আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু সংবাদের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার সময় থেকে রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পর্যন্ত ঘটনাগুলো আগে থেকেই ঠিকঠাক করা আছে। এ নিয়ে প্রস্তুতি এতোটাই গোছানো যে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিতে রানির মৃত্যু ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিয়ে নিয়ম করে প্রতিবছর একটা মহড়া দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার বাকিংহাম প্যালেস থেকে রানির মৃত্যুর সংবাদ ঘোষণা করা হয়েছে। এখন রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অবধি ঘটনাপ্রবাহগুলোর কাউন্টডাউন শুরু হবে।
ডি-ডে : বাকিংহাম প্যালেস থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে একটি ‘কল কাসকেড’ হবে, অর্থাৎ রানির ব্যক্তিগত সচিব প্রধানমন্ত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে শোক সংবাদটি জানাবেন। এরপর সংবাদটি ক্যাবিনেট সেক্রেটারি এবং প্রাইভি কাউন্সিলের অফিসে পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রাইভি কাউন্সিল মূলত রানির পক্ষে সরকারি কাজের সমন্বয় করে। এরপরই কেবল ‘সরকারি বিজ্ঞপ্তি’ দিয়ে জনসাধারণকে রানির মৃত্যুর সংবাদ জানানো হবে।
রাজকীয় বাসভবন, হোয়াইট হল এবং অন্যান্য সরকারি ভবনের পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে, রাজপরিবারের ওয়েবসাইটটি রানির মৃত্যুর সংক্ষিপ্ত বিবৃতিসহ একটি কালো পৃষ্ঠায় পরিবর্তিত হবে। সরকারি ওয়েবসাইটগুলোতেও কালো ব্যানার যুক্ত করা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রথম প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে বিবৃতি দেবেন।
রীতি অনুযায়ী বাকিংহাম প্যালেসে রেলিংয়ে মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা সম্বলিত বিবৃতি ঝোলানো হবে। আর এ সময় ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে এবং সেন্ট পলস ক্যাথেড্রালে দুপুরে ঘণ্টা বাজবে।
হাইড পার্ক এবং টাওয়ার হিলে বন্দুকের গুলি ছুড়ে স্যালুট জানানো হবে এবং জাতীয়ভাবে নীরবতা পালন করা হবে।
রাজা চার্লস প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথম দর্শনার্থীদের সামনে আসবেন। মৃত্যুর পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে। পূর্ণ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পরিকল্পনায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্তির জন্য আর্ল মার্শালের (বংশানুক্রমে রাজকীয় শীর্ষ কর্মকর্তা) সঙ্গে দেখা করবেন।
ডি-ডে-এর পরের দিন : অ্যাক্সিশন কাউন্সিল বা অভিষেক পরিষদ, যেটিতে রয়েছেন সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং প্রাইভি কাউন্সেলররা—তাঁরা সকাল ১০টায় সেন্ট জেমস প্রাসাদে মিলিত হবেন। এখানে নতুন রাজার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হবে। এই ঘোষণা সেন্ট জেমস প্যালেসের বারান্দা থেকে জনসমক্ষে পাঠ করা হবে। লন্ডন শহরের রয়্যাল এক্সচেঞ্জে আরও একটি ঘোষণা পাঠ করা হবে। বিকেলে নতুন রাজা প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদ, বিরোধী দলের নেতা, ক্যান্টারবারির আর্চবিশপ এবং ওয়েস্টমিনস্টারের ডিনের সঙ্গে অন্য দর্শনার্থীরা থাকবেন। সংসদে শ্রদ্ধা জানানো হবে। অভিষেক পরিষদের জন্য পতাকা পূর্ণ উত্তলিত থাকবে। ২৪ ঘণ্টার পতাকা এভাবে থাকবে। এরপর আবার অর্ধনমিত হবে এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পরের দিন পর্যন্ত এভাবেই থাকবে।
ডি-ডে-এর তৃতীয় দিন : রানির কফিন বালমোরাল থেকে সড়কপথে হলিরুড হাউসের প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হবে। এডিনবার্গ, কার্ডিফ এবং বেলফাস্টে স্বনিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে মধ্যাহ্নে একযোগে নতুন রাজার নাম ঘোষণা করা হবে। সংসদে শ্রদ্ধাঞ্জলি অব্যাহত থাকবে।
