদ প্রসারিত হয় তারা অবশ্যই দুর্ভিক্ষে নিপতিত হয়। (মুসনাদে আহমাদ) এই দুর্ভিক্ষ অনেক ধরনেরই হতে পারে; যেমন—আগে দুর্ভিক্ষ ছিল খাবারের অভাব। আর এখন দুর্ভিক্ষ হচ্ছে নির্ভেজাল খাবারের অভাব। মানুষের কাছে টাকার নোট বাড়লেও সংসারে শান্তি নেই। শরীরে সুস্থতা নেই।
অকৃতজ্ঞতা : রিজিক কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো অকৃতজ্ঞতা। আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া না করা। আল্লাহ অকৃতজ্ঞদের পছন্দ করেন না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, তবে মনে রেখো, আমার শাস্তি বড়ই কঠোর।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৭)
আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া যেমন ইবাদতের মাধ্যমে করা হয়, তেমনি তাঁর দেওয়া নিয়ামতকে তাঁর দেওয়া বিধান মোতাবেক পরিচালনার মাধ্যমেও করা যেতে পারে। আল্লাহর নিয়ামত শুধু টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়িই নয়; বরং মানুষ নিজেই আল্লাহর নিয়ামত। দুনিয়ার বুকে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর নিয়ামত। হাজারটা জীবনেও তাঁর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা সম্ভব নয়। তবে আমাদের ব্যক্তিজীবন সাজানোর মাধ্যমে সর্বদা আল্লাহর দরবারে নত হয়ে থাকা উচিত।
মহান আল্লাহ আমাদের উপরোক্ত অভ্যাসগুলো পরিহার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