ডি-ডে-এর চতুর্থ দিন : রয়্যাল মাইল বরাবর হলিরুড থেকে সেন্ট জাইলস ক্যাথেড্রাল পর্যন্ত রাজপরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণে একটি আনুষ্ঠানিক শোকযাত্রা হবে। সেই অনুষ্ঠানের পরে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সেন্ট জাইলস ক্যাথেড্রাল উন্মুক্ত করা হবে। আর রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা জানানো হবে লন্ডনে। লন্ডন ব্রিজ সমতটের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে রাজা চার্লস ওয়েস্টমিনস্টার প্রাসাদে যাবেন। সেখানে তাঁকে সমবেদনা জানানো হবে। এরপর এডিনবার্গে যাওয়ার কথা রয়েছে। রাজা হিসেবে তাঁর প্রথম কর্ম—চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হলিরুডহাউসের প্রাসাদে যাবেন। এরপর সেন্ট জাইলস ক্যাথেড্রালে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার তাঁর প্রথম দর্শন পাবেন। স্কটিশ পার্লামেন্টে শোক প্রস্তাব আনা হবে।
ডি-ডে-এর পঞ্চম দিন : সন্ধ্যার পর রানির কফিন এডিনবার্গ ওয়েভারলি স্টেশনে স্থানান্তরিত হবে। সেখান থেকে রাতেই রাজকীয় ট্রেনে পরের দিন সকালে লন্ডনের সেন্ট প্যানক্রাস স্টেশনে পৌঁছানোর কথা। রাজা চার্লস উত্তর আয়ারল্যান্ডে যাবেন, সেখানে হিলসবরো ক্যাসেলে তাঁকে সমবেদনা জানানো হবে। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্য প্রার্থনার জন্য বেলফাস্টের সেন্ট অ্যান’স ক্যাথেড্রালে যোগ দেবেন চার্লস। বাকিংহাম প্যালেস থেকে ওয়েস্টমিনস্টার হল পর্যন্ত রানির কফিনবাহী একটি শোকযাত্রা হবে।
ডি-ডে-এর ষষ্ঠ দিন : সেদিন লন্ডনে আনুষ্ঠানিকতার কয়েক ঘণ্টা আগে কফিনটি বাকিংহাম প্যালেসে পৌঁছাবে। শবযাত্রার আগে প্রথম বড় আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে রয়েছে—রানির কফিন বাকিংহাম প্যালেস থেকে ওয়েস্টমিনস্টার হলে নেওয়া। সেখানে পাঁচ দিন রাখা হবে। রানির কফিনের আগমন উপলক্ষে একটি সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধার সময় সাধারণ জনগণও রানিকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাবেন। কফিনটি ওয়েস্টমিনস্টার হলের মাঝখানে একটি সুসজ্জিত শবমঞ্চে রাখা হবে। দৈনিক ২৩ ঘণ্টা জনসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
ডি-ডে-এর সপ্তম দিন : রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অব্যাহত থাকবে।
ডি-ডে-এর অষ্টম দিন : রাজা চার্লস কার্ডিফের লাল্যান্ডফ ক্যাথেড্রালে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ওয়েলসে যাবেন। এরপর ওয়েলশ সেনেডে (পার্লামেন্ট) যাবেন এবং সদস্যদের সমবেদনা গ্রহণ করবেন। প্রথমে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ওয়েলশের ফার্স্ট মিনিস্টার। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর প্রতিনিধিরা লন্ডনে আসতে শুরু করবেন।
ডি-ডে-এর নবম দিন : রাজা চার্লস বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা গভর্নর জেনারেল এবং প্রধানমন্ত্রীদের অভ্যর্থনা জানাবেন।
ডি-ডে-এর দশম দিন : শবযাত্রার প্রাক্কালে চার্লস বিদেশি রাজপরিবারের সদস্যদের স্বাগত জানাবেন। ভিআইপি বিদেশি অতিথিরা রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধানুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
ডি-ডে-এর একাদশ দিন : ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রাষ্ট্রীয় শবযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। ওয়েস্টমিনস্টার হল থেকে শবযাত্রা অ্যাবেতে নেওয়া হবে। সারা দেশে দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। এক ঘণ্টার একটি আনুষ্ঠানিকতার পর বড় পরিসরে আনুষ্ঠানিক শবযাত্রা হাইড পার্কে যাবে। সেখানে কফিনটি সাঁজোয়া গাড়ি থেকে রাষ্ট্রীয় শবযানে স্থানান্তরিত হবে এবং কফিনটি উইন্ডসরে নেওয়া হবে। উইন্ডসরে শবযাত্রার পর উইন্ডসর ক্যাসেলের সেন্ট জর্জ চ্যাপেলে শেষ বিদায় জানানোর পর রাজকীয় ভল্টে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে সমাধিস্ত করা হবে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *